চট্টগ্রামে তৈরি পোশাক ও থান কাপড়ের জন্য বিখ্যাত টেরিবাজার। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে বর্তমানে পোশাকের একাধিক নামি ব্র্যান্ডের দোকানও রয়েছে। শাড়ি থেকে শুরু করে লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, পাঞ্জাবিসহ ছোট-বড় সবার যাবতীয় পোশাক এক ছাদের নিচে পাওয়া যায়। তাই অনেকেই ছুটে যান এই ব্র্যান্ডের দোকানগুলোয়। অভিযোগ আছে, ক্রেতাদের বিশ্বাস ও আস্থাকে পুঁজি করে পণ্যের দাম নিয়ে কারসাজিতে জড়িয়ে পড়েছে কিছু ব্র্যান্ড। কম দামের পোশাক বেশি দামে বিক্রি করতে কারসাজি করে পাল্টানো হচ্ছে ‘ট্যাগ’ (পণ্যের মূল্য)। কেনা দামের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা আদায় করতে দেশি পোশাকে নকল বিদেশি ব্র্যান্ডের ট্যাগও লাগানো হচ্ছে।
টেরিবাজারের সুপরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডশপের একটি মেগামার্ট। সম্প্রতি ওই ব্র্যান্ডশপে অভিযান চালিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি দেশি পোশাককে বিদেশি বলে বিক্রি করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছে। পোশাকে কম দামের ট্যাগ উঠিয়ে কয়েক গুণ বাড়তি দামের ট্যাগ লাগানো হয়েছে। যেসব পোশাক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করার কথা; সেগুলোর কোনোটির গায়ে লাগানো হয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকার ট্যাগ। কোনোটির গায়ে আবার দাম লাগানো হয়েছে ৩ হাজার টাকার বেশি। প্রতিষ্ঠানটি কম দামে পোশাক কিনলেও এর কোনো ভাউচার বা রসিদ দেখাতে পারেনি।
দেশি পোশাককে ভারতীয় দেখিয়ে মূল্য ট্যাগ পরিবর্তন করে বাড়তি দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় গত ১৯ মার্চ মেগামার্টকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ মার্চ সেলিম পাঞ্জাবিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সেলিম পাঞ্জাবিতে গিয়ে অধিদপ্তর কর্মকর্তারা দেখতে পান, বেশি দামের পাশাপাশি পোশাকে লাগানো হয়েছে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ ট্যাগ। দেশীয় কারখানায় তৈরি হওয়া এসব পাঞ্জাবির সর্বোচ্চ দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ বলেন, ‘মেগামার্ট, সেলিম পাঞ্জাবির মতো কিছু বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান প্রতারণায় জড়িত। এর বেশ কিছু প্রমাণও পেয়েছি আমরা। কৌশল হিসেবে তারা নিজেদের কাছে পোশাক ক্রয়ের কোনো ভাউচার রাখে না।’
অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বলেন, মেগামার্ট নিজস্ব কিছু পণ্য বিদেশি নামে বেশি দামে পোশাক বিক্রি করছে। এগুলো ভারতীয় ও পাকিস্তানি কাপড় বলা হলেও তারা কোনো নথি দেখাতে পারেননি। এক পর্যায়ে তারা স্বীকার করেন, সেগুলো দেশে তৈরি পোশাক।’
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘সামান্য লাভে পোশাক থেকে শুরু করে ঈদের সব পণ্য বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে। এর পরও কিছু প্রতিষ্ঠান মূল্য ট্যাগ পরিবর্তন, দেশি পোশাককে বিদেশি বলে বিক্রির অভিযোগ পাচ্ছি।’
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা দেশীয় পোশাককে ভারতীয় হিসেবে দেখাচ্ছে। নামকরা ও বিশ্বস্ত অনেক প্রতিষ্ঠানও এমন প্রতারণায় জড়িত। এদের চিহ্নিত করে জরিমানার পাশাপাশি কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীর আড়তে ইলিশের কেজি ২৫০০ টাকা
বাঙালির অন্যতম উৎসব বাংলা নববর্ষ। আর এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ পান্তা-ইলিশ। এ উৎসব ঘিরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। দেশের বৃহৎ পটুয়াখালীর পাইকারি মাছ বাজার মহিপুর ও আলীপুরে ইলিশের দাম চড়া। এতে পাইকারি ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে সমুদ্রে মাছের অকাল থাকায় ইলিশের দাম অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা।
মহিপুর ও আলীপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই দুই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফাইস্যা, ছুড়ি, পোয়া, মটকা চিংড়ি, টোনা, তাপসী, কোরাল, চাপলি, পবদা ও টাইগার চিংড়ি, স্বল্প সংখ্যক বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ থাকলেও বাজার প্রায় ইলিশ শূন্য। যেখানে প্রতিনিয়ত টন টন ইলিশ বিক্রি হয়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি আড়তে ইলিশ মাছ দেখা গেল। তাও মাঝারি ও ছোট সাইজের ইলিশ। এ বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। আর ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
কলাপাড়া থেকে মহিপুর মাছ বাজারে আসা পাইকারি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘‘সকাল ৮টায় মহিপুরে এসেছি। এখন পর্যন্ত ইলিশ মাছ কিনতে পারিনি। এখানে নিলামের মাধ্যমে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ সব ইলিশ কিনে কত টাকায় বিক্রি করব?’’
আরো পড়ুন:
‘হাসিনার দোসররা ভোরে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে’
নববর্ষের দিন টিএসসি-শাহবাগ মেট্রো স্টেশন ‘সাময়িক বন্ধ থাকবে’
আমতলী থেকে আসা অপর পাইকারি ক্রেতা রিয়াজুল বলেন, ‘‘আজ এখানে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দাম চড়া থাকায় এক মণ ছুড়ি মাছ নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বিকালে আমতলী বাজারে বিক্রি করব।’’
মহিপুর আড়তদার মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মাহতাব ফিসের স্বত্ত্বাধিকারী মাহতাব হাওলাদার জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি না থাকার কারণে জেলেদের জালে খুব কম পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। যার কারণে বাজারে ইলিশের সংখ্যা খুবই কম। আর আজ একেবারে ইলিশ নেই বললেই চলে। যার কারণে দাম অনেকটা চড়া।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের সংখ্যা একটু কমেছে। এছাড়া এই উপকূলে অনেক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না, যার ইলিশ কম ধরা পড়ছে এবং দামও বেশি। ১৫ এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার পর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এবং দামও অনেকটা কমবে।
ঢাকা/ইমরান/বকুল