সংরক্ষিত বন ও নদীঘেঁষে অবৈধ জালে মাছ নিধন
Published: 23rd, March 2025 GMT
সংরক্ষিত টেংরাগিরি বন সংলগ্ন পায়রা নদীর ৫০ কিলোমিটারজুড়ে অবৈধ চরঘেরা (চরগড়া) জালে অবাধে চলছে মাছ নিধন। বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে মাছ শিকারে সহায়তা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি বনাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে পটুয়াখালীর পায়রাকুঞ্জ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার জেলে পরিবারের বসবাস। পায়রা নদীর ওপর নির্ভর তাদের জীবন ও জীবিকা। মাছ ধরতে এ নদীর দু’পারে ছোট ফাঁসের চরঘেরা জাল ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই। জাল পাতার কাজে ব্যবহৃত খুঁটি সংগ্রহ করা হয় টেংরাগিরি ও গুলিশাখালীর সরকারি ছৈলার চরের বনাঞ্চলের গাছ কেটে।
জাল পাতার সবচেয়ে বড় স্পট তালতলীর জয়াল ভাঙ্গা, নলবুনিয়া, নিদ্রারচর, টেংরাগিরি ও পায়রার মোহনা। আমতলী উপজেলায় গুলিশাখালী চর, আঙুলকাটা, বালিয়াতলী ও পশুরবুনিয়া। শুক্র ও শনিবার গুলিশাখালী, আঙুলকাটা, বৈঠাকাটা, লোছা, বালিয়াতলী লোছাসহ নলবুনিয়া, টেংরাগিরিসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ১৫০ থেকে ২০০টি চরঘেরা জাল পাতা হয়েছে। একেকটি জাল ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট লম্বা।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জাল রাতেই বেশি পাতা হয়। জোয়ারের সময় জাল নদীর এক তীরে বসানো হয় বলে এই জালের নাম চরঘেরা। জালের প্রান্তে বাঁশ বা খুঁটি থাকে, সেগুলো ছয়-সাত ইঞ্চি মাটিতে পোঁতা থাকে। ভাটার সময় জাল টেনে তোলা হয়। হালকা ও মিহি বুননের হওয়ায় একবার কোনো মাছ জালে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এতে আইড়, পোয়া, তপসী, ইলিশসহ নানা প্রজাতির বড় মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে পোনাও। বাদ যায় না জলজ প্রজাতির কোনো জীব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলিশাখালীর এক জেলে জানান, গুলিশাখালীর জেলে নুরুল ইসলাম, ইউসুব প্যাদা, আবুল হোসেন, ইব্রাহিম প্যাদাসহ অর্ধশতাধিক জেলে রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত চরঘেরা জাল পেতে মাছ শিকার করছেন। মৎস্য বিভাগ মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। জেলেরা আগে থেকেই খবর পেয়ে যায়। এসব কারণে অবৈধ জালে মাছ ধরা বন্ধ হচ্ছে না। আর নির্বিচারে শিকার করায় পায়রা নদী এখন মাছশূন্য হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, জাল পাতার খুঁটির জন্য উজাড় করা হচ্ছে ছৈলার চর ও টেংরাগিরি বনের গাছ। টেংরাগিরি বনাঞ্চলের বনরক্ষী জহিরুল হক টাকার বিনিময়ে বনের গাছ কাটতে দেওয়ার পাশাপাশি বন সংলগ্ন নদীতে জেলেদের অবৈধ চরঘেরা জাল দিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দিচ্ছেন। তবে জহিরুল হক এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, বনের গাছ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা বন কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিশাখালীর ছৈলার চরটি নদীর মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় সব সময় যোগাযোগ করা যায় না। গাছ কাটার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, ছোট ফাঁসের চরঘেরা জালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। আগে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ করা হয়েছে। এলাকায় সোর্স লাগানো আছে। এই জাল পাতার খবর পাওয়া মাত্র আমারা সেখানে অভিযান পরিচালনা করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ছ ন ধন উপজ ল ত লতল
এছাড়াও পড়ুন:
পটুয়াখালীর আড়তে ইলিশের কেজি ২৫০০ টাকা
বাঙালির অন্যতম উৎসব বাংলা নববর্ষ। আর এ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ পান্তা-ইলিশ। এ উৎসব ঘিরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। দেশের বৃহৎ পটুয়াখালীর পাইকারি মাছ বাজার মহিপুর ও আলীপুরে ইলিশের দাম চড়া। এতে পাইকারি ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে সমুদ্রে মাছের অকাল থাকায় ইলিশের দাম অনেকটা বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা।
মহিপুর ও আলীপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই দুই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফাইস্যা, ছুড়ি, পোয়া, মটকা চিংড়ি, টোনা, তাপসী, কোরাল, চাপলি, পবদা ও টাইগার চিংড়ি, স্বল্প সংখ্যক বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ থাকলেও বাজার প্রায় ইলিশ শূন্য। যেখানে প্রতিনিয়ত টন টন ইলিশ বিক্রি হয়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি আড়তে ইলিশ মাছ দেখা গেল। তাও মাঝারি ও ছোট সাইজের ইলিশ। এ বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা কেজি দরে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে। আর ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
কলাপাড়া থেকে মহিপুর মাছ বাজারে আসা পাইকারি ক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘‘সকাল ৮টায় মহিপুরে এসেছি। এখন পর্যন্ত ইলিশ মাছ কিনতে পারিনি। এখানে নিলামের মাধ্যমে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ সব ইলিশ কিনে কত টাকায় বিক্রি করব?’’
আরো পড়ুন:
‘হাসিনার দোসররা ভোরে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে’
নববর্ষের দিন টিএসসি-শাহবাগ মেট্রো স্টেশন ‘সাময়িক বন্ধ থাকবে’
আমতলী থেকে আসা অপর পাইকারি ক্রেতা রিয়াজুল বলেন, ‘‘আজ এখানে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দাম চড়া থাকায় এক মণ ছুড়ি মাছ নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো বিকালে আমতলী বাজারে বিক্রি করব।’’
মহিপুর আড়তদার মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মাহতাব ফিসের স্বত্ত্বাধিকারী মাহতাব হাওলাদার জানান, বেশ কিছু দিন ধরে বৃষ্টি না থাকার কারণে জেলেদের জালে খুব কম পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে। যার কারণে বাজারে ইলিশের সংখ্যা খুবই কম। আর আজ একেবারে ইলিশ নেই বললেই চলে। যার কারণে দাম অনেকটা চড়া।
কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের সংখ্যা একটু কমেছে। এছাড়া এই উপকূলে অনেক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে না, যার ইলিশ কম ধরা পড়ছে এবং দামও বেশি। ১৫ এপ্রিল থেকে সমুদ্রে মাছ ধরার উপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার পর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এবং দামও অনেকটা কমবে।
ঢাকা/ইমরান/বকুল