মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনিপুরী পাড়ার তাঁতিরা। তবে আগের মতো চাহিদা না থাকায় লাভের আশা কমে গেছে। তবুও তাদের ঐতিহ্যের শিল্পকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এ শিল্পের কারিগররা।

মনিপুরী তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘‘টেকনোশিয়ানরা সিন্ডিকেট করে আমাদের হাতেবুনা শিল্পের ধস নামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের হাতে চলে যাচ্ছে আমাদের আদি শিল্প। এখন আসল মনিপুরী শাড়ি কপি করা হচ্ছে।’’

মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪ থেকে ১৫টি গ্রামে মনিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এরসঙ্গে ১৫ হাজার মুসলিম মনিপুরীদের বসবাস রয়েছে এখানে। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক ঋণ সহজ করায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এখন সবার ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁত মেশিন সচল রয়েছে। প্রতি পরিবারের নারীরা মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাঁত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের কিস্তি দিয়ে বাকি টাকায় সংসার চালান তারা।

রবিবার (২৩ মার্চ) কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরী অধ্যুষিত এলাকার কান্দিগাও, মাঝের গাও, বন্দরগাও, ঘোড়ামারা, আলীনগর ও মধাবপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব বাড়িতে মনিপুরী নারীরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ঈদকে সামনে রেখে তাঁতের শাড়ি বুনতে ব্যস্ত রয়েছেন।

কথা হয় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌমিতার সঙ্গে। তিনি বলন, ‘‘এক সময় আমাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসত তাঁতশিল্প থেকে। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের নিপুণ কারিগর মনিপুরী নারীরা অনেকটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ২০০০ সালের শুরুতে মনিপুরী তাঁতের শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাড়াঁয় এ শিল্প।’’

এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লুবনা আক্তার বলেন, ‘‘আমি বাণিজ্যিকভাবে তাঁতের শাড়ি তৈরির জন্য ৫০টি তাঁত মেশিন স্থাপন করেছি। ২৫টি সচল রয়েছে। সুতার দাম বৃদ্ধি, মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।’’

বন্দরগাঁও গ্রামের সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘‘এখন মনিপুরী পাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁতের মেশিন আছে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়। ঈদকে সামনে রেখে আমরা মুসলিম মনিপুরীরা ব্যস্ত সময় পার করছি। প্রতিটি শাড়ি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব।’’

মাঝের গাঁও গ্রামের সুনীতি সিং বলেন, ‘‘শাড়ি কম বিক্রি হচ্ছে। এখন বাজারে মনিপুরী শাড়ির কপি চলে এসেছে। এতে আসল মনিপুরী শাড়ির কদর কমে গেছে।’’

ভানুবিল কমিনিটি ব্যাজ ট্যুরিজমের উদ্যোক্তা নারায়ণ সিং জানান, আসল মনিপুরী শাড়ি বুনুনকারীদের হাত থেকে টেকনোশিয়ানদের হাতে গিয়ে কপি হচ্ছে। এতে মনিপুরী শাড়ির দাম ও মান কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হরেন্দ্র সিং ও তিলকপুর গ্রামের সাখাওয়াত মিয়া বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয়ভাবে শাড়ি সংগ্রহ করে বিভিন্ন মহাজনদের কাছে সরবরাহ করি। কিন্ত সিজনের সময় তারা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। পর্যটকদের কাছে মনিপুরী শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীরা ভাগ বসিয়ে দেয়। এতে শাড়ি বুননকারীরা লোকসানে পড়েন। আসল মনিপুরী শাড়ি কিনতে হলে মনিপুরীদের হাত থেকে কেনা উচিত।’’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘‘মনিপুরী শাড়ি কমলগঞ্জের ঐতিহ্য। এটা ধরে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে আমি তাদের সহযোগিতা করব।’’

ঢাকা/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কমলগঞ জ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে মনিপুরী তাঁতিদের 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় ঈদকে সামনে রেখে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মনিপুরী পাড়ার তাঁতিরা। তবে আগের মতো চাহিদা না থাকায় লাভের আশা কমে গেছে। তবুও তাদের ঐতিহ্যের শিল্পকে ধরে রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এ শিল্পের কারিগররা।

মনিপুরী তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘‘টেকনোশিয়ানরা সিন্ডিকেট করে আমাদের হাতেবুনা শিল্পের ধস নামানোর চেষ্টা করছেন। তাদের হাতে চলে যাচ্ছে আমাদের আদি শিল্প। এখন আসল মনিপুরী শাড়ি কপি করা হচ্ছে।’’

মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪ থেকে ১৫টি গ্রামে মনিপুরী সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এরসঙ্গে ১৫ হাজার মুসলিম মনিপুরীদের বসবাস রয়েছে এখানে। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক ঋণ সহজ করায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এখন সবার ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁত মেশিন সচল রয়েছে। প্রতি পরিবারের নারীরা মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন। এই আয়ের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাঁত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণের কিস্তি দিয়ে বাকি টাকায় সংসার চালান তারা।

রবিবার (২৩ মার্চ) কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরী অধ্যুষিত এলাকার কান্দিগাও, মাঝের গাও, বন্দরগাও, ঘোড়ামারা, আলীনগর ও মধাবপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব বাড়িতে মনিপুরী নারীরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ঈদকে সামনে রেখে তাঁতের শাড়ি বুনতে ব্যস্ত রয়েছেন।

কথা হয় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌমিতার সঙ্গে। তিনি বলন, ‘‘এক সময় আমাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসত তাঁতশিল্প থেকে। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের নিপুণ কারিগর মনিপুরী নারীরা অনেকটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ২০০০ সালের শুরুতে মনিপুরী তাঁতের শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাড়াঁয় এ শিল্প।’’

এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত লুবনা আক্তার বলেন, ‘‘আমি বাণিজ্যিকভাবে তাঁতের শাড়ি তৈরির জন্য ৫০টি তাঁত মেশিন স্থাপন করেছি। ২৫টি সচল রয়েছে। সুতার দাম বৃদ্ধি, মজুরির খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে।’’

বন্দরগাঁও গ্রামের সুফিয়া আক্তার বলেন, ‘‘এখন মনিপুরী পাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁতের মেশিন আছে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২-৩ দিনের মধ্যে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়। ঈদকে সামনে রেখে আমরা মুসলিম মনিপুরীরা ব্যস্ত সময় পার করছি। প্রতিটি শাড়ি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করব।’’

মাঝের গাঁও গ্রামের সুনীতি সিং বলেন, ‘‘শাড়ি কম বিক্রি হচ্ছে। এখন বাজারে মনিপুরী শাড়ির কপি চলে এসেছে। এতে আসল মনিপুরী শাড়ির কদর কমে গেছে।’’

ভানুবিল কমিনিটি ব্যাজ ট্যুরিজমের উদ্যোক্তা নারায়ণ সিং জানান, আসল মনিপুরী শাড়ি বুনুনকারীদের হাত থেকে টেকনোশিয়ানদের হাতে গিয়ে কপি হচ্ছে। এতে মনিপুরী শাড়ির দাম ও মান কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হরেন্দ্র সিং ও তিলকপুর গ্রামের সাখাওয়াত মিয়া বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয়ভাবে শাড়ি সংগ্রহ করে বিভিন্ন মহাজনদের কাছে সরবরাহ করি। কিন্ত সিজনের সময় তারা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে দেয়। পর্যটকদের কাছে মনিপুরী শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীরা ভাগ বসিয়ে দেয়। এতে শাড়ি বুননকারীরা লোকসানে পড়েন। আসল মনিপুরী শাড়ি কিনতে হলে মনিপুরীদের হাত থেকে কেনা উচিত।’’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘‘মনিপুরী শাড়ি কমলগঞ্জের ঐতিহ্য। এটা ধরে রাখার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে আমি তাদের সহযোগিতা করব।’’

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ