পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এর আওতায় মহাসড়কে ঈদের আগে ও পরে মোট সাত দিন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ থাকবে। রোববার ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সাধারণত প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা মহানগর ছেড়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যান এবং প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় আসেন। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্য করতে ৯ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে– আগামী ২৫ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং ঈদ পরবর্তী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা। আবদুল্লাহপুর থেকে ধউর/আশুলিয়া সড়ক একমুখীকরণ ও বিআরটি লেন দিয়ে শুধু আউটগোয়িংয়ের যান চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৫ মার্চ থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিআরটি প্রকল্পের এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার গাড়ি চলাচল করবে। এ ছাড়া ঈদযাত্রা সংশ্লিষ্ট যানবাহন ছাড়া অন্য সব গাড়িকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কয়েকটি সড়কের নির্দিষ্ট কিছু অংশ এড়িয়ে চলার অনুরোধও করা হয়েছে। যেমন– ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এয়ারপোর্ট থেকে আবদুল্লাপুর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শ্যামলী থেকে গাবতলী, ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়কের ফুলবাড়িয়া থেকে তাঁতী বাজার হয়ে বাবুবাজার সেতু, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে বুড়িগঙ্গা সেতু, মোহাম্মদপুর বছিলা ক্রসিং থেকে বছিলা সেতু সড়ক ও আবদুল্লাপুর থেকে ধউর ব্রিজ সড়ক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এমপ

এছাড়াও পড়ুন:

বায়ুদূষণে ঢাকাকে ছাড়াল কোন ৩ শহর

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি (শ্বাসতন্ত্রের রোগ) মেডিসিন বিভাগে শয্যাসংখ্যা ৩৭। গতকাল সোমবার প্রতিটি শয্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন। রোগী আসলে ছিল ৯০–এর বেশি। কারণ, শয্যায় স্থান না হওয়ায় অনেক রোগী ওয়ার্ডের মেঝেতে আছেন। এ তথ্য জানালেন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আনিসুর রহমান। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক রোগীর শয্যার বিপরীতে আরও দুই রোগী রাখতে হচ্ছে। কারণ, শয্যাসংকট। দিন দিন শ্বাসকষ্টের রোগী বাড়ছে। শহরে যে দূষণ, তাতেই এ অবস্থা।’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগে সপ্তাহে দুই দিন রোগী দেখা হয়। চলতি মাসে রোগীসংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভাগ সূত্র জানাচ্ছে।

রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।অধ্যাপক আব্দুস সালাম, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

চলতি মার্চ মাসে (২৩ তারিখ পর্যন্ত) ময়মনসিংহের বায়ুদূষণ রাজধানী ঢাকার চেয়ে বেশি। দেশের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণ অনেক বেশি হয়। তবে এ মাসে ময়মনসিংহসহ রংপুর ও রাজশাহীর বায়ুর মানও ঢাকার চেয়ে খারাপ। চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত রাজশাহীর বাতাস। এ তথ্য খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরের। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক বলছিলেন, ‘ঢাকার বাইরে দূষণ বাড়ছে, এটা আমরা দেখছি। এটা কেন হচ্ছে, কিছু কারণও অনুমান করেছি। কিন্তু তারপরও এটা দুশ্চিন্তার বিষয়।’

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুর মান নির্ণয়ের জন্য নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করে। এর মধ্যে অনেক বেশি পরিচিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে। আছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এয়ার নাউ। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরও প্রায় নিয়মিত দিনভিত্তিক বায়ুমানের অবস্থা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। এর তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিদিন অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, ক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড এবং ওজোনের মান দেখে। দেশের ৩১টি স্টেশনের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এসব দূষণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান শুধু অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (জিএম ২.৫) মান দেখে। সে অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুর যে মান পর্যবেক্ষণ করে, তা আরও বিস্তৃত।

ঢাকার চেয়ে বেশি দূষণ ৩ নগরে

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫১ হলে তাকে ভালো বলা হয়। মান ৫১ থেকে ১০০ হলে বায়ুর মান মাঝারি। ১০১ থেকে ১৫০ বায়ুর মান সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকারক বলে গণ্য হয়। বায়ুর মানকে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয় যদি মান ১৫১ থেকে ২০০–এর মধ্যে থাকে। খুব অস্বাস্থ্যকর বায়ু বলা হয়, মান যখন ২০১ থেকে ৩০০–এর মধ্যে থাকে। আর ৩০০–এর বেশি মান হলে তা হয় দুর্যোগপূর্ণ। এ হিসাবে মার্চের ২৩ দিনের একদিনও ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুরের মানুষ নির্মল বায়ু পায়নি।

চলতি মাসের ২৩ দিনের মধ্যে চার দিন বাদ দিয়ে ১৯ দিনের দূষণ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সে চার নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল রাজশাহীতে—গড় মান ২০৩। এরপর ছিল ময়মনসিংহে—মান ১৯৮। উত্তরের আরেক নগর রংপুরের মান ছিল ১৮৭। চার নগরীর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম ছিল ঢাকার মান—১৭৮। দিনের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল ১২ মার্চ রংপুরে—৩২৩। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষণও ছিল এ শহরে ১১ মার্চ। এর মান ছিল ৩০৯। তৃতীয় সর্বোচ্চ দূষণ ছিল ১ মার্চ—রাজশাহীতে। এর মান ছিল ৩০৩।

ঢাকার বাইরে এত দূষণ কেন

ময়মনসিংহ শহরের রাস্তায় হাঁটলে একটি সাধারণ দৃশ্য প্রায় সর্বত্র চোখে পড়ে। তা হলো, রাস্তার পাশে ডাস্টবিন উপচে পড়ছে আবর্জনা। এসব পরিষ্কার করতে নগর কর্তৃপক্ষের তৎপরতা তেমন নেই বললেই চলে। নির্মাণকাজের ধুলাবালুতে আশপাশ প্রায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সেসব দেখারও তেমন কেউ নেই।

রংপুর শহরতলিতে ইটের ভাটা আছে অনেক। এগুলোর দূষণ প্রায় অনিয়ন্ত্রিত।

রাজধানীর বাইরে যানবাহন, কলকারখানা, বর্জ্য পোড়ানো, ইটভাটা ইত্যাদি দূষণের নানা উৎসের উপস্থিতি কম। তারপরও দূষণ এত বেশি কেন বিভাগীয় এসব শহরে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। রাজধানীর দূষণের উপাদানগুলো বাইরের শহরেও দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় উৎসগুলোর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে ইটভাটা, চালের কল এবং অপরিকল্পিত নির্মাণের কথা বলতে পারি।’

দেশের বায়ুদূষণের একটি বড় উপাদান আন্তসীমান্ত দূষিত বায়ুপ্রবাহ। যেটি ভারতের হরিয়ানা ও দিল্লি, পাকিস্তানের লাহোরের মতো অঞ্চল ঘুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বাংলাদেশে এর প্রবেশের পথ উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা রংপুর। তাই এখানে এবং রাজশাহীতে স্থানীয় উৎসের পাশাপাশি এই বায়ুপ্রবাহের দায় আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক সালাম। তিনি বলেন, আন্তসীমান্ত বায়ুকে কারণ দেখিয়ে অবশ্য স্থানীয় উৎসগুলোর নিয়ন্ত্রণ উপেক্ষিত হচ্ছে। এর দায় পরিবেশ অধিদপ্তর বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এড়াতে পারে না।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও ময়মনসিংহ]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে আত্মীয়ের জানাজায় যাওয়ার পথে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু
  • ঈদের কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী, প্রাণ হারালেন কাভার্ডভ্যান চাপায়
  • বায়ুদূষণে ঢাকাকে ছাড়াল কোন ৩ শহর
  • ময়মনসিংহে কারাফটক থেকে তৃতীয়বারের মতো গ্রেপ্তার সাবেক প্যানেল মেয়র
  • ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু 
  • নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী
  • টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ
  • ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুই স্থানে শ্রমিক বিক্ষোভ
  • শ্রীপুরে শ্রমিককে মারধরের জেরে দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ, পরে প্রত্যাহার