সময়ের সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে বড় প্রতিষ্ঠান– সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যার চাহিদা পূরণে নেটওয়ার্কিং খাতে প্রয়োজন অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির।
থ্রিজি, ফোরজি বা ফাইভজি বললে সবার আগেই মোবাইল ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির কথা সামনে আসে। কিন্তু অনেকেই জানি না, ওয়াইফাই প্রযুক্তির থ্রিজি, ফোরজি, ফাইভজি এমন ধরনের কয়েকটি জেনারেশন আছে।
বর্তমানে যেসব ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, তা মূলত ওয়াইফাই (সিক্স), অর্থাৎ সিক্স জেনারেশন ওয়াইফাই। যার আধুনিক সংস্করণ হলো ওয়াইফাই (সেভেন), অর্থাৎ সেভেন জেনারেশন ওয়াইফাই, যা আইইইই ৮০২.

১১বিই বা এক্সট্রিমলি হাই থ্রুপুট (ইএইচটি) নামে বিশেষ পরিচিত। নতুন এমন প্রযুক্তি এখন বাংলাদেশে পৌঁছেছে।
ওয়াইফাই সেভেন কী
ইন্টারনেটের গতি ছাড়াও বিশেষ ক্ষেত্রে ওয়াইফাই সেভেন অনেকটা এগিয়ে। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিতে মানোন্নত সব দেশে শুরু হয়েছে ওয়াইফাই সেভেন প্রযুক্তির ব্যবহার। গত বছরের শুরুতে ওয়াইফাই প্রযুক্তির মান নির্ধারণকারী বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ওয়াইফাই অ্যালায়েন্স আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ওয়াইফাই সার্টিফায়েড সেভেন’ প্রোগ্রাম চালু করে। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট মান অনুযায়ী কয়েকটি ওয়াইফাই সেভেন ডিভাইসকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ৫৮টি দেশে এমন প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) উন্মুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সারাবিশ্বে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়বে।
বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের তথ্য বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ওয়াইফাই সেভেন বাজারের আয়তন ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তাই সহজেই অনুমেয়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে এমন প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, তা প্রায় নিশ্চিত।
বিশেষ কোথায় এগিয়ে
ওয়াইফাই সিক্স মূল প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ওয়াইফাই সেভেনে মানোন্নত কিছু ফিচার যুক্ত করেছে। যার মধ্যে ৩২০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইথ, ৪০৯৬ কোয়াড্রেচিওর অ্যাম্প্লিচিউড মডিলেশন (কিউএএম), মাল্টিপল রিসোর্স ইউনিট ও মাল্টি-লিংক অপারেশন (এমএলও)। উল্লিখিত সব ফিচারের কারণে ওয়াইফাই সিক্সের তুলনায় ডেটা ট্রান্সমিশনের হার বেশি এবং ল্যাটেন্সির (ডেটার উৎস থেকে লক্ষ্য পৌঁছানোর সময়) পরিমাণ কম। ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ২৩ জিবিপিএস, যা ওয়াইফাই সিক্সের তুলনায় ২.৪ গুণ বেশি।
বিশেষ তাৎপর্য
ওয়াইফাই সেভেন প্রযুক্তির বিশেষ দিক হলো ২.৪ ও ৫ গিগাহার্টজের সঙ্গে ৬ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড সমর্থন করার সক্ষমতা। প্রযুক্তিটি নতুন ব্যান্ডউইথ মোডকে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। এসব ব্যান্ডউইথ মোডের মধ্যে রয়েছে কন্টিজিয়াস (এককভাবে) ২৪০ মেগাহার্টজ, নন-কন্টিজিয়াস (সম্মিলিতভাবে) ১৬০+৮০ মেগাহার্টজ, কন্টিজিয়াস ৩২০ মেগাহার্টজ ও নন-কন্টিজিয়াস ১৬০+৮০ মেগাহার্টজ। ফলে ওয়াইফাই সেভেন আর্টিফিসিয়াল রিয়্যালিটি (এআর) বা ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি) প্রযুক্তির মতো পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় থ্রুপুট (প্রবাহিত ডেটার পরিমাণ) নিশ্চিত করতে পারে।
প্রতিটি গ্রাহক ওয়াইফাই সিক্স সংস্করণে শুধু নির্দিষ্ট রিসোর্স ইউনিটের (ওয়াইফাই চ্যানেলের সাবডিভিশন) মাধ্যমে ডেটা প্রেরণ বা গ্রহণ করতে পারেন। ফলে স্পেকট্রাম রিসোর্স শিডিউল পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। সমস্যাটি দূর করে কার্যকরভাবে স্পেকট্রামের ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই সেভেনে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে, যা একজন গ্রাহককে বহুমাত্রিক রিসোর্স ইউনিট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন
ওয়াইফাই সেভেন ব্যবহারের জন্য মূল ডিভাইসের সঙ্গে রাউটার বা অ্যাকসেস পয়েন্টে (এপি) প্রযুক্তি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে কিছু মোবাইল হ্যান্ডসেট ও অন্য সব ডিভাইস ওয়াইফাই সেভেন উপযোগী হলেও রাউটার বা অ্যাকসেস পয়েন্ট সমর্থন না করায় অনেক গ্রাহক বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না। ভালো মানের ওয়াইফাই সেভেন পরিষেবার জন্য বুঝেশুনে মানোন্নত রাউটার বা এপি কেনা প্রয়োজন। তা না হলে প্রকৃত সুবিধা উপভোগ করা যাবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইন্টারনেটের দাম কমার সুফল কম পাবে গ্রাহক

সরকারি প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন কেবল কোম্পানি (বিএসসিসিএল) ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড সেবার দাম কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সরকার। কিন্তু মোবাইল অপারেটর ও ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানিগুলো বলছে, ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও তা গ্রাহকের ইন্টারনেটের দামে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ এই মূল্য হ্রাসে কোম্পানিগুলোর সার্বিক ব্যয় তেমন কমবে না। কর ও পরিবহন খরচ না কমালে ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর সুফল গ্রাহক তেমন পাবে না। 

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিএসসিসিএলের বোর্ড সভায় ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, মানুষ যেন সাশ্রয়ে ইন্টারনেট পায় সেজন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম কমানো তার মধ্যে অন্যতম। এ সিদ্ধান্তের ফলে ইন্টারনেটের আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে সব ব্যান্ডউইথের দাম ১০ শতাংশ কমবে। টেলিকম অপারেটরদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

তবে মোবাইল অপারেটর এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ব্যান্ডউইথের দাম তাদের মোট খরচের তুলনায় একেবারে নগণ্য। ফলে এখানে দাম কমিয়ে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা দেওয়া যায় না। 

রোববার রাতে দুটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানির দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সমকালের কথা হয়। তারা বলেন, ব্যান্ডউইথ কিনতে যে টাকা লাগে, তা তাদের মোট খরচের মাত্র দুই শতাংশ। ফলে চাইলেও গ্রাহককে খুব বেশি সুবিধা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া বর্তমানে ইন্টারনেটের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কমেছে, যা দিয়ে পরিচালন খরচই উঠছে না। ফলে মানসম্মত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহককে দাম কমানোর সুবিধা দিতে চাইলে কর কমাতে হবে। পরিচালন পর্যায়ে খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, ১০০ টাকা আয় করলে কর ও অন্যান্য খরচসহ ৫৬ টাকা সরকারকে দিতে হয়। ২৮ টাকা খরচ হয় বিভিন্ন গেটওয়ের চার্জ দিতে। এর পর রয়েছে বিনিয়োগ, পরিচালন ব্যয়। তাই শুধু ব্যান্ডউইথের দাম কমিয়ে ইন্টারনেটের খরচ কমানো যাবে না।

তারা জানান, বিএসসিসিএল থেকে প্রতি এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ কিনতে এখন স্ল্যাব অনুসারে গড়ে ১৮৫ থেকে ২১০ টাকা খরচ হয়।

গ্রাহক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, প্রথমত বিএসসিসিএল থেকে ব্যান্ডউইথ সরাসরি কেনে ইন্টারনেট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো। সেখান থেকে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো কেনে। ফলে ব্যান্ডউইথের দাম কমলে আইজিডব্লিউদের খরচ কমবে। এখন যদি তারা কম দামে ব্যান্ডউইথ দেয় তাহলে আইএসপির খরচ খানিকটা কমবে। কারণ ব্যান্ডউইথের দাম আইএসপির মোট খরচের ১০ থেকে ২০ শতাংশ। এই খরচ কমার হার এতই কম, গ্রাহক পর্যায়ে দাম খুব বেশি কমানো সম্ভব হয় না। ব্যান্ডউইথের দাম কমলে যেটা হবে– গ্রাহক মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা পাবে।

ইন্টারনেট অপারেটরগুলোর পরিবহন খরচ কামনোর বিষয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, এ পর্যায়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ডিডব্লিউডিএম সুবিধা দেওয়ার কথা হচ্ছে। তাতে পরিবহন খরচ বাবদ কোম্পানিগুলোর খরচ ৩৯ শতাংশ কমে যাবে।

ডিডব্লিউডিএম হচ্ছে ডেনস ওয়েভ লেংথ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং মেশিন, যা মোবাইল নেটওয়ার্ককে অপটিক্যাল ফাইবারে যুক্ত করে। শুরুতে ডিডব্লিউডিএম মেশিন নিয়ন্ত্রণ করত মোবাইল অপারেটররা। ২০২১ সালের পর তা ফাইবার প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনটিটিএন) দেয় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে ডিডব্লিউডিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ চেয়েছে মোবাইল অপারেটররা; যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ফাইবার প্রতিষ্ঠানগুলো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইন্টারনেটের দাম কমার সুফল কম পাবে গ্রাহক