ঈশ্বরদী শহরের অন্য সড়কগুলোর মধ্যে উপজেলা সড়কটির গুরুত্ব বেশি। উপজেলা প্রশাসন, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় ও বিনোদন কেন্দ্র সাঁড়াঘাটে যাতায়াতের জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। সড়কটি দিয়ে বালুসহ বিভিন্ন মালপত্র বহনকারী ১০ চাকার ডাম্প ট্রাকসহ অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক চলাচলের কারণে প্রায়ই এখানে-ওখানে খানাখন্দ তৈরি হয়। এ কারণেই সম্প্রতি সড়কটি সংস্কারকাজ শেষের পর উপজেলা পরিষদের সামনে বারপোস্টটি স্থাপন করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, রেলগেট থেকে সিভিলহাট পর্যন্ত সড়কটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে সংস্কার করা হয়। গত কয়েক বছরে এখানে-ওখানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল জনসাধারণকে। মাস চারেক আগে রেলগেট থেকে চাঁনমারী হয়ে সিভিলহাট পর্যন্ত ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার শুরু করে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ডব্লিউএমএমসহ কার্পেটিং করে এই সংস্কারে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগে তাদের কাজ শেষ হয়। তিন-চারদিন আগে উপজেলা পরিষদের সামনে বারপোস্টটি স্থাপন করা হয়।
গতকাল রোববার ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণ সড়কটি মেরামত করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকের মনে ভিন্ন আশঙ্কাও রয়েছে। অটোরিকশাচালক মকবুল হোসেন বলেন, এবার উপজেলা সড়ক মেরামতের কাজ ভালো হয়েছে। কিন্তু ১০ চাকার ডাম্প ট্রাক চলাচল বন্ধ না করলে অল্পদিনের মধ্যে অবস্থা আগের মতোই হবে।
রিকশাচালক মো.
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, পদ্মানদীর সাঁড়াঘাট থেকে ট্রাকে করে বালু, মাটি আনা-নেওয়ার জন্য উপজেলা সড়ক ব্যবহার করা হয়। ৩০ থেকে ৩৫ টন ওজন নিয়ে ১০ ও ৬ চাকার ডাম্প ট্রাক যাতায়াত করে। অথচ এখান দিয়ে ১৫ থেকে ১৭ টনের বেশি মালপত্রবাহী যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সড়কটি সংস্কারের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই লোহার বারপোস্ট বসানো হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অসমাপ্ত আধা কিলোমিটারে দুর্ভোগ
১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের সাড়ে ১৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৫০০ মিটারের কাজ না করেই ঠিকাদার হাওয়া। এই ৫০০ মিটারই দুর্ভোগে ফেলেছে এলাকাবাসীকে। তারা ধুলায় একাকার হচ্ছেন। ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার টুঙ্গিপাড়া-ঘোনাপাড়া সড়কের চিত্র এটি। স্থানীয়রা দ্রুত এ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করে তাদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-নাজিরপুর-মাটিভাঙ্গা-পাটগাতী-ঘোনাপাড়া সড়কটি পিরোজপুর, নাজিরপুর, টুঙ্গিপাড়া, জিয়ানগর ভাণ্ডারিয়া উপজেলা থেকে ঢাকা-গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় যাতায়াতের সহজ পথ। এ সড়কের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতাল ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ডেন্টাল কলেজ, আঞ্চলিক ধান গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিআরটিসি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও বাস ডিপো, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টুঙ্গিপাড়া সরকারি কলেজ উল্লেখযোগ্য। তাই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির টুঙ্গিপাড়া থেকে ঘোনাপাড়া পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে চওড়া করার কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই সড়কের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায়। তার পরই এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল, পণ্য পরিবহন ও মানুষের যাতায়াতে ভীষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে হচ্ছে যানজট। ঘটছে দুর্ঘটনাও।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের ফোরকান আলী বলেন, সড়কটির প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার কাজ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলে গেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে ভোগান্তির শেষ নেই। কখনও কখনও যানজট, ধুলাবালির মধ্যে পড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে এখানে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। তাই তিনি দ্রুত এই আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানান।
পাটগাতী গ্রামের ভ্যানচালক রইচ বিশ্বাস বলেন, সড়কের সব জায়গা ভালো। কিন্তু গিমাডাঙ্গা থেকে পাটগাতী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। এখানে ভ্যান চালাতে গেলে প্রচুর ঝাঁকুনি হয়। এতে বয়স্ক যাত্রীর অসুবিধা হয়। মাঝেমধ্যে ভ্যানের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। ঘটে দুর্ঘটনা। এ সড়কের ৫০০ মিটার অংশটুকুর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সড়কটি খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু মাত্র আধা কিলোমিটারের কাজ বাকি রয়েছে। এই আধা কিলোমিটার অতিক্রম করার সময় ধুলাবালি ওড়ে। এতে পথচারী ও ছোট যানবাহনের যাত্রীদের কষ্ট হয়। এ ছাড়া বাসের জানালা বন্ধ করতে হয়। কখনও কখনও যানজটে আটকা পড়তে হয়। আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ সম্পন্ন করা হলে এলাকাবাসী দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
টুঙ্গিপাড়ার শ্রীরামকান্দি গ্রামের সাইফুল শেখ বলেন, যাতায়াত ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য পাটগাতী হাটে পরিবহনে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। তাই ওই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ ৫০০ মিটার এলাকার কাজ দ্রুত শুরু করে শেষ করার দাবি জানান তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর পরও ওই সড়কের ৫০০ মিটারের নির্মাণকাজের সব বাধা অপসারিত হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে ফান্ড ছাড় করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু হলে শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না।