রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ, রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়; আল্লাহ বলেন, “সে আমার উদ্দেশ্যে তার পানাহার ও প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করেছে, রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান। পুণ্যকর্মের প্রতিদান দশগুণ।”’ (বুখারি, হাদিস: ১,৮৯৪)

ভিন্ন শব্দে একই হাদিস আছে এভাবে, ‘রোজাদারের আনন্দের মুহূর্ত দুটি—ইফতারের সময়, আরেকটি হলো যখন সে প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। নিশ্চয় তার মুখের দুর্গন্ধ মেশকের সুগন্ধি থেকেও আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয়। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৫১)

 এর অর্থ কিন্তু এই নয় যে রোজাদার মুখ অপরিষ্কার রাখবেন। বরং রোজাদারের উচিত নিজেকে আল্লাহর সন্নিধানে পেশ করার জন্য পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকা। যাদের মুখ থেকে কোনো কারণে দুর্গন্ধ বের হয়, তারা অবশ্যই রমজান মাসে এই বিষয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যাতে তার মুখের দুর্গন্ধের কারণে অন্য রোজাদারের কষ্ট না হয় এবং রোজার ও রোজাদারের অসম্মান না হয়।

আরও পড়ুনমক্কার খাবার পানির সমস্যা দূর করেছিল নহরে জুবাইদা১৬ মার্চ ২০২৫

অনেকে বলেন যে রোজা থাকা অবস্থায় মুখ পরিষ্কার করা এবং মেসওয়াক করা মাকরুহ। রমজানে রাসুলের (সা.

)-এর জীবন যাপন পদ্ধতি সম্পর্কে তারা যথাযথভাবে ওয়াকিবহাল নন। কেননা রাসুল (সা.) রোজা রেখেও মেসওয়াক করতে ভুলতেন না। তিনি মুখের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে যত্নবান ছিলেন। আমের বিন রাবিয়া (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বহুবার রোজার অবস্থায় মেসওয়াক করতে দেখেছি। (তিরমিজি, হাদিস: ৭২৫)

 এমনিতেও তিনি মেসওয়াকের প্রতি অশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। হাদিসে আছে, ‘মেসওয়াক মুখ পবিত্র করে এবং প্রভুর সন্তুষ্টি আনে।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘মেসওয়াকের ব্যাপারে আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি একসময় আমার মনে হয়েছিল যে এ ব্যাপারে আমার ওপর কোরআন কিংবা ওহি নাজিল হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩, ৭ ও ২২)

বোঝাই যায় যে রাসুল (সা.) রোজায় দিনের যেকোনো সময় মেসওয়াক করতেন, সকাল বা সন্ধ্যার পার্থক্য করতেন না। হাদিসে আছে, ‘আমার উম্মতের ওপর যদি বিষয়টি কঠিন না হতো, তবে প্রতি অজুর সময় তাদের জন্য মেসওয়াক আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৯,৯৩০)

আরও পড়ুনরমজানে নবীজির (সা.) সফর হলে১৭ মার্চ ২০২৫

অন্য হাদিসে আছে, ‘মুমিনদের কষ্টকর না হলে প্রতি নামাজের সময় তাদের জন্য মেসওয়াক করা আবশ্যক করে দিতাম।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫২)

 খ্যাতিমান হাদিস বিশারদ ইবনে আব্দুল বার বলেন, ‘এ-হাদিস প্রমাণ করে, যেকোনো সময় মেসওয়াক বৈধ। হাদিস দুটিতে রাসুল (সা.) ‘প্রতি ওজুকালে’ এবং ‘প্রতি নামাজকালে’ বাক্যাংশ দুটি ব্যবহার করেছেন। নামাজ নির্দিষ্ট একটি সময়ে নয়, বরং ওয়াজিব হয় দ্বিপ্রহর, বিকেল ও রাতের নানা সময়ে।’ (আত-তামহিদ , ৭/১৯৮)

 এই হাদিসের ভাষ্যে ইমাম বোখারির উক্তি হলো, ‘রোজাদারকে এ হুকুমের আওতা-বহির্ভূত করা হয়নি।’

ইবনে খুযাইমা বলেন, ‘হাদিসে প্রমাণ হয় স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তির জন্য যেভাবে প্রতি নামাজের সময় মেসওয়াক করা ফজিলতের বিষয়, তেমনিভাবে ফজিলতের বিষয় রোজাদারের জন্যও। সুন্নতের অনুসারীগণের অবশ্য কর্তব্য বিষয়টির প্রতি যত্নশীল হওয়া।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ৩/২৪৭)

মেশকের সুঘ্রাণের চেয়েও আল্লাহর নিকট রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ অধিক প্রিয়—হাদিসটির অর্থ হচ্ছে, রোজা রাখার কারণে পেট খালি থাকায় অনেক সময় এক ধরনের গন্ধ অনুভব হয়। রোজাদারের মুখের এই গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েই উত্তম, ভালো ও প্রিয়। কারণ, এই গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে তার ইবাদত পালন ও আল্লাহ তাআলার হুকুমের অনুসরণের ফলে। সুতরাং রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করাকে পূর্বসূরি আলেম দূষণীয় মনে করেননি।

তবে কেউ কেউ কাঁচা ডাল দিয়ে মেসওয়াক করা এবং দিবস শেষে মেসওয়াক করাকে মাকরুহ মনে করেছেন। যদিও ভেজা ও শুকনা মেসওয়াকের মধ্যে রাসুল (সা.) পার্থক্য করেছেন—এমন প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইবনে সিরিনের (রহ.) কাছে কেউ এমন ভেজা মেসওয়াকের প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘এতে কোনো অসুবিধা নেই, এটা কেবল খেজুরের ডাল, এর স্বাদ রয়েছে। যেমন স্বাদ রয়েছে পানির, অথচ তা দিয়ে তুমি কুলি কর।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯১৭১)

ইবনে উলায়া বলেন, ‘রোজাদার কিংবা পানাহারকারী—উভয়ের জন্যই মেসওয়াক করা সুন্নত। মেসওয়াক শুকনা হোক কিংবা ভেজা—দুটোই সমান।’ (আত-তামহিদ, ৭/১৯৯)

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধ: ইতিহাসের বাঁক বদলের ঘটনা১৭ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম সওয় ক র অবস থ য় কর ছ ন র জন য আল ল হ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে। 

এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।

অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়। 

আরো পড়ুন:

কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ

৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।

অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’

পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।

আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”

আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ