আ. লীগের অর্থে পুষ্টরা এখনও গুজব ছড়াচ্ছে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
Published: 23rd, March 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের অর্থে পুষ্টরা এখনও গুজব-অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। তারা এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না।
রোববার বিকেলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ মিলনায়তনে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বিগত সময়ে প্রচুর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য প্রচার হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সময় যখন অর্থনীতি টালমাটাল হয়েছে তখন রাসেল ভাইপারের গল্প, ৫ আগস্টের পরে ডাকাত-ডাকাত বলে অপপ্রচার করে মানুষকে ভিন্নধারায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে। যাচাই না করে এসব প্রচার করেছে গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব সঠিক তথ্য তুলে ধরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে সমাজে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। কিছু সংবাদ শুধু ভিউ বাড়ানোর জন্য প্রকাশিত হয়। এতে প্রকৃত সত্য আড়ালে থেকে যায়।
‘অনেক মালিক ব্যবসা টেকাতে গণমাধ্যম গড়ে তুলেছেন’ মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, তাদের একটি অসৎ উদ্দেশ্য শুরু থেকে ছিল। ফলে বুঝতে হবে, কাদের কাছে প্রকৃত সত্য মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। তারা অনেককে লক্ষ্য করে। ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দ্বিধা তৈরি করে। বারবার বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য বানাতে চায়। দেশের অনেক গণমাধ্যম জুলাই অন্দোলন মেনে নেয়নি। তারা ৫ আগস্টের এক দিন আগেও ছাত্রদের পক্ষে সংবাদ প্রচার করেনি। এর পর এখন পাল্টে গেছে। তবে তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই। তারা এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপপ্রচার করতে সফল হচ্ছে। কারণ তাদের অনেক অর্থ আছে।
অনুষ্ঠানে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, বিগত সরকারের সময় প্রতিটি বিষয়ে ভুল বা বাড়ানো তথ্য দেওয়া হয়েছে।
যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অনেক টেলিভিশনের নামে সামাজিক মাধ্যমে পেজ খুলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা ব্যতিব্যস্ত থাকছি সেগুলো আমাদের নয়– সেটা প্রমাণ করতে।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, মূলধারার অনেক গণমাধ্যম বাধ্য হয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে গুরুত্ব হারিয়েছে। এরা এখন ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা ছড়াচ্ছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ইউল্যাবের অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এখনও পুড়ছে সুন্দরবন, দুই যুগে ২৭ বার আগুন
দুই যুগে ২৭ বারের মতো আগুন জ্বলছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা বন বিভাগকে জানান। রোববার সকালের মধ্যে ওই এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্য এলাকায় আবারও আগুন দেখা যায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় নতুন করে আগুন লেগেছে। বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা, কলমতেজি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় ছুটে আসেন। দুপুর একটা থেকে আগুন লাগা স্থানে ফায়ারলাইন তৈরি শুরু করেন তারা। নতুন করে আগুন লাগা এলাকায় ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছালেও পানি দিতে পারেনি। আগুন লাগার স্থান থেকে পানি উৎস অর্থাৎ খালের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এছাড়া ওই এলাকা সুন্দরবনে অভ্যন্তরে খুবই দুর্গম ও গাছপালায় জড়ানো থাকায় পানির সরবরাহের পাইপ টানতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ নিয়ে মোট পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন-সংলগ্ন ভোলা নদীর তীরে অবস্থান করছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, বনরক্ষীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাতভর কাজ শেষে আমরা কলমতেজি এলাকার আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। তবে নতুন করে যে আগুন লেগেছে সেখানে আমাদের বনরক্ষীরা পৌঁছেছে। ফায়ারলাইন তৈরিতে কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব পাম্পের মাধ্যমে পানি ছিটানো হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, অসাধু বন কর্মকর্তা-মাছ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, আইনের ফাঁকফোকর, মৌয়ালদের অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বারবার ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে পুড়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালাসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম। তিলে তিলে নিঃশেষ হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে আগলে রাখা এই বন। দুই যুগের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০০ একর বনভূমি।
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলে–মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে অন্তত ১৫ বার। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দাবদাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৪ বার, মাছ ধরার জন্য ৪ বার, আক্রোশবশত অগ্নিসংযোগের সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে ৪ বার। তবে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ বন বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ইচ্ছাকৃতভাবে গহিন বনে আগুন ধরিয়ে দেয় অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা। পরে বর্ষা মৌসুমে এসব স্থান প্লাবিত হলে নেট জাল দিয়ে সহজেই লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেন তারা।