আশুগঞ্জ ও সরাইল গোলচত্বরে খানাখন্দ, ঈদে যানজটের শঙ্কা
Published: 24th, March 2025 GMT
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস চালান আবুল হোসেন। তবে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে আসলেই তার আর গাড়ি চালাতে ইচ্ছে হয় না। এই চালক বলেন, “খানাখন্দ আর গর্তের কারণে এমন কোনো দিন নেই এখানে আসলে ৩০ মিনিটের আগে বাস নিয়ে যেতে পেরেছি।”
আবুল হোসেন এই মহাসড়কে চলাচলকারী ‘রিয়েল কোচ’ বাসের মালিকও। তিনি আরও বলেন, “সামনে ঈদ আসছে, তখন আরও বেশি জ্যাম থাকবে, সময়ও বেশি লাগবে। তাই ঈদের আগেই এ অংশের সংস্কার জরুরি।”
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার- এ অংশ জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। যে কারণে এখানে গাড়ির সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ নেমে আসে ১০ কিলোমিটারে। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় সড়ক জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। ফলে গাড়ি চলতে হয় ধীরগতিতে। এর ফলে এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি সৃষ্টি হবে বলে নিজেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে থানার ওসি।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো.
এ পথে চলাচল করা চালক-যাত্রীরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদযাত্রায় দেশের অন্য মহাসড়কের তুলনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অংশে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার ফোরলেন এবং বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে মাধবপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার অংশে ছয় লেনের নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। তার পাশাপাশি মহাসড়কের ওপর অবৈধ হাট-দোকানপাট, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ থ্রি-হুইলার অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে যানজটে পড়তে হয়।
ট্রাক চালক আলমগীর হোসেন বলেন, “সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোল চত্বরে ঢাকা-সিলেট-কুমিল্লার সব যানবাহন একত্রিত হয়ে পার হতে হয়। তিন দিকের গাড়ি এক জায়গায় একত্রিত হওয়ার ফলে এমনিতেই জ্যামের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আছে ভাঙাচোরা ও বড় বড় গর্ত।”
তিনি আরও বলেন, “আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ফোরলেন ও সরাইল বিশ্বরোড থেকে সিলেট পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ চলমান। নির্মাণ কাজের জন্য এসব সড়কে একটু পরপর বালুর গাড়িসহ বিভিন্ন মালামাল এনে রাখার ফলে জ্যামের সৃষ্টি হয়।”
এ ট্রাক চালক আরও অভিযোগ করেন, বিশ্বরোড থেকে সিলেটের পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশের খাঁটিহাতা মোড়, বাড়িউড়া, শাহাবাজপুর, চান্দুরা, বুধন্তী, আলিনগর, মাধবপুর ব্রিজের অংশ পর্যন্ত সড়কের পাশে অবৈধভাবে গাড়ি রাখার জন্য আরও বেশি জ্যামে পড়তে হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রত্যেকদিন সরাইল বাজারে ব্যবসা করতে আসা নূরুল হুদা বলেন, “বিশ্বরোড মোড়ের যানজটের ফলে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় বেশি নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়।”
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলতলা এলাকার মুন্নি স্টোর দোকানের সত্ত্বাধিকারী মমিন মিয়া বলেন, “সড়কের বেহাল অবস্থার ফলে আশুগঞ্জ থেকে দোকানের জন্য মালামাল কিনে আনতে আসা-যাওয়া খরচ তিনগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে মহাসড়কের ধুলাবালির জন্য দোকানে কেউ বসতে চায় না এজন্য চা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।”
সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. মামুন রহমান বলেন, “আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের ফলে এই স্থানে ১০০ কিলোমিটার গতিতে আসা গাড়িগুলো ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে হয়। তাই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।”
তবে ফোরলেন ও ছয় লেনের ফলে কোনো জ্যাম হবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে রাতে হাইওয়ে থানার তিনটি মোবাইল টিম কাজ করছে এবং বিশ্বরোডের জন্য ট্রাফিক পুলিশের একটি টিম কাজ করছে।”
মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, “বিশ্বরোডের পশ্চিম দিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তবে পূর্বদিকে অভিযান জরুরি।”
সদর, সরাইল হাইওয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ের টিম একত্রিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সবার ব্যস্ততার ফলে অভিযান পরিচালনায় দেরি হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি, এবারে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ ও পরিবহন চালকদের ভোগান্তি হবে না।”
খানাখন্দের সংস্কার নিয়ে আশুগঞ্জ বিশ্বরোড আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-২ মো. শামিম আহমেদ বলেন, “আমরা আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত খানাখন্দ ও গর্তের ভরাটে কাজ করেছি। বাকী কাজগুলো ঈদের আগে শেষ করে ফেলা হবে।”
ঢাকা/রুবেল/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র হ মণব ড় য় ১০ ক ল ম ট র সড়ক র ব য নজট র র জন য আরও ব হ ইওয়
এছাড়াও পড়ুন:
পুড়ে যাওয়া মার্কেটের মালিকের কাছে চাঁদা চেয়েছিলেন যুবদল নেতা, অডিও ভাইরাল
খুলনা নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে পুড়ে যাওয়া অস্থায়ী মার্কেটের মালিক রাসেল মিয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা সাগরের চাঁদা চাওয়ার একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত ১৯ মার্চ আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট পুড়ে যায়। ফোনালাপটি এর কয়েকদিন আগের। সাগর খুলনা মহানগর যুবদলের সদ্য সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক। যুবদলের ওই কমিটির সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু গত ২৩ মার্চ রাতে মুক্তিপণের দাবিতে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।
১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ফোনালাপের শুরুতে মার্কেট মালিক রাসেলকে সাগর বলেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছো না, এটা কি ঠিক হচ্ছে তোমার?’
জবাবে রাসেল বলেন, ‘ভাই, আমি আছি খুব বিপদে।’
তখন সাগর বলেন, ‘তুমি আমারে বলছো টাকা দিয়ে যাবা, তুমি পাঁচ মাসেও আমার সঙ্গে যোগাযোগই করলে না। এটা তোমার কাছে আমি প্রত্যাশা করি?’
রাসেল বলেন, ‘ভাই টাকা ইনকাম করাই এখন কঠিন হয়ে গেছে।’
উত্তরে সাগর বলেন, ‘কেন ইনকাম কঠিন হয়ে গেল কেন? তুমি আমারে প্রথমে বললা ৫০ হাজার করে দিবা পিকচার প্যালেস থেকে। সেদিন বললা না ভাই ৩০ হাজার করে দিব। একটা টাকাও দিলা না। তুমি তো মেলাটেলা করতেছো।’
মার্কেট মালিক বলেন, ‘আমি মেলা করছি না। মন্টুর মেলায় কয়েকটি স্টল দিয়েছি।’ এরপর আরও কিছু কথা হয় দু’জনের মধ্যে।
শেষে যুবদল নেতা বলেন, ‘যাই হোক তুমি আমার সঙ্গে যে কমিটমেন্ট করেছো সেটা কি রাখবা, না রাখবা না ? সেটা বললেই হয়ে যায়।’
মার্কেট মালিক বলেন, ‘এখন পিকচার প্যালেসের যে অবস্থা, আছি খুব বিপদে। দোকানদারদের বেচাকেনা কম। টাকা-পয়সা ঠিকমতো দিতে পারছে না। আমিও আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেছি না।’
ব্যবসায়ীর বক্তব্য শেষে কিছুটা সময় চুপ করে রূঢ় কণ্ঠে সাগরকে বলেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘কোনো মন্তব্য করব না।’
এ বিষয়ে রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমি শেষ হয়ে গেছি। পথে বইসে গেছি। আমারে আর শেষ কইরেন না’।
আগুনে পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের ৪৪টি দোকান পুড়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের জায়গা ভাড়া নিয়ে এক বছর আগে অস্থায়ী মার্কেট তৈরি করেন ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া। তিনি শহরে মেলা রাসেল নামে পরিচিত।