ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সাভারে ট্যানারি শ্রমিকদের বিক্ষোভ, লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
Published: 23rd, March 2025 GMT
ট্যানারিশিল্পের শ্রমিকদের জন্য পাঁচটি গ্রেডে সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হওয়ার বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শ্রমিকেরা। ঢাকার সাভারের হেমায়েতপুরের হরিণধরায় চামড়াশিল্প নগরে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে আজ রোববার শ্রমিকেরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। সমাবেশ থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়িত না হলে ঈদের পর কর্মবিরতিসহ লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা ১১টার দিকে চামড়াশিল্প নগর বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা সেখানে সমাবেশ করেন। সমাবেশে ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকসহ বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
শ্রমিক রঞ্জু মিয়া বলেন, সরকার ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করছে, কিন্তু মালিকেরা সেই মজুরি দিচ্ছেন না। তাঁরা কোনো ধরনের ভাঙচুর কিংবা সড়ক অবরোধ করতে চান না। ট্যানারি বন্ধ থাকুক, সেটাও চান না। বর্তমানে যে টাকা বেতন পান, সেটা দিয়ে চলা সম্ভব নয়। ন্যূনতম মজুরি যেটা সরকার ঘোষণা করছে, সেটি ন্যায়সংগতভাবে পূরণ করার দাবি জানান তিনি।
শ্রমিক মো.
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গত বছরের ২১ নভেম্বর ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে সরকার। ২১ নভেম্বর থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো সেটি কার্যকর হয়নি।
সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন এই শিল্পের স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে সব দাবি আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এ শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা মালিক, শ্রমিক, সরকার সবার দায়িত্ব। আমরা লক্ষ করেছি, ট্যানারির মালিকদের অধিকাংশই সরকারঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে ইচ্ছুক। কিছু মালিক আছেন, তাঁরা এটি মানতে চাচ্ছেন না। তাঁরা ভুল পথে গিয়ে কারও প্ররোচনায় এই শিল্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে, এর দায় তাঁদেরই নিতে হবে।’
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘কারও কারও ব্যবসা ভালো চলছে না। বিভিন্ন অজুহাতে কারখানা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। তাঁরা শ্রমিক অসন্তোষের দোষ দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেউলিয়া হওয়ার পাঁয়তারা করছেন—এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ সুযোগ আমরা তাঁদের দেব না। এ ছাড়া কোরবানির ঈদে শ্রমিকেরা ছুটি পান না। তাই ঈদুল ফিতরে পরিবারের সঙ্গে যেন শ্রমিকেরা কাটাতে পারেন এবং মজুরি প্রদানে আন্তরিক কারখানাগুলোকে ঈদের আগে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে আমরা কর্মসূচি করছি। দাবি আদায় না হলে ঈদের পর শ্রমিকদের নিয়ে বসে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী, ট্যানারিশিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের নতুন মজুরিকাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে আছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশারম্যান, বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক। বিভাগীয় শহর ও সাভারে এই গ্রেডের শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, যা ২০১৮ সালে ছিল ২৫ হাজার ৪০০ টাকা। বিভাগীয় শহর ও সাভার এলাকার ট্যানারি শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি বাড়িয়ে দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা; তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার ২ টাকা ও চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা করা হয়েছে। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকেরা রয়েছেন সর্বশেষ বা পঞ্চম গ্রেডে। এই গ্রেডের নিম্নতম মজুরি বিভাগীয় শহর ও সাভারে ১৮ হাজার ১ টাকা ও অন্যান্য এলাকায় ১৭ হাজার ৪৮ টাকা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কলমাকান্দায় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মুদি দোকানি গ্রেপ্তার
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় মাদ্রাসাপড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগে মোজাম্মেল হোসেন (৫৫) নামে এক মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ মোজাম্মেল হোসেনকে আদালতে পাঠিয়েছে।
মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মোজাম্মেল হোসেনকে আসামি করে কলমাকান্দা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সে মামলাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার মোজাম্মেল উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের দক্ষিণ চৈতানগর গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি সকালে ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফি দেওয়ার জন্য তার বাবার কাছ থেকে ১৩০ টাকা নেয়। মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মোজাম্মেল হোসেনের দোকান থেকে ১০ টাকার একটি কলম কিনে মনের ভুলে বাকী টাকা দোকানে ফেলে রেখে চলে যায়। কিছুসময় পর ফেলে আসা টাকা আনতে পুনরায় মোজাম্মেলের দোকানে যায় ওই শিক্ষার্থী। এসময় মোজাম্মেল বলেন, দোকানে টাকা নেই। বাড়ি গিয়ে তার স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আনতে। পরে সে মোজাম্মেলের বাড়িতে টাকা আনতে যায়। এসময় মোজাম্মেল ওই শিক্ষার্থীর পিছু নেন। সে ঘরে প্রবেশ করতেই মোজাম্মেল ঘরের দরজা বন্ধ করে হাত-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগ রয়েছে, ১৭ ও ১৯ জানুয়ারি চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে পুনরায় ওই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন মোজাম্মেল। আর এ ঘটনাটি কাউকে বললে ওই শিক্ষার্থীকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলেও ভয় দেখান মোজাম্মেল। এরপর থেকে ওই শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় যেতে রাজি হচ্ছিল না। কেন সে মাদ্রাসায় যেতে চায় না এর কারণ তার মা জানতে চাইলে কয়েকদিন পর বিষয়টি সে খুলে বলে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে কলমাকান্দা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন সমকালকে জানান, মঙ্গলবার সকালে এক শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে মোজাম্মেল হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পরপরই মোজাম্মেল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে দুপুরে নেত্রকোনা আদালতে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।