সামিট পাওয়ারের মুনাফা কমল ১০৭ কোটি টাকা
Published: 24th, March 2025 GMT
দেশের শীর্ষস্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি সামিট পাওয়ারের মুনাফা কমেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটির মুনাফা কমে ২০২ কোটি টাকায় নেমেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৩০৯ কোটি টাকা। চার কারণে মুনাফা কমে গেছে বলে জানায় তারা।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট পাওয়ার গতকাল রোববার তাদের চলতি অর্থবছরের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মুনাফা কমার এই তথ্য পাওয়া গেছে। তার আগে গত শুক্রবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছয় মাসের দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। গতকাল স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে তা বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে।
সামিট পাওয়ার জানায়, গত জুলাই–ডিসেম্বর ছয় মাসে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমে হয়েছে ১ টাকা ৭ পয়সা। মুনাফা হয়েছে ২০২ কোটি টাকা। এর আগের ২০২৩ সালের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭১ পয়সা। তখন মুনাফা হয়েছিল ৩০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে সামিটের মুনাফা ১০৭ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ কমেছে।
মুনাফা কমে যাওয়ার জন্য সামিট পাওয়ার চারটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছে। কারণগুলো হচ্ছে কোম্পানিটির একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি সরকারের পক্ষ থেকে নবায়ন না করা; অপর একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আংশিক সচল থাকলেও চাহিদা না থাকায় বিক্রি নেই; বিদ্যুৎ নেই, বিলও নেই ভিত্তিতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হওয়া এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র করের আওতায় আসায় কর বাবদ খরচ বেড়েছে। এসব কারণে কোম্পানিটির আয় কমেছে। আয় কমে যাওয়ায় মুনাফায়ও সে ধাক্কা লেগেছে।
গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে না। এ কারণে সামিটসহ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ খাতের একাধিক কোম্পানির চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে গতকাল সামিটের পক্ষ থেকে আলাদা এক তথ্যে জানানো হয়েছে, কোম্পানিটির তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের চুক্তি আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে ৩৩ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার রূপগঞ্জ ও মাওনা বিদ্যুকেন্দ্র এবং ১১ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার উল্লাপাড়া বিদ্যুকেন্দ্র। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় ১ এপ্রিল থেকে এসব বিদ্যুকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
সামিটের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–ডিসেম্বরে কোম্পানিটি আয় করেছে ২ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে। তবে আয় যতটা বেড়েছে, সে তুলনায় খরচ বেশি বেড়েছে। ফলে মুনাফা কমেছে।
এদিকে মুনাফা কমার খবরে গতকাল রোববার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারেরও দরপতন ঘটেছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৮০ পয়সা বা ৫ শতাংশ কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর হাতবদল হয়েছে সোয়া কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র আর থ ক গতক ল বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ার কারসাজি: ১৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ১৯০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুইটি কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির (শেয়ার লেনদেনে আইন লঙ্ঘন) অভিযোগে ৯ ব্যক্তি ও ৯ প্রতিষ্ঠানকে মোটি ১৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
শেয়ার কারসাজি করা কোম্পানি দুটি হলো- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সময়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার যোগসাজোসের মাধ্যমে কারসাজি করে দাম বাড়ানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খুলে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন- বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হচ্ছিল। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায়ে এনেছে বিএসইসি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য রাইজিংবিডি ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
সি পার্ল বিচ রিসোর্ট: কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৯ প্রতিষ্ঠান এবং ৪ ব্যক্তিকে মোট ১৮৭ কোটি ২২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা ব্যক্তিদের মধ্যে মো. কালাম হোসেনকে ১৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্যদের মধ্যে আবু সাদাত মো. ফয়সালকে ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জামরুল হাসান মো. ইকবাল গণিকে ১ লাখ টাকা এবং মো. আবু নাঈমকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জরিমানা করা ৯ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউডিসি কনস্ট্রাকশনকে ৬৮ কোটি ১ লাখ টাকা, ভেনাস বিল্ডার্সকে ৬৯ কোটি ১ লাখ টাকা, সাতরং অ্যাগ্রো ফিশারিজকে ২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা, হৃদয় পোল্ট্রি ফার্মকে ১০ লাখ টাকা, হাসান নার্সারিকে ২ লাখ টাকা, আমানত অ্যাগ্রো ফিশারিজকে ৪০ লাখ টাকা, সাব্বির স্টোরকে ১০ লাখ টাকা, সরকার অ্যাগ্রো ফার্মকে ১ লাখ টাকা এবং মুক্তা ফিশারিজকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্তে ১ জুলাই ২০২২ থেকে ১০ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত সময়কাল অন্তর্ভুক্ত ছিল, যে সময়কালে কারসাজিকারীরা বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে। ২০২২ সালের ৩ জুলাই সি পার্লের শেয়ারের দাম ছিল ৪৩.৫০ টাকা, যা ১০ আগস্ট ২০২৩ তারিখে অস্বাভাবিক ৪০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১৭.৪০ টাকা হয়।
সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স: কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে মোট ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা করা ব্যক্তিদের মধ্যে নূরজাহান বেগমকে ১ লাখ টাকা, সাজিদুল হাসানকে ৭৫ লাখ টাকা, সায়েদুর রহমানকে ১ লাখ টাকা, ফেরদৌসি বেগমকে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও লুতফর রহমানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তদন্তে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সময়কালে কারসাজিকারীরা বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে। ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম ছিল ৬২.১০ টাকা, যা ১২ জুন তারিখে অস্বাভাবিক ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১১.৫০ টাকায় পৌঁছে যায়।
কারসাজির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
অভিযুক্তদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব থেকে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিপুল সংখ্যক শেয়ার লেনদেন করে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে তারা একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়ের জন্য প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। যার ফলে শেয়ারটির বাজার মূল্য অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন।
শেয়ার কারসাজিতে জড়িতদের বক্তব্য এবং তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। কমিশনের বিবেচনায়, সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধান পরিপালনে আলোচ্য ব্যর্থতার জন্য, পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং জনস্বার্থে আলোচ্য ব্যক্তিদের জরিমানা করা হয়। তবে অভিযুক্ত দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/এনটি/ইভা