বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গুলি করে মারছে ইসরায়েল
Published: 23rd, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামলার মুখে একাধিকবার বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজাবাসী। খান ইউনুসসহ উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে নতুন করে হামলায় আরও একবার বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকিতে পড়েছেন তারা। এমনকি এলাকা ছাড়তে চাওয়া নারী-পুরুষ ও শিশুদের লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হচ্ছে। এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। খবর আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
দক্ষিণ রাফায় ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ এলাকা ছাড়তে চাওয়া নারী, পুরুষ ও শিশুদের একটি দলের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এতে কয়েকজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি আহত হন। পরিবার নিয়ে তাল আস-সুলতান ছেড়ে যাওয়া স্থানীয় সাংবাদিক মুস্তাফা গাবের বলেন, এটি আগুনের কবলে পড়ে বাস্তুচ্যুতি। ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক ও ড্রোনের গুলির মুখে পালানো ছাড়া বাঁচার কোনো পথ নেই। আবার পালিয়ে যাওয়ার সময়ও হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি খুবই কঠিন।
এদিকে রোববার বিকেল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দখলদার দেশটির হামলায় অন্তত ৪১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে গতকাল গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের একটি বড় অংশই নারী ও শিশু। অর্ধ লাখ এ সংখ্যার মধ্যে ১৭ হাজারই শিশু। এটি খুবই ভয়াবহ একটি মাইলফলক। কত স্বপ্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করা মানুষগুলো এখন আর নেই। যদিও নিহতের এ সংখ্যাটি কেবল গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকগুলোয় নিবন্ধিত ব্যক্তি। আরও অনেক লোক নিবন্ধিত না হয়ে সমাহিত হয়েছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন। অনেক মানুষের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলেও ধারণা করা হয়।
খান ইউনিসে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রোববারের এ হামলায় হামাসের রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্য বারদাউইলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও নিহত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে হামাস বারদাউইলের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। বারদাউইল ও তাঁর স্ত্রী খান ইউনিসে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রের তাঁবুতে নামাজ পড়ার সময় ইসরায়েলি একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে আঘাত হানে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে হামাস বলেছে, বারদাউইল, তাঁর স্ত্রীর ও শহীদদের রক্ত স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াইয়ে ইন্ধন জোগাতে থাকবে। অপরাধী শত্রুরা আমাদের ইচ্ছা ও সংকল্প ভাঙতে পারবে না। বারদাউইল ও তাঁর স্ত্রীর নিহত হওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি বলে জানায় রয়টার্স।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির দাবি এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতরপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। শনিবার রাতে তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে ১ লাখের বেশি মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন।
বিক্ষোভে উপস্থিত ৬৩ বছর বয়সী মোশে হাহারোনি বলেন, ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রুর নাম বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় আছেন এবং এই ২০ বছরে একবারও দেশের কথা, দেশের নাগরিকদের কথা তিনি চিন্তা করেননি।
সম্প্রতি শিন বেতেরপ্রধান হিসেবে রোনেন বারকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন নেতানিয়াহু। এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন বিরোধী রাজনীতিকরা। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করার জন্য তিনি ইসরায়েলের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা শুরু করেছেন। তবে শুক্রবার ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রেনেন বারকে শিন বেতের শীর্ষ পদ থেকে বহিষ্কারে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে। ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হোদেইদা বিমানবন্দরে তিনটি এবং লোহিত সাগরের আস-সালিফ বন্দরে আরেকটি আক্রমণ চালিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য ইসর য় ল র র জন ত ক ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ভ্যানে এলাকায় ঘুরলেন সারজিস আলম
পঞ্চগড় সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার ভ্যানে করে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের রাখালদেবী, বামনকুমার, বালিয়া, লক্ষ্মীত্থানসহ বিভিন্ন গ্রামে যান। এ সময় বাড়ি ও খেতখামারে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর প্রথমবারের মতো গতকাল সোমবার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে আসেন সারজিস আলম। প্রথমে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। সারজিস আলমের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে সারজিস আলমের এই ‘শোডাউন’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সারজিস আলম গতকাল আটোয়ারী উপজেলার আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার সহস্রাধিক মানুষের সঙ্গে ইফতার করেন। অনুষ্ঠানের ব্যানারে উল্লেখ করা হয়, ইফতার মাহফিলটি জাতীয় নাগরিক পার্টির আটোয়ারী উপজেলার আয়োজনে করা হয়েছে। তবে এনসিপির আটোয়ারী উপজেলায় এখনো কোনো কমিটি হয়নি।
আজ সকালে সারজিস আলম ভ্যানে চড়ে নিজ বাড়ির আশপাশের গ্রামে যান। দুপুরে সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে গ্রামে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং ছবি পোস্ট করেছেন।
আরও পড়ুনউড়োজাহাজ থেকে নেমে শতাধিক গাড়িসহ ‘শোডাউন’ দিয়ে নিজ এলাকায় সারজিস আলম২১ ঘণ্টা আগেফেসবুকে ছবি পোস্ট করে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘জীবনের প্রথম ১৭ বছর এই মাটি ও মানুষের সাথে থেকে বেড়ে উঠেছি। এখানেই যেন চিরপ্রশান্তি। সরু আইল দিয়ে হেঁটে চলা, মাচায় বসে গল্প করা, ভ্যানে করে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাওয়া, এগুলো যেন আমাদের চিরচেনা গল্প। এই গল্পগুলো শুনতে, শোনাতে এবং বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আরও পড়ুনহামরা কাজ করিবা পারিলে ভোট দিবেন, নাহিলে দিবেননি : সারজিস আলম২৪ মার্চ ২০২৫ফসলের খেতে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন সারজিস আলম। আজ মঙ্গলবার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নে