আর্জেন্টিনার আক্রমণ রুখতে বিশেষ পরিকল্পনায় ব্রাজিল
Published: 23rd, March 2025 GMT
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় এক জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এবার তাদের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষ দলটির আক্রমণ সামাল দিতে এখন থেকেই কৌশল সাজাতে শুরু করেছে ব্রাজিল শিবির।
ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার গিয়ের্মে আরানা মনে করেন, আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডদের থামাতে ম্যাচজুড়েই রাখতে হবে সর্বোচ্চ মনোযোগ। তার মতে, প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে অকার্যকর করতে হলে রক্ষণভাগের প্রতিটি খেলোয়াড়কে রাখতে হবে সজাগ ও দায়িত্বশীল।
১৩ ম্যাচ শেষে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন অঞ্চলের শীর্ষে রয়েছে লিওনেল স্কালোনির দল। ব্রাজিলের বিপক্ষে মাত্র একটি পয়েন্ট পেলেই জাপানের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা নিশ্চিত করবে আর্জেন্টিনা। তবে বলিভিয়া যদি তাদের ম্যাচে পয়েন্ট হারায়, তাহলে মাঠে নামার আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে যাবে আলবিসেলেস্তেদের।
তবে আসন্ন ‘সুপার ক্লাসিকো’ ম্যাচে থাকছেন না আর্জেন্টিনার তিন তারকা লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ ও পাওলো দিবালা। যদিও তাদের অনুপস্থিতিতে উরুগুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত গোল করে দলকে জিতিয়েছেন থিয়াগো আলমাদা। ফলে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগকে এখনও হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
এই বিষয়ে আরানা বলেন, ‘আর্জেন্টিনা দারুণ ছন্দে আছে। তাদের আক্রমণভাগ সবসময়ই বিপজ্জনক। তাই আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। আক্রমণ রুখতে ভালো পজিশনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে এই ম্যাচে মেসি-নেইমার না থাকায় ‘সুপার ক্লাসিকো’র উত্তাপ কিছুটা কমে গেছে বলেই মনে করছেন অনেকে। তা সত্ত্বেও ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মনে করেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ মানেই আলাদা এক আবহ, ‘এই দ্বৈরথ সবসময়ই বিশেষ। দুই দলই জয়ের জন্য লড়াই করে। আমাদের দলে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, যারা এমন চাপের ম্যাচে আগেও খেলেছে। জয়টাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
বাংলাদেশ সময় আগামী ২৬ মার্চ ভোর ৬টায় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেকটি রোমাঞ্চকর লাতিন দ্বৈরথ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন ব শ বক প ব ছ ই আর জ ন ট ন র
এছাড়াও পড়ুন:
পূরণ হলো না স্বপ্ন, আহত রিয়ালে দুঃখী এমবাপ্পে
টিম বাসের সামনে পেছনে প্যারেড ঘোড়ার কুচকাওয়াজ। রাস্তার দুধারে সমর্থকের হাতে রাখা রংমশাল থেকে মায়াবী ধোঁয়া, যেন রাজার আগমন ঘটছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দুর্গে! ম্যাচের আগে এমবাপ্পেদের প্রবেশপথের এই দৃশ্য ফেসবুক ‘রিল’-এ ভাইরাল হয়েছিল! সেই সঙ্গে বেলিংহামের ‘প্রত্যাবর্তনের’ হুঙ্কার কিংবা সমর্থকদের ‘আর্সেনালকে দেখিয়ে দেওয়ার’ বিভিন্ন পোস্ট– সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটা গর্জে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ, বাস্তবের ম্যাচে বর্ষেনি ততটা!
বরং ঘরের উঠোনে ৮০ হাজার দর্শকের সামনে আর্সেনালের কাছে ১-২ গোলে কঠিনভাবে আহত হয়েছে লা ব্ল্যাঙ্কোসরা। পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী স্প্যানিশ ক্লাবটি এবার আটকে গেল কোয়ার্টারেই। সেখানে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ গোলের অগ্রগামিতায় ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল ১৬ বছর পর সেমিতে। যেখানে তাদের মোকাবিলা এখন প্যারিসের দল পিএসজির সঙ্গে।
অথচ এই পিএসজি ছেড়েই ইউরোপের কিং হতে মাদ্রিদে এসেছিলেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে গেলেই শুধুই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ইচ্ছাপূরণ হবে– এমন অন্ধ আকাঙ্ক্ষা তাড়া করেছিল তাঁকে। এই মুহূর্তে আহত রিয়ালে তাই সবচেয়ে দুঃখী এই মানুষটিই। বুধবার রাতে আর্সেনালের বিপক্ষে অফসাইডের একটি গোলের মিথ্যা হুল্লোড় ছাড়া কিছুই করতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলিয়ান যে তারকাকে নিয়ে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কার বয়কট করেছিল রিয়াল, সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই বা কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছেন। ৬৭ মিনিটে যে গোলটি তিনি করেছেন, সেটাতেও আর্সেনালের ডিফেন্ডারের স্পষ্ট ভুল ছিল। এমবাপ্পেকে ফাউল করার কারণে যে পেনাল্টি ভিএআর করে দিয়েছে বলে মাদ্রিদ সমর্থকরা অভিমান করেছেন, এর বাইরে আর ক’টা সুযোগই বা তারা তৈরি করতে পেরেছে।
পুরো ম্যাচে ৬০ শতাংশ বল পজিশনে রেখেও গোলমুখে ‘শটস অন টার্গেট’ মাত্র চারটি। যেখানে তিন গোলের বোঝা কাঁধে নিয়ে ম্যাচে নামা ফরোয়ার্ডদের ডিবক্সের কাছাকাছি এসেই আক্রমণ শানানোর কথা, সেখানে কিনা বেলিংহাম, ভিনিরা ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের চেষ্টা করে গেছেন। মিডফিল্ডে ভালভার্দে আর চুয়েমেনিকে এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্য অনেকটাই অপ্রস্তুত মনে হয়েছে।
তবে গোলরক্ষক কতুর্য়া বার্নাব্যুর দুর্গ সামলানোর চেষ্টা করে গেছেন সবটুকু নিংড়ে দিয়ে। ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্সেনালের ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকাও সাকার দুর্বল পেনাল্টি রুখে দেন কর্তুয়া। কিন্তু সেই সাকারেরই চিপ শটে গোল রিয়ালের এদিন প্রথম গোল হজম করতে হয়। সাকা বক্সে ঢোকার সময় একই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিয়ালের চার ডিফেন্ডার! ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে হাল ছেড়ে দেওয়া রিয়ালের জালে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্সেনালের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্তিনেল্লি।
এদিন ম্যাচের পর সবার শেষে মাঠ ছাড়েন কর্তুয়া। বেলজিয়ামের এই গোলরক্ষক সাত বছর ধরে আছেন দলটির সঙ্গে। তাই এদিনের হারের কারণ হিসেবে তাঁর চোখে ধরা পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গভীর এক শূন্যতা। ‘আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। এবং সবকিছু বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। আমরা কেন একটি দল হয়ে খেলতে পারছি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা উচিত। আপনি যদি শুধু ভিনি আর এমবাপ্পের ওপরই নির্ভর করে থাকেন, তাহলে তা মাঝে মাঝে কাজে দেবে, কিন্তু সবসময় দেবে না।’
কর্তুয়ার ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, যে রিয়াল সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে বলে ম্যাচের আগে তাদের ভিডিও দেখানো হয়েছিল লকার রুমে, সেই মাদ্রিদ অন্তত এটা না। প্রত্যাবর্তন করার প্রত্যাশার প্রচণ্ড চাপ, মিডফিল্ডের দুর্বলতা এবং আক্রমণ ভাগে তারকাদের স্বার্থপরতা– রিয়ালের মুকুট হরণে আপাতত এই তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছে স্প্যানিশ দৈনিকগুলো। যেখানে মার্কা শিরোনাম করেছে– ‘নো মিরাকল’।
প্রথম লেগের ম্যাচেই আর্সেনালের ডেকলান রাইস গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বাস্তবতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, দ্বিতীয় লেগে এসেও তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বার্নাব্যুতে সেলফি তুললেন। ম্যাচের ২৮ মিনিটে ডিবক্সের মধ্যে রাইসের বাধায় পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি রাইসকে হলুদ কার্ড পেনাল্টি দিলেও রাইস জোরালো যুক্তি দেন এই বলে যে তিনি পেছন থেকে এমবাপ্পেকে হাত বাড়িয়ে ধরে রাখলেও তা মাটিতে পড়ে যাওয়ার মতো জোরালো ছিল না। ভিএআর রাইসের এই যুক্তি মেনে নিয়ে তা বাতিল করে দেয়। ঠিক এখানেই মাদ্রিদের যত অসহায় আফসোস জমাট বাঁধে।