ক. শূন্যস্থান পূরণ করো।

প্রশ্ন: মানবদেহের শতকরা -ভাগ পানি।

উত্তর: ৬০-৭০

প্রশ্ন: উদ্ভিদের দেহের প্রায় শতকরা - ভাগ পানি।

উত্তর: ৯০

প্রশ্ন: বাষ্প থেকে তরলে পরিণত হওয়াকে - বলে।

উত্তর: ঘনীভবন

প্রশ্ন: পানিকে তাপ দিলে –পরিণত হয়।

উত্তর: জলীয় বাষ্পে

প্রশ্ন: পানিচক্রের মাধ্যমে সর্বদাই পানির অবস্থার - ঘটছে।

উত্তর: পরিবর্তন

প্রশ্ন: সাগর ও নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়ে – পরিণত হয়।

উত্তর: জলীয় বাষ্পে

প্রশ্ন: জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য পানিকে – বেশি সময় ধরে ফুটাতে হবে।

উত্তর: ২০ মিনিটের

প্রশ্ন: আর্সেনিকমুক্ত পানি ফিটকিরি বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে – করা যায় না।

উত্তর: নিরাপদ

খ.

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর ।

প্রশ্ন:পানিচক্র কী?

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাকেই পানিচক্র বলে।

প্রশ্ন: পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ দাও।

উত্তর: পানিদূষণ প্রতিরোধের ৩টি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো—

১. কৃষির ক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে ফেলা।

২. পানিতে ময়লা-আবর্জনা ও রাসায়নিক বর্জ্য না ফেলা।

৩. মরা জীবজন্তু পানিতে না ফেলা।

প্রশ্ন: অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার ৪টি উপায় লেখো।

উত্তর: অনিরাপদ পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার ৪টি উপায় নিচে দেওয়া হলো—

১. ছাঁকন

২. থিতানো

৩. ফোটানো ও

৪. রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধকরণ।

প্রশ্ন: বৃষ্টির পর মাটিতে পানি জমা হয়। কিছুক্ষণ পর সেই পানি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওই পানি কোথায় যায়?

উত্তর: বৃষ্টির পর মাটিতে যে পানি জমা হয় তা সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। ওই জলীয় বাষ্প ওপরে উঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানি বিন্দুতে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: পানির ৩টি অবস্থা কী কী?

উত্তর: পানির ৩টি অবস্থা হলো—

১.কঠিন (বরফ),

২.তরল ( পানি) ও

৩.বায়বীয়( বাষ্প)।

প্রশ্ন: বৃষ্টি কী?

উত্তর: সূর্যতাপ পুকুর, খালবিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। জলীয় বাষ্পের ক্ষুদ্র পানি কণা মিশে মেঘ সৃষ্টি করে। মেঘের পানি কণাগুলো একত্র হয়ে আরও বড় হয়ে বৃষ্টি হিসেবে মাটিতে পড়ে।

প্রশ্ন: ছাঁকন কী?

উত্তর: ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াই হলো ছাঁকন।

প্রশ্ন: আর্সেনিক দূষণের কারণ কী?

উত্তর: আর্সেনিক একপ্রকার বিষাক্ত পদার্থ, যা কিছু কিছু এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতে দেখা যায়। নলকূপের পানির সঙ্গে মিশে এটি ওপরে আসে এবং এ পানি ব্যবহারের ফলে মানুষের মারাত্মক অসুখ হয়। প্রাকৃতিক কারণেই আর্সেনিক দূষণ হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: দূষিত পানি পান করলে কী কী রোগ হতে পারে?

উত্তর: দূষিত পানি পান করলে— কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

প্রশ্ন: মেঘ কী?

উত্তর: সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠের পানি জলীয় বাষ্প হয়ে ওপরে উঠতে থাকে। একসময় ওপরের ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে জলকণায় পরিণত হয়ে আকাশে ভাসতে থাকে, এটিকে মেঘ বলে।

আরও পড়ুনআইডিবি দেবে ৭২০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ, মিলবে হাতখরচের অর্থ৮ ঘণ্টা আগে

প্রশ্ন: পানি দেহের কী কাজ করে?

উত্তর: আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি, তখন পানি সেই খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান শোষণ করে দেহের প্রতিটি অঙ্গে তা পরিবহনে সাহায্য করে। এ ছাড়া দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতেও পানি সহায়তা করে থাকে।

প্রশ্ন: পানি শোধনের ২টি উপায় লেখো।

উত্তর: পানি শোধনের ২টি উপায় হলো—

১. থিতানো ও

২. ফুটানো।

প্রশ্ন: পানির দুটি উৎসের নাম লেখো।

উত্তর: পানির দুটি উৎসের নাম হলো—

১. বৃষ্টি ও

২. নদী-নালা।

প্রশ্ন: পানি বিশুদ্ধকরণের দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো।

উত্তর: পানি বিশুদ্ধকরণের দুটি রাসায়নিক পদার্থ হলো—

১. ফিটকিরি ও

২. ব্লিচিং পাউডার।

প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও মানবদেহের মধ্যে কত ভাগ পানি রয়েছে?

উত্তর: উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগ এবং মানবদেহের ৬০-৭০ ভাগ পানি রয়েছে।

প্রশ্ন: পানিকে শীতল করলে কী হয়?

উত্তর: যখন পানিকে শীতল করা হয়, তখন তা জমে কঠিন বরফে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: পানি এক অবস্থা থেকে কীভাবে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়?

উত্তর: তাপ প্রয়োগ ও ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে পানি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানি কী?

উত্তর: মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন পানিই হলো নিরাপদ পানি ।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানির প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: আমাদের দেহের খাদ্য পরিপাকে এবং সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে নিরাপদ পানির প্রয়োজন।

প্রশ্ন: নিরাপদ পানির প্রয়োজনীয়তা কী?

উত্তর: আমাদের দেহের খাদ্য পরিপাকে এবং সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে নিরাপদ পানির প্রয়োজন।

প্রশ্ন: খাদ্য পরিপাকে পানি কী হিসেবে কাজ করে?

উত্তর: খাদ্য পরিপাকে পানি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

প্রশ্ন: পানিকে তাপ দিলে কী ঘটে?

উত্তর: পানিকে যখন তাপ দেওয়া হয়, তখন তা জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়।

প্রশ্ন: বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর ।

প্রশ্ন: বরফসহ পানির গ্লাসের বাইরের অংশ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: একটি কাচের পানির গ্লাস নিই ।

এখন গ্লাসে এক টুকরো বরফ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিলে দেখা যাবে যে, গ্লাসের বাইরে বিন্দু বিন্দু পানি জমেছে। হাত দিয়ে গ্লাসটি ধরে নিশ্চিত হই। এ পানি গ্লাসের ভেতরের বরফ থেকে আসেনি। কারণ, গ্লাসের ভেতর থেকে কাচ ভেদ করে পানি বাইরে আসতে পারে না। বরফের ঠান্ডায় গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে, আর সে ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গ্লাসের গায়ে জমেছে।

এভাবেই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি প্রমাণ করা যায় এবং এ জন্য গ্লাসের বাইরের অংশ ভিজে যায়।

প্রশ্ন: পানিচক্র ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তাকেই পানিচক্র বলে।

সূর্যতাপ ভূপৃষ্ঠের অর্থাৎ পুকুর, খাল বিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে জলীয় বাষ্পে পরিণত করে। জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলের ওপরের দিকে উঠে ঠান্ডা হয়ে ক্ষুদ্র পানি কণায় পরিণত হয়।

ক্ষুদ্র পানি কণা একত্র হয়ে আকাশে মেঘরূপে ঘুরে বেড়ায়। মেঘের পানি কণাগুলো একত্র হয়ে আকারে বড় হয়ে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে। আবার বায়ুপ্রবাহের কারণে জলীয় বাষ্প মেঘরূপে উড়ে গিয়ে পর্বতের চূড়ায় পৌঁছায়। সেখানে মেঘের পানি কণা ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয়। এ বরফ গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে গলে পানি হয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট পাহাড়ি নদীর উত্পত্তি হয়। এই নদীর পানি সবশেষে সমুদ্রে গিয়ে মেশে। এভাবে পানির চক্রাকারে ঘুরে আসাকে পানিচক্র বলে।

প্রশ্ন: জীবের কেন পানি প্রয়োজন?

উত্তর: পানি ছাড়া জীব তথা উদ্ভিদ ও প্রাণী বাঁচতে পারে না।

উদ্ভিদের জন্য পানি প্রয়োজন তা হলো—

১. উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে পানি ব্যবহার করে।

২. সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরিতে উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন।

৩. গরমে পানি উদ্ভিদের দেহকে শীতল রাখে ।

প্রাণীর জন্য পানি প্রয়োজন তা হলো—

১. পানি খাদ্য পরিপাক করে।

২. পানি জীবদেহের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি উপাদান পরিবহনে সহায়তা করে।

৩. পানি প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ।

প্রশ্ন: বাতাসে যে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি?

উত্তর: বাতাসে যে পানি আছে তা আমরা নিচের পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই ব্যাখ্যা করতে পারি।

পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন একটি কাচের গ্লাস ও কয়েক টুকরো বরফ । পরীক্ষার শুরুতে একটি কাচের গ্লাসে কয়েক টুকরো বরফ রাখি। কিছুক্ষণ রেখে দিই এবং গ্লাসের বাইরের দিক পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যাবে যে, গ্লাসের বাইরে পানি জমা হয়েছে। বরফের ঠান্ডার কারণে গ্লাসটি ঠান্ডা হয়েছে। আর সে ঠান্ডার পরশে বায়ুর জলীয় বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানি কণায় পরিণত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, বায়ুতে সব সময় কিছু পানি জলীয় বাষ্প আকারে থাকে।

আরও পড়ুনপঞ্চম শ্রেণি-বাংলা : ‘এই দেশ এই মানুষ’ প্রবন্ধের বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর১১ মার্চ ২০২৫

প্রশ্ন: পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি?

উত্তর: পুকুরের পানি থেকে নিরাপদ পানি পাওয়ার উপায়গুলো হলো—

ছাঁকন:

পুকুরের পানিতে মিশে থাকা কাদা ও ময়লা পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দ্বারা ছেঁকে পরিষ্কার করা যায়।

থিতানো:

পুকুরের পানি কলস বা অন্য কোনো পাত্রে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় তলানি জমে। অতঃপর পাত্রটিকে কাত করে ওপর থেকে পরিষ্কার পানি সংগ্রহ করা যায়।

ফোটানো:

পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে শোধন করা যায়। অন্তত ২০ মিনিট ফোটালে জীবাণু থাকলে মারা যায়।

রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বিশুদ্ধকরণ:

পুকুরের পানিতে ফিটকিরি, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে পানিকে জীবাণুমুক্ত করা যায়।

প্রশ্ন: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো লেখো।

উত্তর: পানিদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো—

১. পুকুর বা নদীর পানিতে বাসনকোসন মাজা, গোসল করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ গোসল করানো, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব করা, প্রাণীর মৃতদেহ ফেলা।

২. রোগীর মলমূত্র, বিছানাপত্র ও জামাকাপড় পুকুর, খালবিলে ধোয়া।

৩. কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে ফেলা।

৪. কৃষিকাজে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করলে তা বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে খাল-বিল-নদীর পানি দূষিত করে।

৫. বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় গ্রাম ও শহর অঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এতে মানুষ ও গৃহপালিত পশুপাখির মলমূত্র পানিতে মিশে পানি দূষিত করে।

এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে আর্সেনিক দূষণ হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: পানিদূষণ কীভাবে রোধ করা যায়?

উত্তর: যেসব কারণে পানি দূষিত হয় সেসব কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকলে পানিদূষণ রোধ করা অনেকটা সহজ হয়।

১. পুকুরের পাড়ে বা খোলা জায়গায় মলমূত্রে ত্যাগ বন্ধ করতে হবে।

২. ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলে গর্ত করে মাটিচাপা দিতে হবে।

৩. অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৪. যেকোনো রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড় পুকুরের পানিতে না ধোয়া।

৫. পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

৬. কলকারখানার বর্জ্য পরিকল্পিত উপায়ে পরিশোধিত করতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ য পর প ক ব শ দ ধকরণ র জন য প ন নদ র প ন আর স ন ক ব যবহ র পদ র থ ভ ত হয়

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ যখন রাজনীতির এজেন্ডা

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে না, সেটা আমার কাছে অন্তত স্পষ্ট হয়েছিল ২০ নভেম্বর, বুধবার। সেদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে কোনো দল বা সংগঠনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী এবং বিচার করা যাবে না, যদিও যে আইন উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হয়েছিল, তাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলকে বিচারের বিধান রাখা হয়েছিল। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মাটিতে অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দল হিসেবেই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়েছিল।

অন্য দুটি আইনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ থাকলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আইসিটি আইন থেকে সংগঠন কিংবা দলের বিচারের ধারাটি বাদ দিয়ে সরকার আসলে নভেম্বর মাসেই বার্তা দিয়েছিল যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের পথে পথে তারা হাঁটছে না। প্রধান উপদেষ্টা কয়েক দিন আগে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করার ব্যাপারে তাঁর সরকারের অবস্থানের কথা চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেন।

প্রধান উপদেষ্টা এ ধরনের বক্তব্য আগেও দিয়েছিলেন, কিন্তু এবার তাঁর বক্তব্যের পরপরই দুটি ঘটনা ঘটল, যেগুলো এই পরিস্থিতিকে একেবারে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনকে ক্যান্টনমেন্টে এক বৈঠকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ তৈরি করে নির্বাচনে আনার পক্ষে অবস্থান নিতে বলা হয়। ঠিক কারা ক্যান্টনমেন্টে জনাব হাসনাতের সঙ্গে বসেছিলেন, সেটা তিনি স্পষ্টভাবে না বললেও পরদিন এনসিপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্য তার বেশ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে সেনাপ্রধান ইনক্লুসিভ নির্বাচনের যে কথা বলেছেন, তার মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচন করার বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন বলে মনে করেন হাসনাত। অনুমিতভাবেই তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বৈঠকের সঙ্গে সেনাপ্রধানকেই সবাই যুক্ত করেছেন।

এই স্ট্যাটাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার খুব ছোট্ট একটি বক্তব্য শেয়ার করেন হাসনাত, যা পরবর্তী সময়ে আমরা বিস্তারিতভাবে দেখতে পাই একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সেই উপদেষ্টার সাক্ষাৎকারে। যে বক্তব্যটা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়, সেটা হচ্ছে আসিফ মাহমুদ অভিযোগ করছেন, সেনাপ্রধান আমাদের প্রধান উপদেষ্টা পদে ইউনূসকে পছন্দ করার ক্ষেত্রে তীব্রভাবে বিরোধিতা করেছেন। এবং আসিফ মাহমুদের ভাষায় শেষ সময় পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে কনভিন্সড ছিলেন না; বরং ‘বুকে পাথরচাপা দিয়ে’ সিদ্ধান্তটি মেনে নিয়েছিলেন। আসিফের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে আলোচনা সরিয়ে রাখলে এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে সরকারের উপদেষ্টা পদে থাকা একজন মানুষ ঠিক এই মুহূর্তে সেনাপ্রধানকে তীব্র চাপে ফেলার মতো একটা বক্তব্য কেন সামনে আনলেন?

খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঘটা এই দুটি ঘটনাকে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে শুরু করে এমন একটি গোষ্ঠী, যারা দীর্ঘদিন থেকে সেনাপ্রধানকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করার জনমত তৈরি করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। শুধু সেটাই নয়, এই দফায় জনগণকে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার আহ্বানও জানায় তারা।

এটা সত্য যে শুধু সাম্প্রতিক সময়ে নয়, শেখ হাসিনার পতন এবং পালিয়ে যাওয়ার পর রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও সেনাপ্রধান নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে আলাপ করেছেন। সাম্প্রতিক বক্তব্যে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের কথা বলেছেন। এগুলোকে কেউ রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কিংবা নিদেনপক্ষে প্রভাব রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। যেটা অযৌক্তিকও নয়। তাই সেনাপ্রধানের কিছু যৌক্তিক সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু এ ঘটনার আগেও সেনাপ্রধানকে সরানোর একটি প্রেক্ষাপট তৈরির চেষ্টা কার্যকর ছিল।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে নাকি হবে না, সেটা নিয়ে তর্কবিতর্ক হোক, এমনকি হোক ঝগড়াঝাঁটিও। এই ইস্যুকে ‘ফুটবল’ বানিয়ে রাজনীতির ‘খেলা’ চলতেই পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পথকে রুদ্ধ করার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকা জরুরি।

আমরা খেয়াল করব, যে অভিযোগের ভিত্তিতে সেনাপ্রধানকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, ঠিক একই অভিযোগ আরও জোরালোভাবে করা যায় প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। কারণ, তিনি সরকারপ্রধান হিসেবে নিজেই বলেছেন আওয়ামী লীগকে তাঁরা নিষিদ্ধ করছেন না। তাই আওয়ামী লীগকে বাঁচিয়ে রাখা এবং পুনর্বাসনের দায় অধ্যাপক ইউনূসের ওপরই পড়ার কথা, কিন্তু সেটা হয়নি। এ কারণেই মনে হয় আসলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থাকবে নাকি থাকবে না, সেটা আসলে একটা রাজনীতি এবং ষড়যন্ত্রের ফুটবলে পরিণত হয়েছে।

এনসিপির যে সংবাদ সম্মেলনের কথা বলছি, সেটা মূলত প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে তাঁরা আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে আমি ধারণা করছি এবং বিভিন্ন জায়গায় বলেছিও যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত করবে এনসিপি। এমনকি দল গঠন করার আগেও তাঁদেরই দুই সংগঠন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি খুব গুরুত্ব দিয়ে এই আলাপ চালিয়ে গেছে।

বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করার জন্য সম্ভবত এই বিষয় ছাড়া তেমন কিছু আর হাতে নেই এনসিপির। আমি বলছি না, এটা সদিচ্ছা থেকে তাঁরা করছেন না, কিন্তু রাজনীতি রাজনীতিই, এতে নানা ইস্যুর প্রয়োজন হয়, যেটাকে ব্যবহার করে একটা রাজনৈতিক দল জনগণের কাছাকাছি যাবে এবং জনগণের সমর্থন অর্জন করবে। সে জন্যই আমরা দেখছি সরকারের অংশ হয়েও উপদেষ্টা মাহফুজ আলম (যেকোনো সময়ে তিনি এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন) আওয়ামী লীগের রাজনীতির অধিকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন।

ওদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ একটা ষড়যন্ত্রের খেলার ফুটবলেও পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা খুব নিয়মিতভাবে যে সময়সীমার কথা বলছেন, সেটা সর্বোচ্চ আগামী বছরের জুনের মধ্যে। বিশেষ করে জুনের সময়সীমা নিয়ে কারও কারও কিছুটা আপত্তি থাকলেও কিছু সংস্কার এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিচার দৃশ্যমান হওয়ার শর্ত সাপেক্ষে ডিসেম্বর সময়সীমা নিয়ে একধরনের ঐকমত্য সমাজের প্রায় সব মহলে আছে।

একটি চক্র নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যা এখন একেবারেই প্রকাশ্য। এই কথা এখন প্রকাশ্যেও বলা হচ্ছে, আগামী বছরের জুন সময়সীমার চেয়েও আরও অনেক পরে নির্বাচন হতে হবে। সেনাপ্রধানের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সমালোচনা করা যায়। শেখ হাসিনার পতন এবং তার পরবর্তী সময় যে বিশেষ অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তাতে ভুল, সঠিক বিবেচনা করার যথেষ্ট শান্ত পরিস্থিতি দেশের মধ্যে কিংবা আমাদের মননেও বিরাজ করে না। কিন্তু এটা আমরা অন্তত দেখতে পাচ্ছি, এই অস্থির প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর প্রধানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী স্থিতিশীল আছে এবং তিনি একটি সঠিক সময় নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পক্ষে বেশ শক্তভাবে অবস্থান নিয়েছেন।

এটা সত্য, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এটা মোটামুটি প্রকাশিত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ও ভূরাজনৈতিক চাপ আছে। শেখ হাসিনা, তাঁর সহযোগী এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর রিপোর্ট দেওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে।

আগেই বলেছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে না থাকার পরেও একটা রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার অন্তত দুটি আইন আছে। ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইনে প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা যায়। আর ‘দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮’ অনুযায়ী সরকার চাইলে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ কিংবা তার কর্মকাণ্ড স্থগিত করার জন্য হাইকোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। সরকার চাইলেই বিশেষ করে দ্বিতীয়টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের মতামত চাইতে পারে।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে নাকি হবে না, সেটা নিয়ে তর্কবিতর্ক হোক, এমনকি হোক ঝগড়াঝাঁটিও। এই ইস্যুকে ‘ফুটবল’ বানিয়ে রাজনীতির ‘খেলা’ চলতেই পারে, কিন্তু এর মাধ্যমে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তনের পথকে রুদ্ধ করার যেকোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকা জরুরি।

জাহেদ উর রহমান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ যখন রাজনীতির এজেন্ডা
  • হাসনাত আবদুল্লাহর স্ট্যাটাসকে শিষ্টাচার বর্জিত বললেন নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী