সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে আয় বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমার পরও গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে, অর্থাৎ চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট মুনাফা কমে যায় সামিট পাওয়ারের। এর পর অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয় কমেছে প্রতিষ্ঠানটির। পাশাপাশি মুনাফাও কমেছে।
সম্প্রতি পর্ষদ সভা শেষে প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত হিসাব বছরের তুলনায় চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৬ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩৯ শতাংশ মুনাফা কমেছে সামিটের। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিট মুনাফা কমার কারণ ‘কস্ট অব সেলস’ বা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি।
কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মোট মুনাফা হয় ৫৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বা শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৫৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১৯৮ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ইপিএস ৮৯ পয়সা। অথচ বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবরে কোম্পানিটি যেখানে ১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল, তা ২০২৪ সালের একই সময়ে তা প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ১ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। অর্থাৎ রাজস্বে প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির পরও মুনাফা কমার কারণ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে যেখানে ‘কস্ট অব সেলস’ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছিল, তা বেড়ে ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা। যদিও একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার ধারায় ছিল।
অবশ্য সামিট প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয় আগের বছরের ৮৩০ কোটি টাকা থেকে কমে ৭৬১ কোটি টাকায় নেমেছে। এতে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ১৫০ কোটি টাকা থেকে কমে ১২০ কোটি টাকায় নেমেছে। এ সময়ে ইপিএস আগের বছরের ৮২ পয়সা থেকে কমে ৫০ পয়সায় নেমেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রথম প র ন ত ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
জেমিনি সি ফুডের কারসাজি: এবাদুল পরিবারকে ৩.৮৫ কোটি টাকা দণ্ড
পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনসুঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ৫ ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এ কারসাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বিকন ফার্মারসিউটিক্যালস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এম) মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার পারিবারিক সহযোগীরা।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ তার সহযোগীরা জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম যোগসাজস করে বাড়ায়। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
শেয়ার কারসাজিতে সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন- এবাদুল করিমের দুই সন্তান, তার শ্যালক ও নিকটতম আত্মীয়। তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজস করে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সম্প্রতি বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য রাইজিংবিডি ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।
পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে গুঞ্জন ছিল- জেমিনি সি ফুডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানিটির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। অবশেষে তদন্ত সাপেক্ষে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে খাদ্য ও আনসুঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ৫ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে ১১ লাখ টাকা, তার মেয়ে রিসানা করিমকে ২.১২ লাখ টাকা, তার ছেলে উফাত করিমকে ১.৪১ লাখ টাকা, তার শ্যালক সোহেল আলমকে ১০ লাখ টাকা ও ফাতেমা সোহেলকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সে হিসেবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার কারসাজির জন্য মোট ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এবাদুল করিম। তিনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্রাক্ষণবাড়িয়া-৫ আসনে নির্বাচিত হন। ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলোর পর্ষদে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এবাদুল করিমের ছেলে উলফাত করিম। তিনি কোম্পানিটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তার মেয়ে রিসানা করিম। তিনি কোম্পানিটির ম্যানেজমেন্টে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মোহাম্মদ এবাদুল করিমের শ্যালক সোহেল আলম। তিনি আগে বিকন ফার্মারসিউটিক্যালসের পরিচালক ছিলেন। আর ফাতেমা সোহেল মোহাম্মদ এবাদুল করিমের আত্মীয়।
এর আগে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি করার দায়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমকে বড় অংকের জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী নুরুন নাহার, তার মেয়ে ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বড় অংকের জরিমানা করা হয়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে মোহাম্মদ এবাদুল করিমসহ ৫ ব্যক্তি যোগসাজশ করে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার লেনদেন করে। কারসাজিকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার যোগসাজস করে দাম বাড়ায়। আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৩৪১.৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৩৪.৪০ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫৯২.৭০ টাকা বা ১৭৩.৪৬ শতাংশ বেড়ে।
কারসাজিতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত
অভিযুক্তদের ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ মে পর্যন্ত সময়ে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার কারসাজি করে ইচ্ছাকৃতভাবে আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি ও পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী। সেহেতু অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৩) এবং ১৭(ই)(৫) লংঘন করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। যেহেতু অভিযুক্তরা উপর্যুক্ত কর্মকাণ্ড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ফলে আলোচ্য সময়ে জেমিনি সি ফুডের শেয়ার কারসাজি করে সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৩) ও ১৭(ই)(৫) লঙ্ঘনের দায়ে এবাদুল করিম, রিসানা করিম, উফাত করিম, সোহেল আলম ও ফাতেমা সোহেলকে জরিমানা করা হলো।
ঢাকা/টিপু