সাকিব আল হাসান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পরিকল্পনা মতো অবসর নিতে পারেননি। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলে টেস্ট ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তবে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে দেশে আসতে পারেননি তিনি। 

ভারতে অনুষ্ঠিত ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় ঘোষণা দিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন। ওই সময় বোলিং অ্যাকশন ক্রুটিযুক্ত হওয়ায় বিসিবি তাকে গত মাসের ওই টুর্নামেন্টের দলে রাখেনি। 

অভিযোগ আছে, সাকিবকে দলে না নেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণ মূখ্য। যদিও বিসিবির প্রধান নির্বাচক বলেছিলেন, শুধু ব্যাটার সাকিবের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা নেই। যে কারণে তাকে দলে নেওয়া হয়নি। 

বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যম ক্রিকবাজকে সাকিব জানিয়েছেন, বিসিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত, ‘আমার কোন অভিযোগ নেই (বিসিবির প্রতি)। তবে যোগাযোগটা ঠিকঠাক হলে আমি বেশি খুশি হতাম।’ 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি তিনি ইংল্যান্ডে তৃতীয়বার বোলিং অ্যাকশনের পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। যে কোন ধরনের ক্রিকেটে বোলিং করতে তার আর বাধা নেই। সাকিবের পরিকল্পনা দ্রুতই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ফেরা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ক ব আল হ স ন

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্মৃতিচারণায় আরেফিন সিদ্দিককে স্মরণ

সদ্য প্রয়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর স্মৃতিচারণায় তাঁকে স্মরণ করা হলো তাঁকে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (ডিইউএমসিজেএ)।

স্মরণসভায় অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিভিন্ন স্মৃতির কথা বলেন তাঁর বিভাগের (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা) বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। এ সময় অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ছোট ভাই আতিক উল্লাহ সিদ্দিক, তাঁর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ৬ মার্চ ইফতার কেনার জন্য ঢাকা ক্লাবে (রমনায়) গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার মধ্যেই পড়ে যান এই শিক্ষক। তাঁকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর পর অধ্যাপক আরেফিনকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে তিনি সেখানে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

স্মরণসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার বিভাগের শিক্ষক শারমিন আহমেদ বলেন, ‘স্যারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত স্যারের জন্য তাঁর শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা ছিল। অনেকেই স্যারের সমালোচনা করেন, অথচ অনেকেই স্যারকে দেখেননি। স্যারের শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ছিল। স্যারকে আল্লাহ বেহেশত নসিব করুন।’

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উপপরিচালক মো. আবদুল মান্নান বলেন, তিনি অনেক মানুষের উপকার করেছেন। আবার অসংখ্য মানুষ তাঁকে কষ্ট দিয়েছেন। ওনার প্রাপ্তির কোনো আশা ছিল না, উনি শুধু দিয়ে গেছেন।

সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে নিয়ে আর‌ও বড় পরিসরে আলোচনা ও কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার বলেন, ‘আমি অ্যালামনাইয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্যারের কাছে পরামর্শ নিতে গেলাম। তিনি বললেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনের জন্য আমরা আছি। কিন্তু আপনারা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন, যারা অর্থনীতির ঝুঁকির মধ্যে থাকে।” আমরা স্যারের নেতৃত্বে সেই কাজটাই শুরু করেছিলাম। আমরা এই জায়গায় আসতে পারতাম না স্যারের আশীর্বাদ ছাড়া।’

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের ছোট ভাই আতিক উল্লাহ সিদ্দিক ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে বড় ভাই পাখি ধরতেন। এরপর ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন, আমরা দৌড়াচ্ছি। আমরা সিরাজগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আসতাম। আমি আর ভাই জানালা দিয়ে দৃশ্য দেখে দেখে ঢাকায় আসতাম। খুব গল্প করতাম আমরা।’ তিনি বলেন, ‘বড় ভাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের পরিবারের সবার খোঁজখবর রাখতেন। উনি তিনটা-সাড়ে তিনটার আগে কখনো বিশ্রাম নিতে পারতেন না। সারা রাত ফোন খোলা রাখতেন। আমাদের ফোন সাইলেন্ট থাকলেও উনি বলতেন, “আমার লোকদের প্রয়োজন হতে পারে, এ জন্য ফোন সাইলেন্ট রাখি না।”’

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুল হক বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত। তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল অনেক কাছের। কোনো দিন তাঁর রাগ-অভিমান দেখিনি। আমাদের চোখে তাঁর কোনো খারাপ কিছু পড়েনি। আল্লাহ ওনাকে জান্নাতবাসী করবেন এই কামনা করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শাওন্তী হায়দার এবং অন্যরা অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের স্মৃতিচারণা করেন।‌ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল হাসান। স্বাগত বক্তৃতা করেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাসরুর জামান।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাঁর পুরো নাম আবু আহসান মো. সামসুল আরেফিন সিদ্দিক। পৈতৃক নিবাস ছিল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৮০ সালে এই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন আরেফিন সিদ্দিক। ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন আরেফিন সিদ্দিক।

২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ২০১৭ সালে তিনি উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষ করে আবারও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি। অধ্যাপক আরেফিন একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যাওয়ার পর আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিলিংয়ে লড়াইটা মূলত হামজা বনাম ছেত্রী
  • শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্মৃতিচারণায় আরেফিন সিদ্দিককে স্মরণ