গণমাধ্যম কমিশন ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশের তালিকা দেবে আজ
Published: 24th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসে কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। শনিবার (২২ মার্চ) জমা দেওয়া প্রতিবেদনে ‘এখনই বাস্তবায়নযোগ্য’ সুপারিশগুলোর আলাদা তালিকা দিতে বলেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সুপারিশের তালিকা আজ (সোমবার) জমা দেওয়া হবে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছে।
রবিবার (২৩ মার্চ) প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ তথ্য জানান।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, “শনিবার প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এখনই ব্যস্তবায়নযোগ্য সুপারিশের তালিকা আলাদা করে দিতে বলেছেন। আমরা সোমবারের মধ্যে সেটা দেবো। আমাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো অনতিবিলম্বে কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এদিকে, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ব্যস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে এমন মন্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যম মালিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনি ন্যায্য মজুরি না দিতে পারলে প্রতিষ্ঠান করেন কেন? গার্মেন্টস মালিকদের মতো এসব কথা বলবেন না। সাংবাদিকদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”
কামাল আহমেদ বলেন, “আমরা শুধু আপনাদের খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করিনি, কমানোর জন্য অনেক ভালো ভালো প্রস্তাব করেছি, যাতে একটি সংবাদমাধ্যম আরো অনেক বেশি স্বাবলম্বী হতে পারে।”
গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ বলেন, “প্রতিটি মিডিয়া হাউসে ফ্যাক্টচেকিং ডেস্ক করা দরকার। সেটা আমরা অনেক আগে থেকে বলেছি। কিন্তু বিগত সরকার অনেক মিথ্যা উন্নয়নের বয়ান করেছে। তখন সেটা মিডিয়া প্রত্যাখ্যান করতে পারেনি। সরকারের সঙ্গে বিরোধ করতে পারেনি, ফ্যাক্টচেক ঠিকমতো হয়নি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ আগে মিথ্যা উন্নয়নের তথ্য ছড়িয়েছে। এখন পতনের পর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য সুনামির মতো প্রচার হচ্ছে। আর মূলধারার অনেক মিডিয়া নানা ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে এখন তাদের গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে এখন মূলধারার মিডিয়া ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা ছড়াচ্ছে। ভারতের মূলধারার অনেক মিডিয়াও বাংলাদেশে গুজব ছড়াচ্ছে। রিপাবলিক বাংলা বা এমন আধা ডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা পতিত সরকারের বন্ধু চ্যানেল।”
কামাল আহমেদ বলেন, “এটা রাজনৈতিকভাবে এখন মোকাবিলা করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ লাগবে। অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য নিয়ে খুব বড় বিপদ আসন্ন। কারণ ফেসবুক ও অন্যান্য মিডিয়া ফ্যাক্টচেক কমিয়ে দিচ্ছে। আমরা গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদনে বলেছি, এর জন্য সরকারি উদ্যোগ ও প্রতিটা হাউজের একে অপরের একসঙ্গে কাজ করা দরকার।”
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ম ল আহম দ এখনই ব অন ক ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে বিভিন্ন দলের অবস্থান কেমন হতে পারে
সরকার থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলার পর চায়ের দোকান বা কোনো আড্ডায় গেলেই শোনা যায়, কে জিতবে এই নিয়ে কথা। আড্ডায় পাঁড় বিএনপি সমর্থকেরা যেমন চিন্তা করেন, তাঁরা ২৮০-এর বেশি আসন পাবেন, সেদিকে অনলাইন জরিপগুলোতে আবার জামায়াত ও লীগের জয়জয়কার।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জেন–জিদের ভরসায় নতুন বাংলাদেশ ২.০ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আসছে।
এখন বিএনপির ভূমিধস জয় কতটুকু সম্ভব? আমাদের হাতে এই উপাত্ত বিশ্লেষণের দুই রকম উপায় আছে। এক, অতীতের তথ্য (হিস্টরিক্যাল ডেটা) ও সাম্প্রতিক জরিপ।
দেখে নিই, কী আছে অতীতের ডেটাতে (সব হিসাব ১৯৭২-এর পর ২০০৮ নির্বাচন পর্যন্ত, শুধু জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে ২০১৮-এর ডেটা নেওয়া হয়েছে):
ওপরের তথ্যের সঙ্গে যদি বর্তমান মাঠের অবস্থা তুলনা করা হয়, তাহলে বিএনপি এবং জামায়াত তাদের সেরা সময়ে আছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের সব থেকে খারাপ সময়ে আছে।
সেই হিসাবে বিএনপির ৪১ দশমিক ১৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগের ২৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জামায়াতের ১২ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টির ৫ দশমিক ২২ শতাংশ যোগ করলে ৮৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হয়। বাকি ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ থাকবে ফ্লোটিং।
এখন দেখি, জনমত জরিপ কী বলে? অনলাইনে বিভিন্ন জনমত জরিপ যদি দেখেন, সেখানে লীগ ও জামায়াত অস্বাভাবিক ভালো করছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তা-ই বলে? আগস্টের পর আমাদের চাহিদা কি বদল হয়নি? ইনোভেশন কনসালটিংয়ের পরিচালিত ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন) এবং ভয়েস অব রিফর্মের সহযোগিতায় ৬৪টি জেলায় ১০ হাজার ৬৯৬ জনের ওপর একটা জরিপের ফল কিছুদিন আগে ঘোষণা করা হয়েছে। জরিপের ফল দেখি:
এ জরিপে জাতীয় পার্টি হারিয়ে গেছে দেখা যায়। এই অনুপাতে ভোট হলে বিএনপির ভোট হবে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা তাদের আগের সীমার কাছাকাছি। কিন্তু এটা কি নিশ্চিত? কিন্তু জামায়াত তার সেরা ফলাফলে এখনই পৌঁছে গেছে। ফলে এখন তারা এরপর যা-ই করবে, তা তাদের জন্য রেকর্ড এবং বিএনপির জন্য হুমকি। জাতীয় নাগরিক পার্টি নতুন হয়েছে, তাদের ভোটের অবস্থা পরের পোলগুলোতে আরও বোঝা যাবে। এ অবস্থা থেকে দলগুলার জন্য কী প্রাপ্তি?
বিএনপি: জেন-জিদের মধ্যে বিএনপির ভোট সবচেয়ে কম। বিএনপি সংবিধান তথা রাষ্ট্রের সংস্কার নিয়ে মানুষের মনে নেগেটিভ ধারণা দিচ্ছে, যা তাদের অনেক ভোটারকে অনিশ্চিত ক্যাটাগরিতে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের দলের চাঁদাবাজি কন্ট্রোল করতে হবে, দলের সংস্কার করতে হবে, যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে এবং সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া ও জেন-জিদের কাছে পৌঁছাতে হবে, যদি তারা তাদের জয় নিশ্চিত করতে চায়।
২০০৮-এর রাজনীতি এখন চলবে না, মানুষ ৩১ দফার থেকে বেশি সংস্কার আশা করে, তা বুঝতে হবে। তারেক রহমানসহ দলের সিনিয়র অনেকেই এ ব্যাপারে তাঁদের দলকে সতর্ক করছেন, কিন্তু দলের অন্যরা কি বুঝতে পারছেন? সময়ই বলবে।
জামায়াত: জামায়াত এখনই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে গেছে। তারা সংস্কার নিয়ে অন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে তালিমের মাধ্যমে মানুষের কাছে যাচ্ছে। অনলাইনেও তাদের কর্মীরা খুব সরব, যা তাদের অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখছে মাঠে। সব ইসলামি দল যদি জোট করে, জামায়াত আরও এগিয়ে যাবে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ এবং নারী স্বাধীনতা নিয়ে তাদের অবস্থান মানুষের চাওয়ার বিপক্ষে।
আবার এদিকে গুজব আওয়ামী লীগ তাদের ভোট জামায়াতকে দিয়ে তাদের বয়ান, ‘তারা না থাকলে দেশ মৌলবাদীদের হাতে চলে যাবে’, সেটা প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগ: আওয়ামী লীগ ভোটে থাকবে কি থাকবে না, এটা একটা বড় প্রশ্ন। যাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু বলছেন না, তাঁদের একটা অংশ লীগের। সেই হিসাবে ২৪ শতাংশ ভোটব্যাংক থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। যা তাদের পরের নির্বাচনগুলোতে ভালোভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ইঙ্গিতও দেয়। ইনোভেশনের জরিপসহ বিভিন্ন অনলাইন জরিপেও লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষ সমর্থন জানায়। লীগের ব্যাপার পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নিতে পারলে মানুষের ভোটিং প্যাটার্ন ক্লিয়ার হতো।
জাতীয় নাগরিক পার্টি: ভোটের রাজনীতিতে নতুন এই দল বিপুলসংখ্যক জনগণের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে, তা সময়ই বলে দেবে। এরা তাদের সব শক্তি নিজেদের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং অন্য কাজে নিয়োগ করে এখনো মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। তাদের এ ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত ৭৩-৭৭ শতাংশ ভোট পড়ে। যদিও ২০০৮-এ অস্বাভাবিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০০৮ থেকে দেশে নতুন ভোটার ৪ কোটি ২০ লাখ ৮৫ হাজার ৬৩৯ জন (যা মোট ভোটের ৩৪ শতাংশ), যাদের ভোটিং প্যাটার্ন এখনো অজানা। যে-ই পরে ক্ষমতায় আসুক, রাষ্ট্রের সংস্কার ও গতানুগতিক কাজ সমান্তরালে চালিয়ে গেলেই ৫ আগস্ট সার্থক হবে। কোনো দল যদি এখনই ভেবে নেয়, তারা ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে, তা আসলে তাদের জন্য এত সহজ হবে না।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।
ই-মেইল: [email protected]