মাগুরায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। আজ রোববার বেলা একটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই তরুণের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ‘মাগুরা জেলার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিল চলার সময় এক তরুণ মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন তাঁকে ধাওয়া করেন। কিছুক্ষণ পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের এলাকায় তাঁকে আটক করেন বিক্ষোভকারীরা। পরে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ ঘটনার পর বেলা দুইটার দিকে সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকে একটি নীল রঙের মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। মোটরসাইকেলটি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া ওই তরুণের বলে দাবি বিক্ষোভকারীদের।

সদর থানা সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের হেফাজতে থাকা ওই তরুণের নাম ইউসুফ (২০)। তিনি সদর উপজেলার জুইতারা গ্রামের আহমদ হোসেনের ছেলে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। তিনি এখন পুলিশের হেফাজতে আছেন। তিনি ৪ ও ৫ আগস্ট মাগুরায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ বিক্ষুব্ধ লোকজনের। এখন যাচাই-বাছাই করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে এসি ল্যান্ডের পোস্ট, তোপের মুখে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট দেওয়ার জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনীরা কায়ছানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে তাঁকে সরাইল থেকে প্রত্যাহার করা হয়।

আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এর আগে ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ওই কর্মকর্তা। এরপর পুলিশি প্রহরায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

গত বছরের ২০ অক্টোবর সরাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন সিরাজুম মুনীরা কায়ছান। আজ সকালে ফেসবুকে ‘এসি ল্যান্ড সরাইল’ নামের সরকারি আইডি থেকে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম গণহত্যা চালায়। সেদিন রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন। এরপর শুরু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়। কিন্তু এর ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ২৬ মার্চেই। তাই এই দিনটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, সংগ্রামের চেতনা এবং আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল।’

ওই পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সকাল পৌনে আটটার দিকে তিনি সরাইলের অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে বিএনপির নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে পুলিশি পাহারায় অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। মাঠ থেকে ফিরে তিনি আগের পোস্টটি মুছে দিয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘ফেসবুক আইডিটি সাময়িক সময়ের জন্য হ্যাকড হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বিতর্কিত স্ক্রিনশট ছড়ানো হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনভিপ্রেত।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী কমিশনার দায়িত্বশীল পদে থেকে এমনটি করতে পারেন না। তিনি ফেসবুকে আপত্তিকর কথা লিখেছেন। তাঁরা তাঁর বিচার ও প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। শুনেছেন তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা ওই কর্মকর্তার বিচার চান।

জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার সিরাজুম মুনীরা কায়ছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আইডিটা অনেক আগেই খোলা হয়েছে। এটি আজকে হ্যাকড হয়েছিল। আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছি।’

সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, তাঁকে (সহকারী কমিশনার) দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যোগদান করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো লিখিত পাননি। তবে মুঠোফোনে বিষয়গুলো জেনেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ