সিলেটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ইফতার মাহফিলে হট্টগোল-হাতাহাতির ঘটনা মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পর তিনি জামিনে ছাড়া পান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি অংশের অভিযোগ, ইফতার মাহফিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও যুক্তদের যথাযথ সম্মান দেননি এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এমনকি ইফতার মাহফিল-পূর্ব সভায় কাউকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ছাত্রদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

গতকাল শনিবার সিলেটের আরামবাগের একটি কনভেনশন হলে এনসিপির উদ্যোগে ওই ইফতার মাহফিল হয়। এতে নবগঠিত দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভা চলাকালে হঠাৎ উভয় পক্ষের কয়েকজনকে তর্ক করতে দেখা যায়। এ সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ দৃশ্য ভিডিও করলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন আয়োজকদের কয়েকজন।

ঘটনার পর রাতে মাহবুবুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী সিলেট মহানগরের শাহপরান থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আজ রোববার ভোরে এ মামলার ৩ নম্বর আসামি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক আকতার হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে দুপুরে তিনি জামিন পান।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দায়িত্বশীল কাউকে বক্তব্যের কোনো সুযোগ না দেওয়া, বিভিন্ন উপজেলাভিত্তিক ইফতারের টেবিল সংরক্ষিত থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য কোনো টেবিল সংরক্ষিত না রাখাসহ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে হট্টগোল হয়। এ থেকেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

যোগাযোগ করা হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগরের আহ্বায়ক দিলোয়ার হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদের হাত ধরেই এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ ইফতার মাহফিলে সেই শিক্ষার্থীদেরই যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হয়নি। বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এ কারণে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ঝামেলা হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল হুদা জুনেদ ইফতার মাহফিলের আয়োজনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুক্ত শিক্ষার্থী, আহত ও শহীদ পরিবারসহ সবাইকে যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী নাম নিয়ে কয়েকজন হাতেগোনা ব্যক্তি অযথাই উৎশৃঙ্খল আচরণ করেছেন।

‘নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব’
এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনসহ কিছু সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিলেটে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা কয়েকজন। ধীরে ধীরে এ মতবিরোধ আরও বাড়ে। এরই জের ধরে এনসিপির ইফতার মাহফিলে হাতাহাতি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নানা মতাদর্শের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা যুক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কিছুদিন পর থেকেই নানা মত-পথের এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট মহানগরের কমিটির গঠনের পরই মূলত তাঁদের মধ্যে বিভক্তি ও মতবিরোধ বাড়ে।

গত ৫ ডিসেম্বর জেলায় এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি মহানগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি গঠিত হয়। এসব কমিটিতে অছাত্র, আন্দোলনে সম্পৃক্তহীন শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্তদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিবকে সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।

কমিটি নিয়ে বিভক্তি দেখে দিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আসাদুল্লাহ আল গালিব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগর কমিটি স্থগিত ঘোষণা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি জানান, কমিটিতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেক ভুল এসেছে। সবকিছু সংশোধন করে পুনরায় কমিটি প্রকাশ করা হবে।

একাধিক সূত্র জানায়, সিলেটে মহানগর কমিটি ঘোষণার পরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ আসাদুল্লাহ আল গালিবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন। এরপরই মূলত ভেতরে–ভেতরে শিক্ষার্থীদের মতবিরোধ ও অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়ে। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ হওয়া রাজনৈতিক দল এনসিপিতে গালিব উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠকের দায়িত্ব পান।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে আসাদুল্লাহ আল গালিবের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট মহানগরের আহ্বায়ক দিলোয়ার হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্তর্দ্বন্দ্ব কিংবা মতবিরোধের কারণে ইফতার মাহফিলে হট্টগোল কিংবা বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেনি। যথাযথ সম্মান না পাওয়ার কারণেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ঘটনা এতটুকুই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মতব র ধ এনস প র র কম ট র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন, উচ্ছ্বসিত চার লাখ বাসিন্দা

উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দেশের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছানোই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। সেই সন্দ্বীপ থেকে এবার বাস ছুটবে ঢাকা-চট্টগ্রামের পথে। ফেরিতে চেপে সাগর পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের। আজ সোমবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলো ফেরি চলাচল। ফেরি সার্ভিস চালুর মধ্য দিয়ে সন্দ্বীপে যাত্রীবাহী ও মালামালবাহী যানবাহন চলাচলও শুরু হয়েছে। ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনে সাতজন উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার দুজন বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন।

চারপাশে জলরাশিঘেরা সন্দ্বীপ মাত্র ৭৫০ বর্গকিলোমিটারের একটুকরা ভূখণ্ড। এ অঞ্চলের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার যাতায়াতব্যবস্থার জন্য রয়েছে কুমিরা-গুপ্তছড়াসহ ছয়টি নৌপথ। একটিমাত্র যাত্রীবাহী জাহাজে মানুষ যাতায়াত করতেন এত দিন। পাশাপাশি স্পিডবোট, কাঠের ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার হতো। ঘটত অনেক দুর্ঘটনা। ছিল কাদা মাড়িয়ে হাঁটার দুর্ভোগ। ফেরি চালু হওয়ায় এসব দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেল সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।

যেভাবে উদ্বোধন হলো

আজ সকাল সোয়া আটটার পর সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পৌঁছায় উপদেষ্টাদের গাড়িবহর। শুরুতেই জেটি ঘাট-১–এ বিআরটিসি বাসের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এরপর বাসে উঠে ঘুরে দেখেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এরপর ফেরিঘাট উদ্বোধন করেন তিনি। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। সকাল ৯টায় উপদেষ্টাদের নিয়ে সীতাকুণ্ড থেকে ফেরি ছাড়ে। সকাল ১০টায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে ফেরি পৌঁছানোর পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁদের স্বাগত জানান। ফেরি থেকে নেমে গুপ্তছড়া ঘাটের নামফলক উন্মোচন করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

এ সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধন রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।

সন্দ্বীপের ফেরি চলাচল উদ্বোধন করছেন উপদেষ্টারা। আজ সকালে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মা হলেন আথিয়া, নানা সুনীল শেঠি
  • তামিম এখন কেমন আছেন
  • ‘আমার ভাই যেন সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে পারে’, তামিমকে নিয়ে সাকিব
  • হাসপাতালে তামিম, মোহামেডানের জয় ছাপিয়ে প্রশ্ন, খেলা বন্ধ হলো না ক
  • ব্যক্তিগত ছবি ফাঁসের হুমকি, ভীত-সন্ত্রস্ত ইরানি এই অভিনেত্রী
  • ব্যক্তিগত ছবি ফাঁসের হুমকি, ভীত অভিনেত্রী
  • জ্ঞান ফিরেছে তামিমের, কথাও বলছেন
  • বাবাকে ‘হত্যার’ পর ছেলের মৃত্যু
  • চিকিৎসক জানালেন, তামিমের জটিলতা এখনো কাটেনি
  • সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন, উচ্ছ্বসিত চার লাখ বাসিন্দা