বোনের পর ভাইও হলেন ব্যাংক চেয়ারম্যান
Published: 23rd, March 2025 GMT
মিডল্যান্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আহসান খান চৌধুরী। তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এর আগে গত সপ্তাহে মেঘনা ব্যাংকের নতুন চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন উজমা চৌধুরী। তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক। তাঁরা দুজন সম্পর্কে ভাই–বোন। প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.
প্রয়াত আমজাদ খান চৌধুরী ১৯৮১ সালে ৪২ বছর বয়সে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে শুরু করেছিলেন ফাউন্ড্রি বা টিউবওয়েল তৈরি ও আবাসনের ব্যবসা। সম্বল ছিল পেনশনের টাকা। তবে আবাসন ব্যবসা তিনি বেশি দিন করেননি। আবাসন ব্যবসা বাদ দিয়ে ফাউন্ড্রির ব্যবসায় নজর বেশি দেন আমজাদ খান চৌধুরী। রংপুরে ফাউন্ড্রি প্রতিষ্ঠা করেন, নাম দেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)।
জানা যায়, ২০১৩ সালে মিডল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন আহসান খান চৌধুরী। মিডল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর নিয়ন্ত্রণে ছিল। সবশেষ তাঁর স্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লাহ ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি ব্যাংকের সভায় অনুপস্থিত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে ২০ মার্চ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ১৬৫তম সভায় আহসান খান চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। আহসান খান চৌধুরী মিডল্যান্ড ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আহসান খান চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্টবার্গ কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ১৯৯২ সালে পরিচালক হিসেবে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৩ সালে মেঘনা ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন উজমা চৌধুরী। তবে ব্যাংকটি শুরু থেকে আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত সপ্তাহে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ব্যাংকটি উজমা চৌধুরীকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের নিবন্ধিত সার্টিফায়েড পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিপিএ)।
উজমা চৌধুরী ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট ডালাস থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। দেশটির পেট্রোলিয়াম শিল্পে সাত বছরের বেশি সময় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। তিনি ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে প্রাণ–আরএফএল গ্রুপে ফিন্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ণ আরএফএল গ র প র আহস ন খ ন চ ধ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্কে আধিপত্য
বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের ভেতর দিয়ে একজন মানুষ বেড়ে ওঠে। প্রথমে সে আসে তার পরিবারের সান্নিধ্যে। ধীরে ধীরে সে তার আশপাশের পরিবেশ এবং চারপাশে আবর্তিত আপন মানুষগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে। তারপর শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব এবং নিজস্ব কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে সে বেড়ে উঠতে থাকে। তার মধ্যে বিরাজমান বৈশিষ্ট্য দিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় অনুশাসন ও হৃদয়ঘটিত সম্পর্কগুলো গড়ে তোলে। একসময় সে সম্পর্কগুলোতে আসে নানা ধরনের জটিলতা। আসতে পারে আধিপত্যের মতো নিচু মানসিকতারও প্রভাব। এতে সম্পর্কে নানা ধরনের তিক্ততা সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কে আধিপত্যের বিষয়টি নিয়ে কথা হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামালের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, আধিপত্য শব্দটিকে প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে। এটি একটি ডমিনেটিং ক্যারেক্টার। কিছু ব্যক্তিত্ব থাকে এ ধরনের। এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সে নিজেরটা সবচেয়ে বেশি বুঝবে। নিজের দম্ভ, অহংকার, দক্ষতা এবং নিজে যা বলবে তাই ঠিক মনে করে। তারা নিজের দোষ দেখে না।
সম্পর্ক বিষয় নিয়ে তিনি জানান, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাডজাস্ট করা, অ্যাডাপটেশন করা, অ্যাকসেপ্ট করা। আধিপত্যবাদী বা কর্তৃত্ববাদ চরিত্রে এই বৈশিষ্ট্য থাকা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, আধিপত্য সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি করে। এটি হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে এবং নানা সামাজিক ব্যক্তির সম্পর্কের ক্ষেত্রেও। একজন যদি কোনো সম্পর্কে আধিপত্য দেখাতে থাকে তাহলে অপর পক্ষের মানুষটি খুব আহত হন। তিনি বলেন, যে কোনো সম্পর্কে কোনো সমস্যা দেখা দিলে কথা বলতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে। অন্যের দোষ দেখা বন্ধ করে গুণাগুণগুলো দেখলে আধিপত্য অনেকটা কমে যাবে। সবকিছুতে একটা ডেমোক্রেটিভ ভিউ থাকতে হবে। ডা. মোহিত কামালের মতে, গণতান্ত্রিক মতামত বা অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যদি আমরা কাজ করি তাহলে পারিবারিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়টি আর জটিল আকার ধারণ করবে না।
আধিপত্য বা কর্তৃতবাদ বিষয়টি যাতে চরিত্রে ডেভেলপ না করে সে জন্য কিছু বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন মোহিত কামাল। তিনি বলেন, পরিবারে একটি শিশু যখন বোধের পর্যায়ে আসে তখন থেকে তার মতামত নেওয়া জরুরি। যেমন মা-বাবা তাঁর সন্তানকে বলতে পারেন আমরা তোমার জন্য একজন শিক্ষক রাখব, তোমার কোনো চয়েজ আছে কি? এ ধরনের মতামতে অংশ নিতে পারলে তার আত্মবিশ্বাসের লেভেল অনেক বেড়ে যাবে। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো ধারণা হবে। তার ভেতরে একটি আইডেনটিটি তৈরি হবে। বিশ্বাস বাড়বে। অন্যকে গুরুত্ব দিতে হয় সেটি সে পরিবার থেকে শিখবে।
এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, কাউকে নিচু করে দেখছে বা বিশ্বাস করতে পারছে না বলে সম্পর্কে ধীরে ধীরে আধিপত্য ঢুকে যাচ্ছে। মা-বাবার ডমিনেটিং প্যারেন্টিং ভবিষ্যতে একজন তরুণ-তরুণীকে কর্তৃত্ববাদিতার দিকে ঠেলে দেয়। পরিবারে মা-বাবা বলেন আমি যা বলব তাই চূড়ান্ত। তাই তোমাকে মেনে নিতে হবে। আমি ঠিক। আমার চেয়ে তুমি কি ভালো বোঝ? এ ধরনের আচরণ একজন ব্যক্তিকে চারিত্রিকভাবে দুর্বল করে তোলে।
ডা. মোহিত কামালের মতে, যখন একজন সন্তান বড় হচ্ছে তার যোগ্যতা কী? তার অদক্ষতা কী? তার ভুলগুলো কী? তাকে বুঝতে দিতে হবে। সে তখন থেকে অদক্ষ থাকলে দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবে। যোগ্যতাকে আরও শানিত করার চেষ্টা করবে। আইডেনটিটি নিজেই গড়ে তুলবে। তাহলে পরবর্তী সময়ে সে জীবন-সংগ্রামের চলার উপাদান পাবে।
মনে রাখবেন, আধিপত্য চরিত্রটি ধারণ করলে বন্ধু পাওয়া যাবে না, নিজে ভালো বন্ধু হতে পারবেন না। এ সমস্যা থাকলে তা দাম্পত্য জীবনেও প্রভাব ফেলে। কর্তৃত্ববাদ মনোভাব অন্যদের দমিয়ে রাখতে পছন্দ করে। v