দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যেই তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত। দুর্নীতির অভিযোগে গতকাল রোববার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ইমামোগলুকে আটকের প্রতিবাদে গত শনিবার চতুর্থ রাতের মতো দেশটির বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

ইস্তাম্বুলের মেয়রকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। এ ছাড়া সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করার দ্বিতীয় অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন নাকচ করে দেন আদালত। 

গত বুধবার ইমামোগলুকে নিজ বাড়িতে আটকের পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৩ সালের পর এই বিক্ষোভকে সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে। ওই বিক্ষোভে আটজন নিহত হয়েছিলেন।

এদিকে ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানোর পর দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছে, ‘হতাশার কিছু নেই! লড়াই চালিয়ে যাও।’

এমন সময় ইস্তাম্বুলের মেয়রকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো, যখন তাঁর দল সিএইচপির প্রাইমারিতে (প্রার্থী বাছাই) ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁকে দলের প্রার্থী করতে ভোটাভুটি চলছে। দলীয় সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ভোট দিতে পারছেন।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার মতো একমাত্র রাজনীতিক হিসেবে ইমামোগলুকে বিবেচনা করা হয়। এর আগে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় মেয়র ইমামোগলুর ডিপ্লোমা ডিগ্রি বাতিল করে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়। তবে শনিবার তিনি পুলিশকে বলেছেন, এসব অভিযোগ ‘অনৈতিক ও ভিত্তিহীন’।

ইমামোগলুকে আটকের পর ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ শুরু হয়। শনিবার রাত নাগাদ তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৫৫টিতে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কে কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত

তুরস্কের বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) কারাবন্দী ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে। 

সিএইচপির একজন মুখপাত্র সোমবার এ ঘোষণা দেন। খবর: এএফপি

২০২৮ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরদোয়ান সরকারের কঠোর ধরপাকড়ের মধ্যেই ইমামোগলুকে প্রার্থী ঘোষণা করল সিএইচপি।

সিএইচপির এই সিদ্ধান্তের পরপরই দেশজুড়ে বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়েছে। এরদোয়ান প্রশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগ তুলে রাজধানী আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ দিনে ১ হাজার ১৩৩ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিকসহ ১০ জন সাংবাদিকও রয়েছেন।

রোববার দলীয় প্রাইমারিতে ভোটাভুটি আয়োজন করে সিএইচপি। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই ভোটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয় দলটি। এতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভোট দেন, যাদের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লাখের বেশি দলটির সদস্য নন। ভোটে ইমামোগলুই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতার অভিযোগে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রোববার আদালত তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদালতের এই রায়ের পর ইমামোগলুকে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে।

কারাগারে পাঠানোর আগে আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ইমামোগলু বলেন, ‘আমি একটি সাদা জামা পরেছি, যে জামায় তোমরা দাগ লাগাতে পারবে না। আমার একটি শক্তিশালী হাত রয়েছে, যা তোমরা মচকাতে পারবে না। আমি সামান্যতমও মাথা নত করব না। এই লড়াইয়ে আমি জয়ী হব।’

এদিকে ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইমামোগলুকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত।’

বিরোধীদল সিএইচপি এই গ্রেপ্তারকে ‘রাজনৈতিক ক্যু’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগপুরে সংঘর্ষ: মামলার প্রধান আসামির বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল পৌর কর্তৃপক্ষ
  • তুরস্কে কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত
  • তুরস্কে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ
  • কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত, চলছে এরদোয়ানের ধরপাকড়
  • কারাগারে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমামোগলু