Prothomalo:
2025-03-25@04:32:00 GMT

এসিতে যত প্রযুক্তি

Published: 23rd, March 2025 GMT

ছবি: সংগৃহীত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আলুর দামে ক্রেতা খুশি, লোকসানে কৃষক

বিগত দু-এক বছরের তুলনায় পবিত্র রমজান মাসে প্রায় সব আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আলুর দাম কম হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতা। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে আলু বিক্রি করে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। আশানুরূপ দাম না পাওয়া ও হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গার সংকটের কারণে কৃষকরর বিপাকে পড়েছেন। 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে আলু বিক্রি করতে এসেছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষক মো. শহিদুল হক। ট্রাক ভাড়া দিয়ে এনে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আলু বিক্রি করছেন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা টাকা করে বিক্রি করেছেন। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ২০ টাকা। 

সোমবার (২২ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তে কৃষক মো. শহিদুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “চলতি বছর এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে ব্যয় ৫৫-৬০ হাজার টাকা।  আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৭০-৮০ মণ। এক মণ আলু বিক্রি করছি ৭৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ মণ উৎপাদন হলে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে মুন্সিগঞ্জের অনেক কৃষক  আলু উৎপাদন করবেন না। পাশাপাশি হিমাগারের সংকটের কারণে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি।”

শুধু শহিদুল হক একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী আলুর দাম না পাওয়ায় নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।

যাত্রাবাড়ীতে কথা মাদারীপুরের আরেক আলুচাষি সবুজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রতি বিঘা জমিতে এবার আলু চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৯০-১০০ মণ হারে আলুর ফলন হলেও আলুর পাইকারি বাজার মূল্য আশানুরূপ নয়। আলু চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে। হিমাগারে যাদের আলু বেশি তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাদের কম তাদেরটা পরে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। আলু পচনশীল তাই দ্রুত বিক্রি করে দিচ্ছি।”  

বশির উদ্দীন নামের নারায়ণগঞ্জের এক কৃষক বলেন, “সরকার বিদেশে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা আলু চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে আলু বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আলু দাম মণপ্রতি ১৫০০-১৬০০ টাকা করার দাবি করছি।” 

যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তের প্রোপাইটার শফিকুল আলম বলেন, “এ বছর আলুর দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ দুই/তিন বছরেও ২৫-৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। তারা যে দামে আলু উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই আলু বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।” 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল আলু আবাদ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আর স্থানীয় আলু আবাদ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “কৃষক যাতে লাভে আলু বিক্রি করতে পারে সেজন্য কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আলু রাখার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়ার অভিযোগ পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মৌসুমের সময় কৃষক আলু একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন আলু সংরক্ষণ করতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।”

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ