এখনও পুড়ছে সুন্দরবন, দুই যুগে ২৭ বার আগুন
Published: 23rd, March 2025 GMT
দুই যুগে ২৭ বারের মতো আগুন জ্বলছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। শনিবার সকালে কলমতেজী টহল ফাঁড়ি-সংলগ্ন এলাকায় আগুনের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা বন বিভাগকে জানান। রোববার সকালের মধ্যে ওই এলাকার আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও অন্য এলাকায় আবারও আগুন দেখা যায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় নতুন করে আগুন লেগেছে। বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা, কলমতেজি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একুশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় ছুটে আসেন। দুপুর একটা থেকে আগুন লাগা স্থানে ফায়ারলাইন তৈরি শুরু করেন তারা। নতুন করে আগুন লাগা এলাকায় ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছালেও পানি দিতে পারেনি। আগুন লাগার স্থান থেকে পানি উৎস অর্থাৎ খালের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এছাড়া ওই এলাকা সুন্দরবনে অভ্যন্তরে খুবই দুর্গম ও গাছপালায় জড়ানো থাকায় পানির সরবরাহের পাইপ টানতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) সাকরিয়া হায়দার বলেন, বাগেরহাট, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ নিয়ে মোট পাঁচটি ইউনিট সুন্দরবন-সংলগ্ন ভোলা নদীর তীরে অবস্থান করছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, বনরক্ষীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রাতভর কাজ শেষে আমরা কলমতেজি এলাকার আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। তবে নতুন করে যে আগুন লেগেছে সেখানে আমাদের বনরক্ষীরা পৌঁছেছে। ফায়ারলাইন তৈরিতে কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব পাম্পের মাধ্যমে পানি ছিটানো হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়া, অসাধু বন কর্মকর্তা-মাছ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, আইনের ফাঁকফোকর, মৌয়ালদের অদক্ষতাসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনে বারবার ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে পুড়েছে বিস্তীর্ণ বনভূমির গাছপালাসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম। তিলে তিলে নিঃশেষ হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষকে আগলে রাখা এই বন। দুই যুগের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১০০ একর বনভূমি।
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জেলে–মৌয়ালদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে অন্তত ১৫ বার। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দাবদাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৪ বার, মাছ ধরার জন্য ৪ বার, আক্রোশবশত অগ্নিসংযোগের সম্ভাবনার উল্লেখ রয়েছে ৪ বার। তবে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ বন বিভাগের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ইচ্ছাকৃতভাবে গহিন বনে আগুন ধরিয়ে দেয় অসাধু মাছ ব্যবসায়ীরা। পরে বর্ষা মৌসুমে এসব স্থান প্লাবিত হলে নেট জাল দিয়ে সহজেই লাখ টাকার মাছ ধরতে পারেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন আগ ন স ন দরবন বন ব ভ গ এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। রোববার সকালে বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সন্ধ্যার দিকে চলে গেলেও শনিবার রাত ৯টা থেকে বন বিভাগের নিজস্ব পাম্প ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগুনে পানি দেওয়া হয়। বনরক্ষী ও বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্থানীয় অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রাতভর আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। আগুন এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
রোববার সকাল আটটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। নিয়ন্ত্রণে আসা আবারও আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিনা তা যাচাই করছেন বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও করণীয় জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে ধোঁয়া দেখতে পান স্থানীয়রা। দুপুরের দিকে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে বন বিভাগ। বিকেলের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট।
ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে বনের মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ফায়ার লাইন (শুকনো পাতা, মাটি সরিয়ে নালা) তৈরি করে। রাত হয়ে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অভিযান শেষ করে চলে যান। তবে, বন বিভাগ নিজস্ব ব্যবস্থায় আগুন নেভানোর কাজ করে। বন বিভাগের সঙ্গে যোগ দেন অর্ধশতাধিক স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক।