বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর তীরসংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে এক নবজাতককে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাত ১১টার দিকে তোয়ালে মোড়ানো নবজাতককে পেয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে নেন স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন। বর্তমানে সে শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নবজাতকের মাথার পেছনের অংশে একটি টিউমার রয়েছে। পিঠ ও পায়ের গঠন দেখে তাদের ধারণা, বড় হলে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ কারণেই হয়তো নবজাতককে রাস্তায় ফেলে গেছে তার স্বজন!

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ জানান, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুটিকে সুস্থ করা সম্ভব বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ জন্য এক মাসের মধ্যে টিউমারটি অপসারণ করা জরুরি।

আপাতত নবজাতকের দায়িত্ব সমাজসেবা অধিদপ্তর নিয়েছে। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর অস্ত্রোপচারের জন্য রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে পাঠানো হবে। পূর্ণ সুস্থতা পেলে শিশু সদনে হস্তান্তর করা যাবে।

সাজ্জাদ পারভেজ আরও জানান, সমাজসেবার তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা সহায়তার বিধান রয়েছে। কিন্তু নবজাতকটির অস্ত্রোপচারে আরও অর্থ লাগবে। সে অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, নবজাতকটি উদ্ধারের সময় সেখানে একটি ঝুড়ি ও দুধ খাওয়ানোর একটি ফিডার পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, স্বজনই তাকে সেখানে ফেলে রেখে গেছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অভিভাবককে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

শেবাচিম হাসপাতালের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান শাহীন জানান, শিশু ওয়ার্ডে পরিচয়হীন নবজাতকের বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম

সন্তান জন্মদানের যে তারিখ চিকিৎসকরা দিয়েছিলেন, এর তিন রাত আগেই প্রসব ব্যথা শুরু হয় ময়না বেগমের। প্রথম দুই সন্তানের জন্মও হয়েছিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। সেলাইয়ের জায়গায়ও যন্ত্রণা বাড়তে থাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। তাই অস্ত্রোপচারে দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। অবশেষে সোমবার সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুরের আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ময়না। পহেলা বৈশাখের সকালে জন্ম বলেই দাদি-নানির সম্মতিতে এই শিশুর নাম রাখা হয় ‘পহেলা’।

ময়না বেগম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বদরপাশা গ্রামের খালেক আকনের মেয়ে। সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের চরপুটিয়া গ্রামের খবির উদ্দিন মোড়লের ইতালিপ্রবাসী ছেলে লুৎফর মোড়লের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় আট বছর আগে। লুৎফর-ময়না দম্পতির আগেই দুই ছেলেমেয়ে হয়। এদের মধ্যে আব্দুর রহমানের বয়স ৭, রুকাইয়া মোড়লের বয়স ৪ বছর। 

চিকিৎসাধীন ময়না জানান, তাঁর সন্তান প্রসবের জন্য ১৬ এপ্রিল দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ১৩ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে ব্যথা ওঠে। ৯ কিলোমিটার দূরের বাড়ি থেকে দ্রুত তাঁকে এনে ভর্তি করা হয় আচমত আলী খান সেন্ট্রাল হাসপাতালে। পহেলা বৈশাখের দিনে সন্তানের জন্ম দেবেন– এমনটি কল্পনায়ও ছিল না তাঁর। প্রথম দুই সন্তানও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম দেন তিনি। সেলাইয়ের দুটি জায়গায় রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বাড়তে থাকে। তাই বেশি দেরি করতে চাননি চিকিৎসকরা। 

প্রসূতি ময়নার ভাষ্য, স্বামী প্রবাসে। কিন্তু নিয়মিত খোঁজ রাখেন। প্রসব ব্যথা বাড়তে থাকায় তাঁর মনে শঙ্কা ভর করেছিল। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের আশ্বাস ও আন্তরিকতায় কিছুটা সাহস পান। সন্তান জন্মের পর নববর্ষের শুভেচ্ছা শুরুতে কেউ জানাননি। তবে এক স্বজন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর পর বিষয়টি বুঝতে পারেন।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অতিথিকে কোলে নিতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে হয় স্বজনদের। এদিনই দাদি-নানির সম্মতিতে শিশুটির নাম রাখা হয় ‘পহেলা’। জন্মের পরপর তার ওজন হয় দুই কেজি ৭০০ গ্রাম। গর্ভে থাকার সময় সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা চিন্তা ছিল ময়নার। তাই কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেননি। ময়না বলেন, দূর থেকে মানসিক সমর্থন জুগিয়েছেন প্রবাসী স্বামী লুৎফর। পাশাপাশি স্বজনরাও তাঁকে কোনো ভারী কাজ করতে দেননি। মেয়েকে তারা মাদ্রাসায় পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

হাসপাতালের ওটি ইনচার্জ রাজীব হোসেন বলেন, বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ। এমন দিনের সুন্দর সকালে শিশুটির জন্ম হয়েছে। নামও রাখা হয়েছে ‘পহেলা’। শিশুটির জীবনের দুটি আনন্দের স্মৃতিই মনে করিয়ে দেবে সমকাল। 

সোমবার সকাল ৯টার দিকেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কন্যাসন্তান আলো দেখে পৃথিবীর। এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বে ছিলেন ডা. মাহবুবা সুলতানা। তিনি বলেন, সুন্দরভাবে অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। মা ও মেয়ে সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে শিশুটির জন্ম, এটা খুবই আনন্দের। দুটি আনন্দ একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ হবে শিশুটি ও পরিবারের।

শিশুটি জন্মের পর আত্মীয়স্বজন বাহারি রঙের পোশাক নিয়ে এসেছেন। নববর্ষের প্রথম দিন ভাগনির মেয়ে হওয়ার সংবাদে ছুটে আসেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি সমকালের প্রজন্ম বরণের বিষয়টি শুনে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন। পরিবারের পক্ষ থেকেও ধন্যবাদ জানান। এই উদ্যোগকে ব্যতিক্রমী জানিয়ে প্রশংসা করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. আলী আকবর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দাদি-নানির সম্মতিতে ‘পহেলা’ নাম