কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১০৫ একর জমিতে গোলাপের চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে দুই শতাধিক কৃষক পরিবার। বিশেষ কিছু দিবসে ন্যায্যমূল্যে গোলাপ বিক্রি হলেও অধিকাংশ চাষি সারা বছর লোকসান দিয়ে ফুল বিক্রি করেন। ক্রেতার অভাবে প্রতিবছর গাছে নষ্ট হয় ৩০ লাখের বেশি গোলাপ। বরইতলীতে গোলাপের বাগান আছে ১০৩টি।

কৃষিবিদেরা জানান, একসময় গোলাপ কেবল শীতকালীন ফুল হিসেবেই পরিচিত ছিল। তবে এখন সারা বছরই এর চাষ হয়। বাংলাদেশে চাষ হয় মিরান্ডি, পাপা মেলান্ড, ডাবল ডিলাইট, তাজমহল, প্যারাডাইস, ব্লু-মুন, মন্টেজুমা, টাটা সেন্টার, সিটি অব বেলফাস্ট জাতের গোলাপ।

গোলাপের পাপড়ি থেকে নানা ধরনের সুগন্ধি, প্রসাধন, গোলাপজল, খাবারের নানা উপাদান তৈরি হয় বিদেশে। ফ্রান্স, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এ ধরনের সুগন্ধি তৈরি হচ্ছে। তবে এ জন্য বিশেষ জাত নির্বাচন করে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু তিন দশক ধরে চকরিয়ায় গোলাপের চাষ হলেও এমন কোনো উদ্যোগ সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে নেওয়া হয়নি।

চকরিয়ার বরইতলীর চাষিরা জানান, ফুল সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই বলে প্রতিবছর লাখ লাখ গোলাপ গাছেই নষ্ট হচ্ছে। গোলাপ দিয়ে সুগন্ধি উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো, তেমনি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা গোলাপ চাষে উৎসাহিত হতেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বরইতলী ইউনিয়নের উপরপাড়া, নামারপাড়া, খয়রাতিপাড়া, নতুন রাস্তার মাথা ও মাইজপাড়ার কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাগানে হাজার হাজার গোলাপ ফুটে আছে, কিন্তু বেচাবিক্রি তেমন নেই। ৬০ শতাংশ ফুল গাছ থেকে কেটে চট্টগ্রাম মহানগরের চেরাগী পাহাড় এলাকার ফুলের দোকানে সরবরাহ করা হলেও অবশিষ্ট ফুল গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাষিরা জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বরইতলীর ১০৩টি বাগান থেকে ১৩ লাখ গোলাপ বিক্রির আশা ছিল। কিন্তু বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন লাখের মতো। অবশিষ্ট ফুল গাছেই নষ্ট হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি বিক্রির জন্য ১০ লাখ ফুট কাটা হলে অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বরইতলী অংশের পূর্ব পাশে ছয় কানি জমিতে ২৩ বছর ধরে গোলাপের চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক ইদ্রিস আহমদ। বাগানে গাছ আছে ২৪ হাজারের মতো। প্রতিটি গাছে দুই থেকে চারটি করে গোলাপ ফোটে। ইদ্রিস আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর তাঁর বাগানে নষ্ট হয়েছে সাত লাখের বেশি ফুল। এই ফুল দিয়ে আতর, গোলাপজলসহ সুগন্ধি তৈরি করা গেলে প্রতিবছর লাখ টাকা উপার্জিত হতো। কিন্তু ফুলের রস সংগ্রহ করার মতো কোনো ল্যাব কিংবা কারখানা নেই। তবে শখের বশে কেউ কেউ গোলাপের পাপড়ি থেকে নির্যাস বের করে সনাতন পদ্ধতিতে গোলাপজল ও সুগন্ধি উৎপাদন করে ব্যবহার করেন। কিন্তু লাখ লাখ গোলাপ সংরক্ষণ করে সুগন্ধি তৈরি করা চাষিদের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার প্রশিক্ষণ।

গোলাপচাষিদের সংগঠন বরইতলী গোলাপ বাগান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশেও ফুলের নির্যাস দিয়ে সুগন্ধি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা যেত। বাজার দখল করে রাখা কাগজের ফুলের দাপট থেকে বাঁচতেন কৃষকেরা। সুগন্ধি তৈরির সুযোগ না থাকায় বরইতলীর একটি ইউনিয়নেই প্রতিবছর গাছে নষ্ট হচ্ছে ৩০-৩৫ লাখ গোলাপ।

বরইতলীর বাগানগুলোতে প্রতি বছর নষ্ট হয় ৩০ লাখের মতো গোলাপ। সুগন্ধি তৈরির উদ্যোগ না থাকায় লোকসান গুনছেন চাষিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত বছর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রেনের ধাক্কায় খালে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় সেতু থেকে খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়া গরু ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের পঁহরচাদা গোবিন্দপুর-বিএমচর রেল সংযোগ সেতুর কাছ থেকে মরদেহটি উদ্ধার হয়।

এর আগে, খালের পানিতে মরদেহটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন।

আরো পড়ুন:

সড়কের পাশে পড়ে ছিল ব্যবসায়ীর গলাকাটা মরদেহ

কুড়িগ্রামে নদীতে নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আজ সকালে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে খালের পানিতে মরদেহ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।”

মারা যাওয়া আব্দুল জব্বার (৫০) পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া এলাকার আহসাব মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় হাটভিত্তিক গরু ব্যবসায়ী ছিলেন।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের রেলসংযোগ সেতু দিয়ে গরু নিয়ে পার হচ্ছিলেন আব্দুল জব্বারসহ তিনজন। এসময় কক্সবাজারমুখী একটি ট্রেনের ধাক্কায় আব্দুল জব্বার ব্রিজ থেকে খালের পানিতে পড়ে যান। তার সঙ্গে থাকা অপর দুই ব্যবসায়ী অক্ষত ছিলেন।

ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার অভিযান চালায়। সন্ধ্যার পর অভিযান স্থগিত করা হয়। আব্দুল জব্বারের খোঁজে স্থানীয়দের তৎপরতা অব্যাহত ছিল।

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রেনের ধাক্কায় খালে নিখোঁজ ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার