রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলাম বদলির পরেও দপ্তর ছাড়ছিলেন না। আজ রোববার দুপুরে তিনি কার্যালয়ে ছিলেন। তখন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও সেচ শাখার প্রধান জাহাঙ্গীর আলম খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা–কর্মচারী তাঁর দপ্তরে যান। দু–একজন তাঁকে চেয়ার থেকে ওঠাতে গেলে শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছেড়ে দেন।

এ সময় চেয়ার ফাঁকা পেয়ে কোনো অফিস আদেশ ছাড়াই চেয়ারে বসে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম খান। যদিও তাঁর পর্যায়ের আরও দুই কর্মকর্তা যোগ্য ছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, ওই দুজন গত ১৫ বছরে সুবিধা নিয়েছেন। তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। এই পর্যায়ে তিনি বসতেই পারেন।

শফিকুল ইসলাম সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব। গত বছরের জুলাইয়ে তাঁকে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ–১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়। তবে সেখানে না গিয়ে এক মাস ধরে তিনি বিএমডিএতেই ছিলেন।

কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অভিযোগ, বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের সুপারিশে তিনি বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন। তিনি এখনো আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছিলেন। বদলির আদেশের পরও তিনি নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বিএমডিএর রাজশাহী অঞ্চলের প্রধান হিসেবে পদায়ন করেন। নাজিরুল ইসলাম ২৫১ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের পরিচালক (পিডি)। আওয়ামীপন্থী এই কর্মকর্তা গত সরকারের আমলেই দুই প্রকল্পের পিডি হন। ইডির বদলির আদেশের পরও তিনি নতুন কর্মস্থলে না গিয়ে নাজিরুল ইসলামকে প্রধান করে পদায়ন করলে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা–কর্মচারীদের তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুরে ইডি তাঁর কার্যালয়ে ছিলেন। তখন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানসহ কিছু কর্মকর্তা–কর্মচারী তাঁর দপ্তরে যান। তাঁরা আজকের মধ্যে তাঁকে দপ্তর ছেড়ে রেশম বোর্ডে যোগদান করতে বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে শফিকুল ইসলামের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। দু–একজন তাঁকে চেয়ার থেকে ওঠাতেও এগিয়ে যান। তখন শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব ছাড়তে রাজি হন। পরে তিনি জাহাঙ্গীর আলম খানকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। দায়িত্ব অর্পণ ও গ্রহণ–সংক্রান্ত এক নথিতে শফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম খান স্বাক্ষর করেন। পরে শফিকুল ইসলাম বেরিয়ে গেলে তাঁর চেয়ারে বসেন জাহাঙ্গীর আলম। আরও দুই জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এই চেয়ারে বসার যোগ্য ছিলেন। তাঁদের টপকে তিনি চেয়ারে বসেন।

বিকেলে মুঠোফোনে জাহাঙ্গীর আলম খান দায়িত্ব গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। অফিস আদেশ জারি হওয়ার আগেই কীভাবে চেয়ারে বসলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিস আদেশ জারি হয়ে যাবে।’ দুই কর্মকর্তাকে টপকে ইডির চেয়ারে বসার ব্যাপারে বলেন, তাঁরা দুজন আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে নানা সুবিধা নিয়েছেন। তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। এখনকার পরিস্থিতিতে তিনি এই সুবিধা পেতেই পারেন। তা ছাড়া ওই দুই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে একই দিনে যোগদান করেছেন। তিনজনের চাকরির বয়স সমান।

এ বিষয়ে কথা বলতে শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। বিএমডিএর চেয়ারম্যান এম আসাদুজ্জামান দপ্তরে ছিলেন না। তিনিও ফোন ধরেননি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর কর্মকর্তা নন। তাঁকে অন্য দপ্তর থেকে সরকার এখানে পদায়ন করেছিল। তিনি বদলির আদেশের পরও এক মাস ধরে দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর বদলির আদেশের পরও তিনি জোনের প্রধান করার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে সই করেন। এতে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা গিয়ে তাঁকে আজই দপ্তর ছাড়তে অনুরোধ করলে তিনি সেই কথা রাখেন।

অফিস আদেশের আগেই জাহাঙ্গীর আলম খানের চেয়ার দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা দখল নয়। কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বিএমডিএর নিজস্ব কর্মকর্তা। এই পদে বাইরের কর্মকর্তা না থেকে নিজেদের কর্মকর্তা থাকলে কাজ ভালো হয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম খ ন ক ল ইসল ম ব ই কর মকর ত ব এমড এ সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুরে সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরীর সহযোগী কাউসার গ্রেপ্তার

ফরিদুপুরে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কাউসার আকন্দকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা তসলিম প্রামাণিক (৩০) নামের একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি মহল্লার ঝিলটুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কাউসার ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কাউসার আকন্দ ফরিদপুর শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার তালতলা এলাকার বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী দুলাল আকন্দের ছেলে।

কোতোয়ালি থানা–পুলিশ জানায়, ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন কাউসার। গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকরের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

কাউসার আকন্দের বাড়ি ফরিদপুর সদর হলেও তিনি ভাঙ্গায় গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। ফরিদপুর-৪ আসনের এলাকাভুক্ত বিভিন্ন সভা–সমাবেশে তাঁকে দেখা যেত। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ভাঙ্গা এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ছিল।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল তরফদার বলেন, কাউসারকে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ওই দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ