‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না’- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দুই শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন দলটির আরেক শীর্ষ নেতা আবদুল হান্নান মাসুদ। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ গত ২০ মার্চ দিবাগত রাত ১টা ৪৪ মিনিটে ফের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘১১ মার্চ দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’

হাসনাতের বক্তব্য নিয়ে আজ রোববার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষয়টি কিছুটা ভুলভাবে এসেছে বলে জানান সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন সারজিস আলম। সেখানে মন্তব্য করেন হান্নান মাসুদ। কমেন্টে তিনি লিখেন, ‘এসব কি ভাই!! পাবলিকলিই বলছি- দুইজনের একজন মিথ্যে বলছেন। এটা চলতে পারে না। আর দলের গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট হোল্ড করেও আপনারা যেভাবে ব্যক্তিগতভাবে বিচরণ করছেন এবং তা পাবলিক করে এনসিপিকেই বিতর্কিত করছেন।’

হান্নান মাসুদ আরও লেখেন, ‘মানুষ এনসিপিকে নিয়ে যখন স্বপ্ন বুনছে, তখন এভাবে এনসিপিকে বিতর্কিত করার কাদের এজেন্ডা!!!’

‘সরি, আর চুপ থাকতে পারলাম না।’- এমন কমেন্টস করেন এনসিপির আরেক শীর্ষ নেতা।


এদিকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল, কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে ২২ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। সেদিন রাত ৮টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

সেখানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, নির্বাচন বা একটি রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কি পারবে না, এটি সম্পূর্ণই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল সরকার, বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্রের এমন কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আসলে এ বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত উপস্থাপনা দেওয়ার কোনো ধরনের এখতিয়ার নেই।’’

এর আগে ২০ মার্চ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা তার সরকারের নেই।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যে আলোচনাটি হয়েছে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক। সেটি হচ্ছে আমরা মনে করছি, রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।’ তিনি বলেন, ‘রাজনীতি রাজনীতিবিদেরাই নির্ধারণ করবেন—রাজনীতির ঘটনাপ্রবাহ বা চলমান যা কিছুই, পরবর্তী রাজনীতি কোন দিকে যাবে, সেটি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। তো সে জায়গায় আমরা সন্দিহান বলেই গতকাল আমার স্ট্যাটাস দিতে হয়েছে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্যে বিএনপির অবস্থানের এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ ফিরলে, তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।

তবে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বিষয়টি নিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না।’ তিনি লিখেন, ‘আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওপেন করার কোনই অবকাশ নেই।’

বিচারের প্রসঙ্গ এনে জামায়াতে আমির লিখেছেন, এ সময় জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়। এর বাহিরে অন্য কিছু ভাবার কোনও সুযোগ নেই।

জামায়াতের আমিরের বক্তব্য এনসিপি’র হাসনাত আব্দুল্লাহর অবস্থানকে সমর্থন করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প র জন ত ক ফ সব ক আবদ ল এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে: তারেক রহমান

সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘কয়েক দিন আগেও আমরা দেখেছি, সংস্কার এবং নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে, ঠিক একইভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।’

আজ সোমবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে আয়োজিত বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এ কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।

নতুন করে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকতে আমাদের সহায়তা করবেন। আমরা দেখেছি, অতীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে এবং বিগত ১৬-১৭ বছরের গণতান্ত্রিক উত্তরণের লড়াইয়ে যাঁরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের ত্যাগ যেন বৃথা না যায়, তা নিয়ে কাজ করি।’ তিনি সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি সূক্ষ্মভাবে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

বিএনপির পক্ষ থেকে উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘সে সময়ে যেভাবে সাংবাদিকেরা আমাদের পাশে ছিলেন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশের পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা।’ আগামী দিনেও তিনি সাংবাদিকদের বিএনপির পাশে থাকার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবারও দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিএনপির বিরুদ্ধে এখনো নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) অতীতেও আমাদের জন্য কাজ করেছেন। আগামী দিনেও বিএনপির বিরুদ্ধে এসব প্রচারের বিরুদ্ধে আপনারা সত্য তথ্য তুলে কাজ করবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এবং মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের গ্রিনল্যান্ড সফর ঘিরে বিতর্ক
  • সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সচিবদের নির্দেশনা দিলেন অর্থ উপদেষ্টা
  • সংস্কার এজেন্ডা উচ্চাভিলাষী হলেও প্রয়োজনীয়: নাহিদ ইসলাম
  • সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা হচ্ছে: তারেক রহমান
  • সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করানোর চেষ্টা হচ্ছে: তারেক রহমান
  • ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করব: হাসনাত আব্দুল্লাহ
  • গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমিক আকাঙ্ক্ষা: সমাজ ও সংস্কৃতিতে শ্রমিক সুরত
  • আরেকটি এক-এগারো কখনো হতে দেব না: নাহিদ ইসলাম
  • আরেকটি এক-এগারো আনার পরিকল্পনা হচ্ছে: রাশেদ খান