আমন মৌসুমে চাল সরবরাহে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেনি জয়পুরহাটের ৬১ চালকল। এ কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে সরকারি দরের চেয়ে বাজারদর ছিল বেশি। লোকসানের আশঙ্কায় অনেক চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হননি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হয়নি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর শুরু হয়েছিল এ অভিযান। এ মৌসুমে ১৩ হাজার ৭৮৬ টন চাল ও ৪ হাজার ৮৩৯ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাল সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়। তবে ধান এসেছে ৩৫০ টন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জেলায় মোট ৩৬০টি নিবন্ধিত চালকলের মধ্যে ২১টি অটো চালকল রয়েছে। বাকি সব হাসকিং চালকল। সরকার আমন মৌসুমে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজিতে ধান, ৪৭ টাকা কেজিতে চাল কেনার দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি ছিল। যে কারণে কৃষক শুরু থেকেই খাদ্যগুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। নিবন্ধন রক্ষায় চালকলের মালিকরা নিশ্চিত লোকসান জেনেও গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। কৃষকরা বাজারের চেয়ে কম দামে সরকারকে ধান দিতে বাধ্য নন। 
আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় ৬১টি চালকল মালিক লোকসানের ভয়ে সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গত ১২ জানুয়ারির মধ্যে চাল সরবরাহে চুক্তির জন্য সময় বেঁধে দিয়ে এসব চালকল মালিককে ১ জানুয়ারি নোটিশ দেন। এর পরও তারা সাড়া দেননি।
চুক্তির বাইরে থাকা কালাই পৌর শহরের পাঁচশিরা এলাকার শাওন চালকলের মালিক কামরুল হাসান বলেন, ‘এবার চুক্তি করলে কেজিতে ৫-৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। তহবিলই গায়েব হতো। সব ভেবে এবার চাল সরবরাহের চুক্তি করিনি। শুনতে পাচ্ছি নিবন্ধন বাতিল করেছে, তো ভালো হয়েছে।’ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে তিনি বলেন, এখনও বিচ্ছিন্ন করেনি। নিবন্ধন যখন বাতিল করেছে, তখন বিদ্যুৎ সংযোগও বিছিন্ন করবে। দু’দিন আগে হোক আর পরে।
পাঁচশিরা বাজারের কৃষকবন্ধু চালকলের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার মিলের নামে বরাদ্দ করা ৯ দশমিক ১ টন চাল সরকারকে দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছিলাম। লোকসান জেনেও পুরো বরাদ্দের চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি।’ শুধু নিবন্ধন রক্ষার জন্যই তাঁকে লোকসান গুনে গুদামে চাল দিতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সরকারি এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুক্তির বাইরে থাকা কালাইয়ের সাদিক চালকলের মালিক আবু সাঈদ ফকির। তিনি গতকাল রোববার সমকালকে বলেন, ‘আসলে বলার কিছু নেই। চাল সরবরাহ করতে আমরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় নিবন্ধন বাতিল করেছে। আবার বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করবে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে।’
আবু সাঈদ ফকির আরও বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে মৌসুমের শুরু থেকেই বাজারে ধান-চালের দাম অনেক বেশি। আমরা কিনতে না পারলে সরকারকে সরবরাহ করব কোথা থেকে? এ বছর দিতে পারিনি, আগামীতে দেব। তাই বলে কি আমাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে?’
ধান সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সীমাবদ্ধতার কথা উঠে আসে কৃষক আফজাল হোসেনের কথা। পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর গ্রামের আফজাল বলেন, ‘গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এবার সরকারি গুদামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম অনেক বেশি। তাই সব ধান বাজারেই বিক্রি করেছি।’
জেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল বারীর মতে, লোকসান জেনেও সবাই ব্যবসা করতে চাইবে না। ৬১টি চালকলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে বলে শুনেছেন। এ ব্যাপারে করণীয় বিষয়ে সমিতিই সিদ্ধান্ত নেবে।
জয়পুরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো.

কামাল হোসেন বলেন, আমন মৌসুমে ৬১ জন চালকলের মালিক চাল সরবরাহের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেননি। মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী এসব চালকলের নিবন্ধন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও খাদ্যশস্যের নিবন্ধন ২১ মার্চ বাতিল করা হয়েছে। তালিকাও এসেছে। তাদের নিয়ে আর বলার কিছু নেই।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ ছ ন ন কর চ ল সরবর হ আমন ম স ম সরবর হ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মার্কিন ডলারের মান সর্বনিম্নে নেমেছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের জেরে মার্কিন ডলারের মান সর্বনিম্নে নেমেছে। শুক্রবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই মুদ্রার মান গত তিন বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ পতন হয়েছে।

বিশ্বে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সূচক (ডিএক্সওয়াই) ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার মার্কিন ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান সাধারণত ডলারের মানের ওপর নির্ভর করে।

মার্কিন ডলারের সূচকে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ডলারের মূল্য কমে ৯৯ দশমিক ০১-এ দাঁড়িয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে ডলারের মানের প্রায় ৮ শতাংশ পতনের রেকর্ড।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ডলারের মানের বেশি পতন ঘটেছে। ওই দিন বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আমদানি শুল্ক আরোপ করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের পর বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধস শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর আরোপিত এই শুল্ক আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।

বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয় আলাদা দুটি দেশের মুদ্রায়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ক্রয়। যার ফলে এক দেশের মুদ্রার মান আরেক দেশের মুদ্রার মানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যা ‘এক্সচেঞ্জ রেট’ নামে পরিচিত।

বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার মানই ওঠানামা করে। যার অর্থ চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিছ মুদ্রার মান স্থির। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার একটি নির্দিষ্ট দামে নির্ধারিত। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন ডলারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডলারের মান নির্দিষ্ট করা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়

এখন চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্য ওঠানামা করে। মুদ্রা শক্তিশালী হয় বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনে গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র
  • ধরা পড়ছে না ইলিশ, জেলেদের দিন কাটছে অর্থকষ্টে
  • আদানির সরবরাহ কমে লোডশেডিং বেড়েছে
  • পানি নেই ঝিরি-ঝরনায় সংকটে দুর্গম গ্রামবাসী
  • টেসলা কতটা ‘মেড ইন আমেরিকা’
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু
  • রাবির ‘বি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ‘সি’ ইউনিটের উত্তরপত্র
  • মার্কিন ডলারের মান সর্বনিম্নে নেমেছে
  • আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং বাড়তে পারে
  • গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত