বৈশ্বিক বিনিয়োগের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫
Published: 23rd, March 2025 GMT
আগামী ৭-১০ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে।
সামিটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা।
রবিবার (২৩ মার্চ) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরি জানান, ইতিমধ্যেই ৫০টি দেশের ২,৩০০-এর বেশি বিনিয়োগকারী নিবন্ধন করেছেন, যার মধ্যে ৫৫০ জনের বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছেন। শীর্ষ নিবন্ধিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সিঙ্গাপুর এবং জাপান।
সামিটে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন জারা গ্রুপের সিইও অস্কার গার্সিয়া মেসেইরাস, ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম, ব্রিটিশ ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, স্যামসাং সি অ্যান্ড টি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিয়ংসু লি, গিওর্দানো’র সিইও জুনসিওক হান, এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট স্টিভেন কোবোস, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উবারের পাবলিক পলিসি প্রধান মাইক অর্গিল এবং মেটার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর সারিম আজিজ।
এছাড়া বি ক্যাপিটাল, গবি, কনজাংশন, মারুবেনি এবং জি এফ আর এর মতো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্টআপ বিনিয়োগ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে কাজ করবে।
সামিটের অংশ হিসেবে, ৭ এপ্রিল দক্ষিণ কোরিয়ার ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রাম, মিরসরাই ও কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করবেন। একই দিনে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্টার্টআপ সংযোগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ৮ এপ্রিল, বিনিয়োগকারীরা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (BSEZ) পরিদর্শন করবেন। দিন শেষে একটি বিশেষ নেটওয়ার্কিং অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
৯ এপ্রিল, সামিটের মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে, উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড.
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত, নীতি-নির্ধারক এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এই দিন তরুণ উদ্যোক্তা এক্সপো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনডিপি আয়োজিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ে ব্রেকআউট সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় একটি বিশেষ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হবে।
১০ এপ্রিল, সামিটে বিভিন্ন ব্রেকআউট সেশন অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতি (সিটি এনএ ও ইউএনডিপি), টেক্সটাইল (এইচএসবিসি ও বিজিএমইএ), কৃষি ও কৃষি-প্রক্রিয়াজাতকরণ (ডাচ দূতাবাস ও এলসিপি), এবং স্বাস্থ্য সেবা (ইন্সপিরা, ইবিএল ও সাজিদা ফাউন্ডেশন)-এর ওপর আলোচনা হবে।
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য ম্যাচমেকিং সেশন এবং সেরা বিনিয়োগ চর্চা নিয়ে রাউন্ড-টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
সামিটের অংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ মিটিং রুম বরাদ্দ থাকবে, যার মধ্যে বোর্ডরুম, লাউঞ্জ, মধুমতি ও তুরাগ কনফারেন্স হল এবং হোটেলের দ্বিতীয় তলায় নেটওয়ার্কিং স্পেস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সামিটের পার্টনার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউএনডিপি, এফসিডিও গ্রামীণফোন, বিশ্বব্যাংক ও ফিকি, যারা যৌথভাবে এফডিআই বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী এখনও বাংলাদেশের প্রকৃত বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন নন। এই সামিটের মাধ্যমে আমরা তাদের বাংলাদেশের সম্ভাবনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত করতে চাই।”
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫ দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হতে যাচ্ছে। বিস্তারিত তথ্য ও নিবন্ধনের জন্য আগ্রহীরা সম্মেলনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক’ কি শুধু পুরুষেরই অপরাধ
ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদন হওয়া খসড়া অনুযায়ী ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবৈধ যৌন সম্পর্ক’কে ধর্ষণের সংজ্ঞায় রাখা হয়নি। এটি আইনে আলাদা ধারায় চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হবে সাত বছরের কারাদণ্ড। (প্রথম আলো অনলাইন, ২০ মার্চ ২০২৫)
বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বিয়ে ছাড়া ১৬ বছরের বেশি বয়সী নারীর ক্ষেত্রে প্রতারণামূলকভাবে তাঁর সম্মতি আদায় করে যৌন সংগম করাকে ধর্ষণ হিসেবে বলা হয়েছে। এর ফলে বহু মামলায় বিয়ের ‘প্রতিশ্রুতি’ বা ‘প্রলোভনে’ ধর্ষণ, এ রকম অভিযোগের উল্লেখ দেখা যায়।
অনুমোদিত খসড়া অনুযায়ী ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে অবৈধ যৌন সম্পর্ক’কে ধর্ষণের সংজ্ঞায় না রাখার বিষয়টি এক অর্থে ‘ইতিবাচক’। কিন্তু এর পরও অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।
আগে ‘প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়ের’ কথা বলা হলেও সংশোধিত খসড়া অধ্যাদেশে সুনির্দিষ্টভাবে ‘বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক’কে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কী করলে প্রকৃত অর্থে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, তার সুস্পস্ট কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। কেউ বিয়ের কথা বলে যৌন সম্পর্ক করার সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধ সংঘটিত হবে, নাকি পরবর্তী সময়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি পালন না করলে অপরাধ হবে? অর্থাৎ অপরাধকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিশোধপরায়ণ কেউ এ আইনের অপব্যবহার করতে পারেন। কেউ কেউ এ রকম ধারায় মামলা করে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারেন। এর ফলে মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, মামলাবাণিজ্যও হতে পারে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখালেই তিনি শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বেন—এই ধরনের চিন্তা বা অনুমান খুবই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। এ দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন নারীকে ‘লোভী’ বা ‘নির্বোধ’ হিসেবে দেখা হয়, যিনি কোনো পুরুষের প্রলোভনে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পরেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর পুরুষ সঙ্গীটির সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
সম্মতির ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক নারী–পুরষের শারীরিক সম্পর্কে ‘কন্ট্রিবিউটরি পার্টিসিপেশন’ থাকে। তাহলে শুধু এক পক্ষকে শাস্তি দেওয়া ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। অনেক ক্ষেত্রে নারীরাও প্রেম বা সম্পর্ক ভেঙে দেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর প্রাক্তন কি একইভাবে সেই নারীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন? খসড়া অধ্যাদেশে এ রকম কোনো কিছুর সুযোগ নেই। তাহলে আইনের এ ধারাটা কি বৈষম্যমূলক হচ্ছে না?
‘বিয়ের প্রলোভনে যৌন সম্পর্ক’কে- অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হলে ‘ব্লাকমেলিং’ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিশোধপরায়ণ কেউ এ আইনের অপব্যবহার করতে পারেন। কেউ কেউ এ রকম ধারায় মামলা করে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারেন। এর ফলে মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, মামলাবাণিজ্যও হতে পারে।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া বা তা রক্ষা করা একটি নৈতিক এবং সামাজিক বিষয় হতে পারে, কিন্তু শুধু প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়। সম্পর্কের টানাপোড়েন, ব্যক্তিগত মতপার্থক্য বা পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে অনেক সময়ই কারও পক্ষে বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা সম্ভব না–ও হতে পারে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় না রেখেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা সমাজ ও রাষ্ট্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ইশরাত হাসান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী