Prothomalo:
2025-03-25@04:34:21 GMT

এসির বাতাস কি স্বাস্থ্যকর

Published: 23rd, March 2025 GMT

তীব্র গরমে যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন দেহ–মন জুড়াতে চাই শীতল বাতাস। শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসির সঠিক ব্যবহারে সেই সময়টায় স্বস্তি নিশ্চয়ই পাবেন আপনি। ভয়াবহ তাপপ্রবাহের দিনগুলোতে উত্তাপজনিত নানান অসুস্থতা থেকে আপনি বাঁচতে পারবেন, যদি থাকেন এসির আরামদায়ক বাতাসে। গরমের সময় এসির হাওয়ায় কাজ করলে মনোযোগ ধরে রাখাও সহজ। আবার কর্মব্যস্ত দিনের শেষে প্রশান্তির ঘুমের জন্যও সহায়ক হয়ে ওঠে এসি। তবে এমন আরাম-আয়েশের মাঝেও অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে, যদি আপনি এসি ব্যবহারে কিছু বিষয় মেনে না চলেন। কী সেই অস্বস্তি আর কী-ই বা তার সমাধান, জেনে নেওয়া যাক।

অতিরিক্ত ঠান্ডা হাওয়া আমাদের দেহের জন্য নেতিবাচক। ঠান্ডায় কারও কারও অ্যালার্জিও থাকে। তা ছাড়া গরমকালে এসির ঠান্ডা, শুষ্ক হাওয়ার প্রভাব পড়ে অনেকের দেহেই। অন্দরে এসির শীতলতা, আবার বাইরে বেরোলেই প্রচণ্ড উত্তাপ—স্থানভেদে এমন তাপমাত্রার তারতম্য সইতে হলেও কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকেই। আবার এসি রক্ষণাবেক্ষণের ভুলের কারণেও কিছু রোগবালাই হয়ে থাকে। বিস্তারিত জানালেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.

মো. মতলেবুর রহমান

হিম বাতাসের কিছু খারাপ দিক

ঠান্ডা বাতাসে থাকার কারণে কিংবা তাপমাত্রার তারতম্যে অনেকেই হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা বা মাথাব্যথায় ভুগতে পারেন। নাক বন্ধ হয়ে থাকতে পারে। ঠান্ডায় অ্যালার্জি থাকলে এ সমস্যাগুলো বারবার হতে থাকে। অ্যাজমাসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এ ধরনের কিছু সমস্যা হতে পারে। কারও কারও শ্বাসকষ্ট অবধি হতে পারে। ঠান্ডা বাতাসে দেহের নানান ধরনের ব্যথা বাড়তে পারে। পেশির জড়তা অনুভব করতে পারেন কেউ কেউ। আবার কারও খুব ঠান্ডায় থাকার অভ্যাস হয়ে গেলে পরবর্তীতে হালকা গরম আবহাওয়াও অসহ্য ঠেকতে পারে তাঁর কাছে।

শুষ্কতা-বৃত্তান্ত

এসির বাতাস বেশ শুষ্ক। শুষ্ক বাতাস আমাদের শ্বাসনালির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। এই বাতাসের প্রভাবে নাক, মুখ এবং
গলার ভেতরটা শুকিয়ে যেতে পারে। মুখ, নাকতালু এবং গলায় অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। শুষ্ক কাশি হতে পারে, নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে। তা ছাড়া এসির বাতাসে থাকলে ত্বক এবং চোখও শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে।

ঘুমের ব্যাঘাত

ধরুন, আপনি রাতে এসি চালিয়ে ঘর বেশ ঠান্ডা করে ঘুমিয়ে গেলেন। রাতের কোনো এক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভব করায় আপনার আবার ঘুম ভেঙেও যেতে পারে। এটা ঠিক যে এসির তাপমাত্রা আপনি বিছানায় শোয়া অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু সেই কাজটা করতে গিয়ে আপনার রাতের ঘুমটা নিরবচ্ছিন্ন হবে না। একটানা ঘুমাতে না পারলে ঘুমের সুফল থেকে বঞ্চিত হতে পারেন আপনি।

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে

এসি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে বদ্ধ অন্দরে এই এসির বাতাসের কারণে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমিভাব, চোখ থেকে পানি পড়া, নাক থেকে রক্তপাত, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া প্রভৃতি উপসর্গ সৃষ্টি হতে পারে। এ রকম কিছু উপসর্গের সমন্বয়কে বলা হয় ‘সিক বিল্ডিং সিনড্রোম’। এসির যত্ন না নিলে বাতাসে ধুলা–ময়লা এবং জীবাণু থাকতে পারে। এসবের কারণে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহও হতে পারে।

সুস্থ থাকতে যা মেনে চলতে হবে

এসির তাপমাত্রা কখনো খুব কমাতে নেই। মাঝারি তাপমাত্রাই দেহের জন্য স্বস্তিদায়ক।

বাইরে থেকে ফিরে দ্রুত ঘর ঠান্ডা করবেন না। গরম আবহাওয়া থেকে এসে খুব ঠান্ডা করে রাখা কোনো ঘরে চট করে না ঢুকতে চেষ্টা করুন। তেমনি বাইরে খুব গরম থাকলে বেরোনোর আগে কিছুক্ষণ এসি বন্ধ রাখা যেতে পারে।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করলে বাতাস আর্দ্র থাকবে। শুষ্কতাজনিত সমস্যা এড়ানো যাবে।

ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বক আর্দ্র থাকবে।

একটানা কোনো দিকে তাকিয়ে না থেকে চোখের পলক ফেলুন নিয়মিত।

নিয়মমাফিক এসি রক্ষণাবেক্ষণ করুন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এস র ব ত স ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আলুর দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক

বিগত দু-এক বছরের তুলনায় পবিত্র রমজান মাসে প্রায় সব আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আলুর দাম কম হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতা। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে আলু বিক্রি করে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। আশানুরূপ দাম না পাওয়া ও হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গার সংকটের কারণে কৃষকরর বিপাকে পড়েছেন। 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে আলু বিক্রি করতে এসেছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষক মো. শহিদুল হক। ট্রাক ভাড়া দিয়ে এনে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আলু বিক্রি করছেন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা টাকা করে বিক্রি করেছেন। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ২০ টাকা। 

সোমবার (২২ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তে কৃষক মো. শহিদুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “চলতি বছর এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে ব্যয় ৫৫-৬০ হাজার টাকা।  আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৭০-৮০ মণ। এক মণ আলু বিক্রি করছি ৭৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ মণ উৎপাদন হলে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে মুন্সিগঞ্জের অনেক কৃষক  আলু উৎপাদন করবেন না। পাশাপাশি হিমাগারের সংকটের কারণে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি।”

শুধু শহিদুল হক একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী আলুর দাম না পাওয়ায় নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।

যাত্রাবাড়ীতে কথা মাদারীপুরের আরেক আলুচাষি সবুজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রতি বিঘা জমিতে এবার আলু চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৯০-১০০ মণ হারে আলুর ফলন হলেও আলুর পাইকারি বাজার মূল্য আশানুরূপ নয়। আলু চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে। হিমাগারে যাদের আলু বেশি তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাদের কম তাদেরটা পরে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। আলু পচনশীল তাই দ্রুত বিক্রি করে দিচ্ছি।”  

বশির উদ্দীন নামের নারায়ণগঞ্জের এক কৃষক বলেন, “সরকার বিদেশে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা আলু চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে আলু বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আলু দাম মণপ্রতি ১৫০০-১৬০০ টাকা করার দাবি করছি।” 

যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তের প্রোপাইটার শফিকুল আলম বলেন, “এ বছর আলুর দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ দুই/তিন বছরেও ২৫-৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। তারা যে দামে আলু উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই আলু বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।” 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল আলু আবাদ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আর স্থানীয় আলু আবাদ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “কৃষক যাতে লাভে আলু বিক্রি করতে পারে সেজন্য কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আলু রাখার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়ার অভিযোগ পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মৌসুমের সময় কৃষক আলু একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন আলু সংরক্ষণ করতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।”

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ