Samakal:
2025-03-25@15:30:14 GMT

তিন সড়কে ডাকাত আতঙ্ক

Published: 23rd, March 2025 GMT

তিন সড়কে ডাকাত আতঙ্ক

‘বড়ইবাড়ী-ভাওয়াল-মির্জাপুর আঞ্চলিক সড়কে সন্ধ্যার পর আমরা ডাকাতের ভয়ে যাত্রী নিয়ে যাই না। এ সড়কের হাটুরিয়া চালার প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটারের দুপাশে গভীর জঙ্গল। রাতে সেখানে ডাকাত দলের সদস্যরা অবস্থান নেয়। সুযোগ বুঝে সড়কে যাতায়াতকারী লোকজনের ওপর হামলা করে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব লুটে নেয় তারা।’ কথাগুলো গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার অটোরিকশাচালক আব্দুল কদ্দুসের।
উপজেলার তিন আঞ্চলিক সড়কে দুই মাসে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাত দলের সদস্যরা পথচারী, যানবাহনের চালক এবং অটোরিকশার যাত্রীদের ওপর হামলা ও কুপিয়ে জখম করছে। তাদের টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুটে নিচ্ছে। সরেজমিন পথচারী, যানবাহনের চালক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন সড়কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো নির্জন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কাউকে কুপিয়ে জখম করে, কারও হাত-পা বেঁধে জঙ্গলে ফেলে সবকিছু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
সড়ক তিনটির মধ্যে বড়ইবাড়ী-ভাওয়াল-মির্জাপুর আঞ্চলিক সড়ক ও কালামপুর চার রাস্তা হয়ে চন্দ্রা-সাহেবাবাদ এবং কালিয়াকৈর-সিনাবহ আঞ্চলিক সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে সন্ধ্যার পর সড়কটিতে ছোট ছোট যানবাহনের চালকরা যেতে রাজি হন না। ২০ মার্চ রাতে গাবচালা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মো.

সজিব হোসেন আরেকজনসহ হাটুরিয়াচালা গ্রামের দিকে যাওয়ার পথে ডাকাতির কবলে পড়েন। এ সময় ১০-১৫ জন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে রয়েল হোসেন নামে একজন পালিয়ে রক্ষা পান। আর সজিবকে কুপিয়ে হত্যা করে তারা। 
খবর পেয়ে হাটুরিয়াচালার গ্রামের বাসিন্দারা দু’জনকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। গ্রেপ্তার দু’জন হলেন বগুড়ার শেরপুর থানার হাটগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা ও দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মিজানুর রহমান। তারা কালিয়াকৈরে ভাড়া বাসায় থেকে দিনে পোশাক কারখানায় চাকরি এবং রাতে ডাকাতিতে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এসব ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।
সজিবের সংসারে স্ত্রী শারমিন বেগম ছাড়াও  পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া সোয়াদ ও নার্সারিপড়ুয়া ছেলে দিদার হোসেন রয়েছে। শারমিন বলেন, ‘আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’ আর সজিবের বাবা মুক্তার আলী ছেলে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
২০ মার্চ একই স্থানে ডাকাতের হামলায় আহত হন আলম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি জামালপুর বাজার থেকে রাত ৮টার দিকে হাটুরিয়াচালার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে ১০-১২ জন গতিরোধ করে। চিনে ফেলায় তারা গাছ কাটার করাত দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। দৌড়ে তাদের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পাই।’
এক মাসে ২০ থেকে ২২টি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি দোয়ানীচালা গ্রামের শাহাদৎ হোসেনের। তিনি বলেন, সড়কের উত্তর পাশে গলাচিপার বিশাল গজারি বন থাকায় ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে এসব অপকর্ম করতে সাহস পায়। এ সড়কে পুলিশের টহল নেই বলেই চলে।’
কালামপুর আঞ্চলিক সড়কে এক পথচারী জানান, কয়েকদিন আগে সাহেবাবাদ ও সিনাবহ সড়কের নির্জন স্থানে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অনেককে বেঁধে রেখে টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করেছে। কয়েকজনকে মারধর করে। ১৮ মার্চ এ সড়কে ডাকাত সদস্যরা চালকের হাত-পা বেঁধে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে যায়।
দুই মাসে দুই সড়কে ডাকাতি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্তা সামছুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, এখানে পুলিশ রাত ১০টার পর আর দেখা যায় না। সারা রাত টহল থাকলে হয়তো ডাকাতির সাহস পাবে না দুর্বৃত্তরা। ১৮ মার্চ কালামপুর চাররাস্তার আশপাশে গণডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী আবুল কাশেম মণ্ডল থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
প্রতিটি নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উল্লেখ করে দুদকের সাবেক আইনজীবী মোজাম্মেল হক বলেন, সড়কে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, সেগুলো সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হলে আর কোনো অপরাধ সংঘটিত হবে না। ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়ে গেলে রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো জরুরি।
সম্প্রতি সড়কে ডাকাতি বেড়েছে স্বীকার করে শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকেও অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সামনে ঈদ থাকায় ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে। যেসব এলাকায় এসব ঘটনা ঘটছে, সেখানে রাতে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন ছ নত ই

এছাড়াও পড়ুন:

‘নো অর্ডার’ আদেশের প্রকৃত অর্থ কী, স্পষ্ট করলেন সুপ্রিম কোর্ট

সাধারণত হাইকোর্ট বিভাগের কোনো আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করার সুযোগ পান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত অনেক সময় ‘নো অর্ডার’ আদেশ দিয়ে থাকেন। এই ‘নো অর্ডার’ আদেশের প্রকৃত অর্থ কী, তা স্পষ্ট করে আজ মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে প্রদত্ত ‘নো অর্ডার’ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ দেওয়া হয়ে থাকে। বিষয়টির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা অনেক সময় অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। ফলে ‘নো অর্ডার’–এর প্রকৃত অর্থ স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে কোনো মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ দেওয়া হলে আবেদনকারীর প্রার্থিত প্রতিকার (যে বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে) মঞ্জুর করা হয়নি এবং চেম্বার কোর্ট তর্কিত আদেশ বা রায়ের বিষয়ে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই আবেদনটি নিষ্পত্তি করেছেন মর্মে গণ্য করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ