দুই যুগে ২৭ বার আগুন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে
Published: 24th, March 2025 GMT
দুই যুগে ২৭ বার আগুন লেগেছে। পুড়েছে শত একর বনভূমি। সব ঘটনা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে। শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় লাগা আগুন গতকাল রোববার দুপুরে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে সকালে অন্য এলাকায় ধোঁয়া দেখা গেছে। সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, চাঁদপাই রেঞ্জের একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।
বনরক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকরা কলমতেজী থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় ছুটে যান। দুপুর ১টা থেকে আগুন লাগা স্থানে ফায়ার লাইন তৈরি শুরু করেন।
তবে নতুন করে লাগা আগুনের স্থানে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছলেও পানি ছিটানো শুরু করতে পারেননি। ঘটনাস্থল থেকে খালের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। দুর্গম এবং গাছপালা জড়ানো থাকায় পাইপ টানতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও বনরক্ষীদের।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, ‘বাগেরহাট, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জসহ পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন সংলগ্ন ভোলা নদীতীরে অবস্থান করছে।’
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, কলমতেজীর আগুন গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় নিভেছে। আনুমানিক ৩-৪ একর বনের গাছপালা ছাই হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। তবে নতুন করে যে আগুন লেগেছে, সেখানে বনরক্ষীরা পৌঁছেছেন। ফায়ার লাইন তৈরিতে কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব পাম্পের মাধ্যমে পানি ছিটানো হবে।
সব আগুন পূর্ব সুন্দরবনে
বন বিভাগের তথ্যমতে, দুই যুগের অগ্নিকাণ্ডের সব ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ভোলা ও মরা ভোলা নদীসংলগ্ন এলাকায়। ২০০২ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের কটকা, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়া, ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল, ২০০৬ সালে তেরাবেকা, আমুরবুনিয়া, খুড়াবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর, ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলী ও ডুমুরিয়া, ২০১০ সালে গুলিশাখালী, ২০১১ সালে নাংলী, ২০১৪ সালে গুলিশাখালী, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলা, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলা, ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর, ২০২১ সালের ৩ মে শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি, ২০২৪ সালের ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এবং সর্বশেষ গত শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকায় আগুন লাগে। দুই যুগের এসব আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০০ একর বনভূমি।
আগুন লাগার যত কারণ
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলে-মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে অন্তত ১৫ বার। তাপদাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে চারবার। মাছ ধরার জন্য চারবার এবং আক্রোশবশত অগ্নিসংযোগের উল্লেখ রয়েছে চারবার।
তবে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, একশ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ইচ্ছা করে গহিন বনে আগুন ধরিয়ে দেয় অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা। পরে বর্ষা মৌসুমে এসব স্থান প্লাবিত হলে জাল দিয়ে সহজে লাখ টাকার মাছ ধরতে পারে তারা।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
সুন্দরবনের আগুন ‘মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত’ উল্লেখ করে দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগ ও সরকারকে এ নিয়ে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠন ও বন-সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেন, ‘সুন্দরবন সংরক্ষিত অঞ্চল হলেও শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে বারবার আগুন লাগছে। এর দায়ভার এড়াতে পারে না বন বিভাগ।’
সর্বশেষ আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন– ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দাস ও কলমতেজী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। এসিএফ দ্বীপন সমকালকে বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করব। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন প র ব ব ভ গ কর মকর ত বন ব ভ গ কলমত জ এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রোববার সকালে বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেও শনিবার রাত ৯টা থেকে বন বিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগুনে পানি দেওয়া হয়। বনরক্ষী ও বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রাতভর আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোববার সকাল আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিয়ন্ত্রণে আসা আবারও আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা তা যাচাই করছেন বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও করণীয় জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে ধোঁয়া দেখতে পান স্থানীয়রা। দুপুরের দিকে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে বন বিভাগ। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (শুকনো পাতা, মাটি সরিয়ে নালা) তৈরি করে। রাত হয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অভিযান শেষ করে চলে যান। তবে, বন বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন নেভানোর কাজ করে। বন বিভাগের সঙ্গে যোগ দেন অর্ধশতাধিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক।