এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড সতর্ক হওয়ার জরুরি বার্তাই দিচ্ছে। কেননা গত ২৩ বছরে ২৬ বার আগুন লেগেছে বাংলাদেশের মহাপ্রাণ সুন্দরবনে। এসব অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয়েছে কয়েক শ একর বনভূমির। গত বছর মে মাসের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় পাঁচ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি এলাকায় শনিবার সকালে আগুনের ধোঁয়া দেখে বন বিভাগকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুপুর থেকে বন বিভাগ, সিপিজি, ভিটিআরটি, টাইগার টিমের শত শত লোকজন কাজ শুরু করেন। বিকেলের মধ্যে ফায়ারলাইন কাটা শেষ করে বন বিভাগ। সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম গেলেও পানির উৎস দূরে থাকায় আগুন নেভানোর কাজ শুরু হতে রাত ৯টা বেজে যায়। বনকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে রোববার সকালে পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় আগুন দেখা যায়।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটাও হয়তো জানা যাবে। কিন্তু এত আলোচনা, এত সতর্কবার্তার পরও সুন্দরবনে কেন বারবার এমন অগ্নিকাণ্ড? কেন প্রতিবারই আগুন লাগে লোকালয়-সংলগ্ন বনের পূর্বাংশে। অংশটি ভোলা নদীর তীরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে পড়েছে।
গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডগুলোর অন্তত ১৫টির ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অসাবধানতাবশত বনজীবীদের ফেলে যাওয়া আগুনের’ বিষয়টি। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞরা বন বিভাগের এই ভাষ্যের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা মনে করেন, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার জন্য একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন দিয়ে বনের সর্বনাশ করে চলেছে।
আমরা মনে করি, সুন্দরবনের একই অঞ্চলে বারবার আগুন লাগার পেছনে অতি মুনাফালোভী একটি চক্রের হাত রয়েছে। কেননা বনে কিছু জায়গায় আগুন দিয়ে শ্বাসমূল পরিষ্কার করতে পারলে বর্ষায় মাছ ধরা সুবিধা। ফলে এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের যেমন সক্ষমতার ঘাটতি আছে, আবার উদাসীনতাও আছে।
ভূপ্রাকৃতিক কারণেই সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটার সুযোগ খুবই কম। মানবসৃষ্ট কারণ, বিশেষ করে অতি মুনাফালোভী চক্রের কারণে বনটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারকে অবশ্যই বন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের হাতেও বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনা দেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে অবশ্যই বন বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে
সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা এলাকায় নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। শনিবার (২২ মার্চ) লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলার মধ্যেই রবিবার (২৩ মার্চ) সকালে এই নতুন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নজরে আসে বন বিভাগের। পানির উৎস কাছাকাছি না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে সারা দিনেও আগুনের এলাকায় পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি।
ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, ‘‘নতুন করে লাগা আগুনের ব্যাপ্তি তুলনামূলক বেশি। চারপাশে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে, তবে আগুন কতটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছে, তা এখনো হিসাব করা হয়নি।’’
তিনি আরো জানান, ‘‘এলাকার পাশের নদীতে জোয়ার ছাড়া পানি থাকে না। তাই পাম্প মেশিন বসাতে দেরি হয়েছে। জোয়ার এলে আমরা পাইপ স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। তবে এখনো আগুনে পানি ছেটাতে পারিনি।’’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান জানান, সন্ধ্যার আগে পাম্প স্থাপন ও পাইপ টানার কাজ শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে তিনি বলেন, ‘‘আগুনের এলাকা থেকে পানির উৎস অনেক দূরে। বন বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে আড়াই কিলোমিটার পাইপ স্থাপন করেছি। আরও প্রায় আধা কিলোমিটার পাইপ খাটাতে হবে, তারপর আগুনের এলাকায় পানি দেওয়া সম্ভব হবে।’’
রাত সাড়ে ৮টার পর সুন্দরবনের নতুন করে লাগা আগুনের এলাকায় পানি ছিটানো শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম। তিনি বলেন, ‘‘বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’’
তবে রাত সোয়া ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান বলেন, ‘‘ভাটার কারণে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাম্প বন্ধ করতে হয়েছে। জোয়ার না এলে পানি সরবরাহ সম্ভব হবে না।’’
শনিবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে আগুন লাগে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই রবিবার সকালে পাশের তেইশের ছিলা এলাকায় নতুন করে আগুন দেখা যায়। পরপর দুই দিনে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে ২৭ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগই পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হয়েছে। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল