নিজেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দানকারী হিসেবে পরিচয় দেন ব্রেন্ট দিমিত্রাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর হাজারো অনুসারী। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দিমিত্রাক তাঁর অনুসারীদের বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের ছোট্ট উপকূলীয় শহর ইউরেকার দক্ষিণাংশে শিগগিরই ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

এর মাস দুয়েক পর ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে। সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। অনলাইনে দিমিত্রাকের অনুসারী হু হু করে বাড়তে থাকে। সবাই তাঁকে পরের ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দিতে বলেন।

খ্রিষ্টীয় নববর্ষের সময় দিমিত্রাক বলেন, ভূমিকম্প কোথায় ঘটবে, সেটা আগেভাগে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রগাঢ় দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস মোটামুটি নিখুঁতভাবে দেওয়া গেলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দেওয়া কঠিন।

ভূমিকম্পসংক্রান্ত গবেষকেরা বলেন, তবে একটি সমস্যা আছে, তা হলো ভূমিকম্প কখন, কোথায় ঘটবে, সেটা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। আর এ অনিশ্চয়তা তাঁদের বেশ অস্থির করে তোলে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ ভয় পান, যেকোনো মুহূর্তে ‘বড় কিছু’ আঘাত হানতে পারে। এটা ভূপ্রকৃতি ও অগণিত মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থায় (ইউএসজিএস) তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভূকম্পনবিদ হিসেবে কাজ করেছেন লুসি জোনস। ‘দ্য বিগ ওয়ানস’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। লুসির গবেষণার বেশির ভাগজুড়ে রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এবং এমন বিপর্যয় সামলে ওঠার কর্মপন্থা উন্নত করার প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুনদশ দিনে হাজার ভূমিকম্প, নীল গম্বুজের দ্বীপ ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লুসি বলেন, তিনি যত দিন ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করছেন, দেখেছেন, মানুষ মূলত ওই ‘বড় কিছু’ কবে ঘটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছেন। যদিও আগেভাগে সেটা বলে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।

ইউএসজিএসের হিসাবে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে লাখখানেক ভূকম্পন অনুভূত হয়। আর এটাও বোধগম্য যে মানুষ আগে থেকেই সতর্ক থাকতে চায়। আগাম সতর্কতা চায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা এলাকাটি উপকূলীয় শহর। সানফ্রান্সিসকো থেকে ২৭০ মাইল বা প্রায় ৪৩৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ডিসেম্বরের ওই ভূমিকম্পের পাশাপাশি ওই এলাকায় বছরে সাত শতাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়। গত সপ্তাহে সেখানে ১০টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে।

আরও পড়ুন২০ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎস বাংলাদেশে ১৬ আগস্ট ২০২৩

ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, যেই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে বলে ব্রেন্ট দিমিত্রাক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ‘ভূমিকম্পপ্রবণ’ এলাকাগুলোর একটি। এই এলাকার অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে, যা ‘মেন্ডোসিনো ট্রিপল জংশন’ নামে পরিচিত।

এই তিনটি প্লেটের নড়াচড়া ভূ–অভ্যন্তরে ভীষণ চাপ তৈরি করে। আর যখন চাপমুক্ত হয়, তখন ভূমিকম্প হতে পারে। তাই ওই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে, এমনটা বলা কঠিন কিছু নয়। তবে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ বিরল ঘটনা বলে মন্তব্য করেন লুসি জোনস।

ইউএসজিএস বলছে, ১৯০০ সালের পর থেকে পুরো অঞ্চলে ১১টি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। দিমিত্রাকের পূর্বাভাস দেওয়া ভূমিকম্পটিসহ পাঁচটি ওই এলাকায় হয়েছে।

যদিও দিমিত্রাকের পূর্বাভাস সঠিক হয়েছিল। তবে লুসি জোনস বলছেন, বড় ধরনের বা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের বিষয়ে আগে থেকে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। কেননা, ভূমিকম্পের নির্দেশক ভূতাত্ত্বিক কারণগুলো বেশ জটিল ও গতিশীল।

লুসি জোনস বলছিলেন, তিন দশকের চাকরিজীবনে তিনি হাজারো মানুষকে বড় ভূমিকম্পের বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করে দিয়েছেন। এর মধ্যে নব্বইয়ের দশকের মানুষেরাও আছেন। ওই সময় তাঁরা আগাম সতর্কতা জানার জন্য জোনসের দপ্তরে ফ্যাক্স করে জানতে চাইতেন।

প্রতি সপ্তাহে যখন আপনি পূর্বাভাস পেতে থাকবেন, কেউ না কেউ সেটা থেকে লাভবান হবেন—মন্তব্য করেন লুসি। তাঁর মতে, ব্রেন্ট দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। কেননা, তাঁর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট নেই।

দীর্ঘদিন ধরে দিমিত্রাক বলে আসছেন, একটি অবিশ্বাস্য রকমের বড় ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম আলাস্কা, জাপান কিংবা নিউজিল্যান্ডের উপকূলের দ্বীপগুলোয় আঘাত হানতে পারে। এর মাত্রা এতটাই শক্তিশালী যে তাঁর মতে এতে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যাহত হতে পারে।

আরও পড়ুন৬.

৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়বে ঢাকার ৪০% ভবন ০১ জুন ২০২৪

ইউএসজিএস বলছে, যেকোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সঠিক হওয়ার জন্য তিনটি নির্দিষ্ট উপাদান থাকা অত্যাবশ্যক। তা হলো—ভূমিকম্পের সম্ভাব্য তারিখ ও সময়, এর উৎপত্তিস্থল এবং মাত্রা।

কিন্তু দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের সময়সীমা বারবার পরিবর্তন হয়। একপর্যায়ে তিনি বলেনছেন, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের ঠিক আগে বা পরে ঘটতে পারে। পরবর্তী সময়ে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই ২০৩০ সালের আগে ঘটবে। যদিও সেই বড় ভূমিকম্প এখনো আঘাত হানেনি। তবে দিমিত্রাক এখনো বিশ্বাস করেন, এটা আঘাত হানবেই।

অনিশ্চয়তার মধ্যেও যেভাবে প্রস্তুতি

ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না মানে এটা নয় যে আপনাকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ ভূমিকম্প মোকাবিলায় বড় পরিসরের মহড়ায় অংশ নেন। নাম ‘দ্য গ্রেট শেক আউট’। ভূমিকম্প নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহড়া বলা হয় একে।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প কেন্দ্রের একটি দল মহড়া আয়োজনে সম্পৃক্ত। এ দলে লুসি নিজেও আছেন। মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা হাঁটু গেড়ে বসে, ডেস্কের মতো শক্ত কোনো কিছুর নিচে লুকিয়ে থাকে এবং এক মিনিট ধরে সেখানে থেকে ভূমিকম্প মোকাবিলার সহজ কৌশলগুলো অনুশীলন করেন।

ঘরের বাইরে থাকা মানুষের গাছ, ভবন বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গায় অবস্থান নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সমুদ্রের কাছের এলাকার মানুষেরা সুনামির আশঙ্কা থেকে কম্পন থামার পরপরই উঁচু ভূমিতে পালিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করেন।

আরও পড়ুনযে কারণে আপনি ভূমিকম্পের অনুভূতি পান না১১ জানুয়ারি ২০২৫

ওয়াশিংটনের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরিকবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ব্রায়ান টারবুশ বলেন, যদিও এখন ভূমি কাঁপছে না, চরম চাপের পরিস্থিতিও নয়; তবু অনুশীলনের জন্য এটা সেরা সময়।

মহড়ার বাইরেও পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ফোনে সতর্ক করে দেওয়ার একটি ব্যবস্থা চালু রেখেছে ইউএসজিএস। এর নাম শেকঅ্যালার্ট।

আরও পড়ুনএক সপ্তাহে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত, কিসের লক্ষণ০৭ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র প র ব ভ স র র ভ ম কম প ভ ম কম প ক ই এল ক য় অন স র র জন য অন ভ ত উপক ল র একট সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস কেন সচরাচর ভুল হয়

নিজেকে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দানকারী হিসেবে পরিচয় দেন ব্রেন্ট দিমিত্রাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর হাজারো অনুসারী। গত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে দিমিত্রাক তাঁর অনুসারীদের বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমের ছোট্ট উপকূলীয় শহর ইউরেকার দক্ষিণাংশে শিগগিরই ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে।

এর মাস দুয়েক পর ৭ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তরাঞ্চলে আঘাত হানে। সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। অনলাইনে দিমিত্রাকের অনুসারী হু হু করে বাড়তে থাকে। সবাই তাঁকে পরের ভূমিকম্প নিয়ে পূর্বাভাস দিতে বলেন।

খ্রিষ্টীয় নববর্ষের সময় দিমিত্রাক বলেন, ভূমিকম্প কোথায় ঘটবে, সেটা আগেভাগে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য প্রগাঢ় দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস মোটামুটি নিখুঁতভাবে দেওয়া গেলেও ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দেওয়া কঠিন।

ভূমিকম্পসংক্রান্ত গবেষকেরা বলেন, তবে একটি সমস্যা আছে, তা হলো ভূমিকম্প কখন, কোথায় ঘটবে, সেটা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। আর এ অনিশ্চয়তা তাঁদের বেশ অস্থির করে তোলে। উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষ ভয় পান, যেকোনো মুহূর্তে ‘বড় কিছু’ আঘাত হানতে পারে। এটা ভূপ্রকৃতি ও অগণিত মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থায় (ইউএসজিএস) তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভূকম্পনবিদ হিসেবে কাজ করেছেন লুসি জোনস। ‘দ্য বিগ ওয়ানস’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। লুসির গবেষণার বেশির ভাগজুড়ে রয়েছে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস এবং এমন বিপর্যয় সামলে ওঠার কর্মপন্থা উন্নত করার প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুনদশ দিনে হাজার ভূমিকম্প, নীল গম্বুজের দ্বীপ ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লুসি বলেন, তিনি যত দিন ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করছেন, দেখেছেন, মানুষ মূলত ওই ‘বড় কিছু’ কবে ঘটবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইছেন। যদিও আগেভাগে সেটা বলে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।

ইউএসজিএসের হিসাবে, প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে লাখখানেক ভূকম্পন অনুভূত হয়। আর এটাও বোধগম্য যে মানুষ আগে থেকেই সতর্ক থাকতে চায়। আগাম সতর্কতা চায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা এলাকাটি উপকূলীয় শহর। সানফ্রান্সিসকো থেকে ২৭০ মাইল বা প্রায় ৪৩৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ডিসেম্বরের ওই ভূমিকম্পের পাশাপাশি ওই এলাকায় বছরে সাত শতাধিক ভূকম্পন অনুভূত হয়। গত সপ্তাহে সেখানে ১০টির বেশি ভূমিকম্প হয়েছে।

আরও পড়ুন২০ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎস বাংলাদেশে ১৬ আগস্ট ২০২৩

ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, যেই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে বলে ব্রেন্ট দিমিত্রাক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ‘ভূমিকম্পপ্রবণ’ এলাকাগুলোর একটি। এই এলাকার অবস্থান তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলে, যা ‘মেন্ডোসিনো ট্রিপল জংশন’ নামে পরিচিত।

এই তিনটি প্লেটের নড়াচড়া ভূ–অভ্যন্তরে ভীষণ চাপ তৈরি করে। আর যখন চাপমুক্ত হয়, তখন ভূমিকম্প হতে পারে। তাই ওই এলাকায় ভূমিকম্প হতে পারে, এমনটা বলা কঠিন কিছু নয়। তবে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বেশ বিরল ঘটনা বলে মন্তব্য করেন লুসি জোনস।

ইউএসজিএস বলছে, ১৯০০ সালের পর থেকে পুরো অঞ্চলে ১১টি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। দিমিত্রাকের পূর্বাভাস দেওয়া ভূমিকম্পটিসহ পাঁচটি ওই এলাকায় হয়েছে।

যদিও দিমিত্রাকের পূর্বাভাস সঠিক হয়েছিল। তবে লুসি জোনস বলছেন, বড় ধরনের বা প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের বিষয়ে আগে থেকে নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। কেননা, ভূমিকম্পের নির্দেশক ভূতাত্ত্বিক কারণগুলো বেশ জটিল ও গতিশীল।

লুসি জোনস বলছিলেন, তিন দশকের চাকরিজীবনে তিনি হাজারো মানুষকে বড় ভূমিকম্পের বিষয়ে আগেভাগে সতর্ক করে দিয়েছেন। এর মধ্যে নব্বইয়ের দশকের মানুষেরাও আছেন। ওই সময় তাঁরা আগাম সতর্কতা জানার জন্য জোনসের দপ্তরে ফ্যাক্স করে জানতে চাইতেন।

প্রতি সপ্তাহে যখন আপনি পূর্বাভাস পেতে থাকবেন, কেউ না কেউ সেটা থেকে লাভবান হবেন—মন্তব্য করেন লুসি। তাঁর মতে, ব্রেন্ট দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। কেননা, তাঁর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপট নেই।

দীর্ঘদিন ধরে দিমিত্রাক বলে আসছেন, একটি অবিশ্বাস্য রকমের বড় ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম আলাস্কা, জাপান কিংবা নিউজিল্যান্ডের উপকূলের দ্বীপগুলোয় আঘাত হানতে পারে। এর মাত্রা এতটাই শক্তিশালী যে তাঁর মতে এতে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যাহত হতে পারে।

আরও পড়ুন৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ধসে পড়বে ঢাকার ৪০% ভবন ০১ জুন ২০২৪

ইউএসজিএস বলছে, যেকোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সঠিক হওয়ার জন্য তিনটি নির্দিষ্ট উপাদান থাকা অত্যাবশ্যক। তা হলো—ভূমিকম্পের সম্ভাব্য তারিখ ও সময়, এর উৎপত্তিস্থল এবং মাত্রা।

কিন্তু দিমিত্রাকের পূর্বাভাসের সময়সীমা বারবার পরিবর্তন হয়। একপর্যায়ে তিনি বলেনছেন, এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের ঠিক আগে বা পরে ঘটতে পারে। পরবর্তী সময়ে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই ২০৩০ সালের আগে ঘটবে। যদিও সেই বড় ভূমিকম্প এখনো আঘাত হানেনি। তবে দিমিত্রাক এখনো বিশ্বাস করেন, এটা আঘাত হানবেই।

অনিশ্চয়তার মধ্যেও যেভাবে প্রস্তুতি

ভূমিকম্পের নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না মানে এটা নয় যে আপনাকে পুরোপুরি অপ্রস্তুত থাকতে হবে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের তৃতীয় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ ভূমিকম্প মোকাবিলায় বড় পরিসরের মহড়ায় অংশ নেন। নাম ‘দ্য গ্রেট শেক আউট’। ভূমিকম্প নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহড়া বলা হয় একে।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প কেন্দ্রের একটি দল মহড়া আয়োজনে সম্পৃক্ত। এ দলে লুসি নিজেও আছেন। মহড়ায় অংশগ্রহণকারীরা হাঁটু গেড়ে বসে, ডেস্কের মতো শক্ত কোনো কিছুর নিচে লুকিয়ে থাকে এবং এক মিনিট ধরে সেখানে থেকে ভূমিকম্প মোকাবিলার সহজ কৌশলগুলো অনুশীলন করেন।

ঘরের বাইরে থাকা মানুষের গাছ, ভবন বা বিদ্যুতের খুঁটি থেকে দূরে খোলা জায়গায় অবস্থান নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সমুদ্রের কাছের এলাকার মানুষেরা সুনামির আশঙ্কা থেকে কম্পন থামার পরপরই উঁচু ভূমিতে পালিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করেন।

আরও পড়ুনযে কারণে আপনি ভূমিকম্পের অনুভূতি পান না১১ জানুয়ারি ২০২৫

ওয়াশিংটনের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরিকবিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ব্রায়ান টারবুশ বলেন, যদিও এখন ভূমি কাঁপছে না, চরম চাপের পরিস্থিতিও নয়; তবু অনুশীলনের জন্য এটা সেরা সময়।

মহড়ার বাইরেও পশ্চিম উপকূলের অঙ্গরাজ্যগুলোর বাসিন্দাদের জন্য ফোনে সতর্ক করে দেওয়ার একটি ব্যবস্থা চালু রেখেছে ইউএসজিএস। এর নাম শেকঅ্যালার্ট।

আরও পড়ুনএক সপ্তাহে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত, কিসের লক্ষণ০৭ জানুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ