ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, সেনাবাহিনীকে রাজনীতির কেন্দ্র বানানো এবং রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা কারও জন্যই কল্যাণকর হবে না। তারা নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকুক, রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোই রাজনীতি করুক।

আজ রোববার গাজীপুর মহানগরে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সম্মুখসারির বাহিনী। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের পেশাদারত্ব, দক্ষতা ও দেশপ্রেমে পরীক্ষিত বাহিনী। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানেও তার নজির দেশবাসী দেখেছে। ফলে সেনাবাহিনীকে রাজনীতির বিষয় বানানো এবং সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়, এমন কিছু করা দেশের জন্য কল্যাণকর হবে না।

দেশ আক্ষরিক অর্থেই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সরকার দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, দেশে একটা গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নড়বড়ে হয়ে আছে, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এলোমেলো হয়ে আছে। এই মুহূর্তে সবার কাছ থেকে দায়িত্বশীল, সতর্ক ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরণই দেশকে শুভ ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করতে পারে।

গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, অপরাধীদের বিচারের বিষয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ। তবে বিচারকাজে যে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে, তাতে মানুষের মধ্যে হতাশা জন্ম নিচ্ছে। তাই বিচারে গতিশীলতা আনতে হবে। দ্রুত সংস্কার শেষ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

ইসলামী আন্দোলনের গাজীপুর মহানগর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম সাইদুর রহমানসহ স্থানীয় নেতারা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন মুহাম্মাদ সাইদুল ইসলাম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী

পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’  নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।

তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।

নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।

শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।

বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।

শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।

পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।

মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ