টেকনাফের শামলাপুরে গিয়েছিলাম গত ১০ ফেব্রুয়ারি। আগের রাতে ওই এলাকার পুরো সৈকতে রাতভর সামুদ্রিক কাছিমের খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছেন আমাদের সহযোগীরা। একটি কাছিম সৈকতে উঠে ১০১টি ডিম পেড়ে আবার চলেও গেছে; কিন্তু কেউই তা আঁচ পারেননি। ভেবেছিলাম, সকালে গিয়ে ডিম পাড়তে আসা কাছিমের শরীরে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে দেব। তা আর হলো না। দুপুরে হঠাৎ খবর এল মাছের একটি জালে ৩৪টি কাছিম আটকা পড়েছে। আমাদের না জানিয়ে জেলেরা সব কটি কাছিম ছেড়েও দিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক পরে আরেকটি জালে আটকা পড়ল দুটি কাছিম। দ্রুতই দলবল নিয়ে হাজির হলাম। নিরাপদে কাছিমগুলোকে আনা হলো হ্যাচারিতে।

টেকনাফের শামলাপুরে সৈকতজুড়ে কাছিমের পাঁচটি হ্যাচারি আছে। প্রাকৃতিকভাবে যেসব কাছিম সৈকতে ডিম পাড়ে, সেই ডিমগুলো সংগ্রহ করে এই হ্যাচারিতে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন সামুদ্রিক কাছিমে ভরপুর প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে প্রতিবছরই ওই এলাকায় যাই কাছিম গবেষণার কাজে। এবারও গেলাম মহাগুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণায় অংশ নিতে। সৈকতে ডিম পাড়তে আসা কাছিমের গায়ে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে তার গতিবিধি জানা আমাদের উদ্দেশ্য। কাজটি জার্মান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সহযোগিতায় আইইউসিএনের গবেষক দল করছে।

কাছিম দুটির শরীরে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসাতে আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগল। সন্ধ্যাবেলায় সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো সাগরে। মনের আনন্দে তারা ফিরে গেল নিজেদের বিচরণ এলাকায়। আমাদের আরও দুটি কাছিমের ওপর কাজ করতে হবে। পরদিন আবারও কাছিমের আশায় বসে রইলাম। রাতে কোনো কাছিম পেলাম না। সকালে জেলেদের জালের কাছে গিয়ে একসঙ্গে তিনটি কাছিম পেলাম। বড় দুটি রেখে অন্যটি সাগরে ছেড়ে দিলাম। 

কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন ও সোনাদিয়া মিলে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের ওপর আমাদের সৈকত আছে। পুরোটাই সাগরের কাছিমের ডিম পাড়ার জন্য উপযোগী; কিন্তু পুরো সৈকত এলাকায় এক কিলোমিটার জায়গাও নেই যে সেখানটা জালমুক্ত। আর মানুষের পদচারণ তো সবখানেই, আছে কুকুরের আনাগোনাও বেশ।

কাছিমের এই প্রজনন মৌসুমে শত শত কাছিম সারি ধরে অপেক্ষায় আছে কখন তারা একখণ্ড জনমানবহীন সৈকত পাবে। কখন মাছ ধরার জালগুলো উঠে যাবে। সেই সময় আর পাচ্ছে না কাছিমগুলো। এদিকে তাদের ডিম পাড়ার মৌসুমও শেষ হওয়ার পথে। ভয়াবহ এই বাস্তবতায় অনেকটা সংশয় নিয়েই যখন তারা সৈকতে উঠতে যাচ্ছে, আর তখনই জালে আটকা পড়ছে। আটকা পড়া কাছিমগুলো আর ফেরত না গিয়ে আবারও অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হচ্ছে না!

জালে আটকা পড়া কাছিম উদ্ধার করছেন কোডেকের কর্মীরা। পরে কাছিমটি নিরাপদে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফের সৈকতে সারিবদ্ধ কাছিমের অপেক্ষা 

টেকনাফের শামলাপুরে গিয়েছিলাম গত ১০ ফেব্রুয়ারি। আগের রাতে ওই এলাকার পুরো সৈকতে রাতভর সামুদ্রিক কাছিমের খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছেন আমাদের সহযোগীরা। একটি কাছিম সৈকতে উঠে ১০১টি ডিম পেড়ে আবার চলেও গেছে; কিন্তু কেউই তা আঁচ পারেননি। ভেবেছিলাম, সকালে গিয়ে ডিম পাড়তে আসা কাছিমের শরীরে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে দেব। তা আর হলো না। দুপুরে হঠাৎ খবর এল মাছের একটি জালে ৩৪টি কাছিম আটকা পড়েছে। আমাদের না জানিয়ে জেলেরা সব কটি কাছিম ছেড়েও দিয়েছেন। ঘণ্টাখানেক পরে আরেকটি জালে আটকা পড়ল দুটি কাছিম। দ্রুতই দলবল নিয়ে হাজির হলাম। নিরাপদে কাছিমগুলোকে আনা হলো হ্যাচারিতে।

টেকনাফের শামলাপুরে সৈকতজুড়ে কাছিমের পাঁচটি হ্যাচারি আছে। প্রাকৃতিকভাবে যেসব কাছিম সৈকতে ডিম পাড়ে, সেই ডিমগুলো সংগ্রহ করে এই হ্যাচারিতে বাচ্চা ফুটিয়ে আবার সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন সামুদ্রিক কাছিমে ভরপুর প্রজনন মৌসুম। এ মৌসুমে প্রতিবছরই ওই এলাকায় যাই কাছিম গবেষণার কাজে। এবারও গেলাম মহাগুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণায় অংশ নিতে। সৈকতে ডিম পাড়তে আসা কাছিমের গায়ে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসিয়ে তার গতিবিধি জানা আমাদের উদ্দেশ্য। কাজটি জার্মান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের সহযোগিতায় আইইউসিএনের গবেষক দল করছে।

কাছিম দুটির শরীরে স্যাটেলাইট যন্ত্র বসাতে আমাদের প্রায় চার ঘণ্টা সময় লাগল। সন্ধ্যাবেলায় সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হলো সাগরে। মনের আনন্দে তারা ফিরে গেল নিজেদের বিচরণ এলাকায়। আমাদের আরও দুটি কাছিমের ওপর কাজ করতে হবে। পরদিন আবারও কাছিমের আশায় বসে রইলাম। রাতে কোনো কাছিম পেলাম না। সকালে জেলেদের জালের কাছে গিয়ে একসঙ্গে তিনটি কাছিম পেলাম। বড় দুটি রেখে অন্যটি সাগরে ছেড়ে দিলাম। 

কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন ও সোনাদিয়া মিলে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের ওপর আমাদের সৈকত আছে। পুরোটাই সাগরের কাছিমের ডিম পাড়ার জন্য উপযোগী; কিন্তু পুরো সৈকত এলাকায় এক কিলোমিটার জায়গাও নেই যে সেখানটা জালমুক্ত। আর মানুষের পদচারণ তো সবখানেই, আছে কুকুরের আনাগোনাও বেশ।

কাছিমের এই প্রজনন মৌসুমে শত শত কাছিম সারি ধরে অপেক্ষায় আছে কখন তারা একখণ্ড জনমানবহীন সৈকত পাবে। কখন মাছ ধরার জালগুলো উঠে যাবে। সেই সময় আর পাচ্ছে না কাছিমগুলো। এদিকে তাদের ডিম পাড়ার মৌসুমও শেষ হওয়ার পথে। ভয়াবহ এই বাস্তবতায় অনেকটা সংশয় নিয়েই যখন তারা সৈকতে উঠতে যাচ্ছে, আর তখনই জালে আটকা পড়ছে। আটকা পড়া কাছিমগুলো আর ফেরত না গিয়ে আবারও অপেক্ষা করছে। অপেক্ষার প্রহর যেন আর শেষ হচ্ছে না!

জালে আটকা পড়া কাছিম উদ্ধার করছেন কোডেকের কর্মীরা। পরে কাছিমটি নিরাপদে সাগরে ছেড়ে দেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ