চট্টগ্রামে কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট জব্দ, আটক ২
Published: 23rd, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুইজনকে আটক করা হয়। জব্দকৃত সিগারেটের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৮০ কার্টন।
রবিবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়ক থেকে এসব সিগারেট জব্দ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- মো.
আরো পড়ুন:
খুলনায় সীমা হত্যা নাটকে এসআই শাহ আলমের কারাদণ্ড
ফতুল্লায় ইজিবাইক চালককে হত্যা, আটক ১
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল ও ডিবি) মো. রাসেল বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আমান বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে একটি পিকআপ ভ্যান থেকে ৬৩ হাজার ৮০০ প্যাকেট (৬৩৮০ কার্টন) ওরিস ও মন্ড ব্র্যান্ডের বিদেশি সিগারেট জব্দ করে। এ সময় দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি-ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ঐকমত্য কম
দিনভর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের সুপারিশের অধিকাংশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত জানানো দলটি আলোচনার টেবিলেও রাজি হয়নি। আগামী রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। বিরতিহীন তা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে শুধু সংবিধান এবং বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে আংশিক আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদ) সংস্কার নিয়ে কথা হয়নি।
সংস্কারের জন্য গঠিত পাঁচ কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কারের ৭০ সুপারিশের ১৪টিতে একমত বিএনপি। বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের ২০টিতে একমত বলে জানিয়েছিল।
রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশ বিষয়ে আংশিক একমত এবং একমত নয় বলে জানিয়েছে, সেগুলো নিয়েই সংলাপ চলছে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান-সংক্রান্ত যে ৫৬ সুপারিশে বিএনপি একমত নয় বা আংশিক একমত, সেগুলোর অর্ধেক নিয়ে কথা হয়েছে। এর পর আলাপ হয়েছে বিচার বিভাগ নিয়ে। ২৮টি সুপারিশের তিন-চারটিতে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আগের মতামত পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছে বিএনপি।
তবে ঐকমত্য কমিশন সূত্রের ভাষ্য, খুব বেশি বিষয়ে বিএনপি আগের অবস্থান বদল না করলেও খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বিএনপি যেসব সুপারিশে একমত নয়; কেন একমত নয়– কমিশনের এসব প্রশ্নের বিস্তারিত জবাব দিয়েছে। কমিশন তা নোট করেছে। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে বিএনপিকে রাজি করাতে চেষ্টা করা হবে। কমিশন সংস্কারের সুপারিশের যেমন যুক্তি তুলে ধরে, বিএনপিও দলীয় অবস্থানের পক্ষে পাল্টা যুক্তি দেয়। কিছু সুপারিশে বিএনপির যুক্তিকেও আমলে নিয়েছে কমিশন।
বৈঠকে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং আবু মো. মনিরুজ্জামান খান উপস্থিত ছিলেন।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আলোচনায় অংশ নেন।
গত বুধবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১ সুপারিশের ওপর ৫১ পৃষ্ঠার এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিপরীতে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় বিএনপি।
বৈঠকের পর আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ পথরেখা তৈরি হবে।
বৈঠক শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংস্কার সুপারিশের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আলাদা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়েছি। কমিশন কতটুকু গ্রহণ করবে, তা পরবর্তীকালে দেখা যাবে। আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং সংবিধান সংশোধনে যদি ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকে, সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না। বিএনপি মতামত দিয়েছে– অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতীত এমপিরা স্বাধীন থাকবেন।
গণভোট ও সংবিধান সংশোধন বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরও গণভোট লাগবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। বিএনপি বলেছে, সংবিধানের সব সংশোধনীতে গণভোট প্রযোজ্য নয়। যদি ১৪২ অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হয় তাহলে গণভোটে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ সংসদ যদি কোনো কোনো বিষয়কে গণভোটের জন্য উপযুক্ত মনে করে, তখন সেটা হবে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় স্পিকারসহ ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে। বিএনপির এ নেতা বলেন, এনসিসি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়নি। তবে দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছি, বিএনপি এনসিসি গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এনসিসির চর্চা নেই দেশে। হঠাৎ তা করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগ এবং সংসদ দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যে সময় সংসদ থাকবে না বা সংসদ ভেঙে যাবে, তখন এনসিসি খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, তা দেখতে হবে।
বিএনপি আগেই জানিয়েছিল, শেখ হাসিনার সরকারের করা পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানের যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা চার মূলনীতি পুনর্বহাল তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফেরত চায়। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল, কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যগুলো বাতিলে জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপি চেয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বাবস্থায় যাওয়া হোক। ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই; আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ মূলনীতি হিসেবে থাকবে। সুতরাং বিএনপি বহুত্ববাদের পক্ষেও নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার– যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে, সেগুলো প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা– কমিশন প্রস্তাব করেছে। এতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত।
বৈঠক সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সে জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে দলটি অভিমত জানিয়েছে।