শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি ভয়ানক হয়ে উঠছে, কী কী ক্ষতি হচ্ছে
Published: 23rd, March 2025 GMT
‘কেমন আছ তুমি’ প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না শিশুটি। তার দুই হাতের শক্ত মুঠোয় একটি স্মার্টফোন। সে খুব মনোযোগ দিয়ে কার্টুনজাতীয় একটা ভিডিও দেখছে। একটি ভিডিও শেষ হওয়ার আগেই সে চলে যাচ্ছে আরেকটি ভিডিওতে।
কেজি শ্রেণির শিক্ষার্থী এই শিশুটির বয়স সাড়ে চার বছর। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি স্কুলে পড়ে সে। সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তার স্কুল। এরপর বাসায় ফিরিয়েই সে স্মার্টফোন নিয়ে বসে পড়ে।
ভিডিও দেখতে দেখতে দুপুরের খাওয়া শেষ করে শিশুটি। তবু তার ভিডিও দেখা শেষ হয় না। শিশুটি বেশির ভাগ সময় স্মার্টফোন নিয়ে থাকে। কখনো দেখে টেলিভিশন। হাত থেকে জোর করে স্মার্টফোন সরিয়ে নিতে চাইলে শিশুটি চিৎকার করে, কিংবা কান্না শুরু করে।
নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে শিশুটির মা প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বছর বয়স থেকে সন্তানকে দাদি ও গৃহকর্মীর তত্ত্বাবধানে রেখে তাঁরা (স্বামী-স্ত্রী) কর্মস্থলে যেতেন। শিশুটিকে ব্যস্ত রাখতে স্মার্টফোন দিয়ে রাখতেন তাঁরা। সেই থেকে সন্তান স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে।
সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এই মায়ের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম ‘স্মার্টফোন’। শুধু তিনিই নন, আজকাল তাঁর মতো এমন পরিস্থিতিতে আছেন অনেক অভিভাবক। তাঁদের চোখের সামনেই সন্তানদের স্মার্টফোন আসক্তি ভয়ানক হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু শিশুদের মধ্যে এই আসক্তির শুরুটা হয়েছে মূলত করোনার স্থবিরতার সময়ে, যা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। দেড় বছর বয়স থেকে শুরু করে নানা বয়সের শিশুরা আজকাল স্মার্টফোনে আসক্ত।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ জাতীয় প্রতিবেদন (ভলিউম ১) অনুসারে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ মুঠোফোন ব্যবহার করছে। এদের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
বিবিএসের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আইসিটির প্রয়োগ ও ব্যবহারবিষয়ক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৭০ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার অন্তত একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আর শহর-গ্রামনির্বিশেষে খানা পর্যায়ে (পরিবার) ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখন ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ।
শিশুরা মূলত অভিভাবকদের ইন্টারনেটযুক্ত ব্যক্তিগত স্মার্টফোনই ব্যবহার করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সম্মোহনী কায়দাস্মার্টফোনে শিশুরা কী দেখে—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সন্তানকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে দেন, এমন বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা জানান, তাঁদের সন্তানেরা মূলত ইউটিউব দেখে।
এই ভিডিও প্ল্যাটফর্মে শিশুদের জন্য আছে নানা চ্যানেল। ইউটিউবে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুদের চ্যানেলের নাম ‘কোকোমেলন’। এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৯১ মিলিয়ন বা ১৯ কোটি ১০ লাখ।
চ্যানেলটির অত্যন্ত রঙিন ও চিত্তাকর্ষক ভিডিওগুলো সম্মোহনী কায়দায় শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখে। এ ছাড়া দ্রুত দৃশ্যের পরিবর্তন ও উদ্দীপক শব্দের মাধ্যমে শিশুদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের সামনে ধরে রাখে চ্যানেলটি।
রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা নোওরিন আহমেদের দুই মেয়ে কোকোমেলনের ভক্ত। বড় মেয়ের বয়স ছয় বছর। ছোটটির বয়স দুই বছর।
নোওরিন বলেন, স্মার্টফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই একই জিনিস দেখতে থাকে তাঁর দুই মেয়ে। দুজনই যেন একপ্রকার ঘোরের মধ্যে থাকে। তারা স্মার্টফোন রাখতে চায় না। স্মার্টফোন রাখলে তারা টেলিভিশন দেখার জেদ করে।
সন্তানদের এমন অবস্থা দেখে কোকোমেলন নিয়ে গুগল করেন নোওরিন। তিনি দেখতে পান, শিশুদের মস্তিষ্কে কোকোমেলনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে অনেক তথ্য ইন্টারনেটে আছে। এরপর স্মার্টফোন ও টিভিতে কোকোমেলন চ্যানেল ‘ব্লক’ করে দেন তিনি।
এদিকে সারা দিন অনলাইনে নানান ভিডিও দেখে তিন বছরের এক শিশু। সে অস্পষ্ট এক ভাষায় কথা বলে। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, আরবি—এমন কয়েকটি ভাষার নানান শব্দ মিলিয়ে সে একেকটি বাক্য বলে। শিশুটির মা বলেন, ইউটিউবে নানান ভিডিও দেখে দেখে এই অবস্থা হয়েছে সন্তানের।
সন্তান ইউটিউবে কী দেখবে, কী দেখবে না—এর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন অভিভাবকেরা। তবে শিশুদের জন্য বিশেষ অ্যালগরিদমে তৈরি ‘কিডস ইউটিউব’-এর যে চ্যানেলগুলো আছে, সেগুলোর বেশির ভাগের অবস্থা কোকোমেলনের চেয়ে খুব একটা নিরাপদ নয়।
পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর মা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাসার ওয়াইফাই লাইনে ঝামেলা হলে সন্তান নানানভাবে বিরক্ত করে। ইউটিউব দেখার জন্য জেদ করে। সন্তানের এই মুঠোফোন আসক্তি কমানোর জন্য আজকাল প্রায়ই বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে।
স্মার্টফোন, টেলিভিশন, ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহারের পেছনে যে সময় ব্যয় হয়, তাকে বলা হয় ‘স্ক্রিন টাইম’। শিশুবিশেষজ্ঞদের দেওয়া বৈশ্বিক নির্দেশিকা অনুসারে, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের সকল প্রকার স্ক্রিন থেকে দূরে রাখতে হবে। ২ থেকে ৫ বছর বয়সীদের জন্য তা দৈনিক এক ঘণ্টার বেশি নয়। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য স্বাভাবিক স্ক্রিন টাইম দুই ঘণ্টা।
কিন্তু ২০২৩ সালের একটি আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা গেছে, ৮ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের দৈনিক স্ক্রিন টাইম গড়ে ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা। একই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৭ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন যে তাঁদের সন্তানের স্মার্টফোন আসক্তি রয়েছে।
সমসাময়িক কোনো গবেষণা না থাকলেও এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে আজকাল স্মার্টফোন ব্যবহার করছে আট বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুরাও। এমনকি জন্মের পরপরই আজকাল স্মার্টফোনে সঙ্গে পরিচয় ঘটে শিশুর। সন্তানকে খাওয়ানোর সময়, ব্যস্ত কিংবা শান্ত রাখতে মা–বাবারাই প্রথম শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন। তখন শিশুও শান্ত হয়। গভীর মনোযোগে স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে সে কাটিয়ে দেয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এটা দেখে মা-বাবাও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
ছয় বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বাবা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিকে বাচ্চাকে শুধু খাওয়ানোর সময় মুঠোফোন দেখতে দেওয়া হতো। কিন্তু এখন তাঁরা আর তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সুযোগ পেলেই ফোনের জন্য বায়না করছে মেয়ে।
মেয়ের সামনে তাঁরা দুজন (স্বামী-স্ত্রী) ফোন ব্যবহার করেন কি না, জানতে চাইলে তিনি ‘না’ সূচক জবাব দেন।
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড অ্যাডিকশনে ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা তাদের মা-বাবার আচরণ পর্যবেক্ষণ ও অনুকরণ করে। তাই মা-বাবার মধ্যে কারও স্মার্টফোন আসক্তি থাকলে সন্তানও স্মার্টফোন আসক্ত হতে পারে। তবে আরও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম দিকে অনেক মা-বাবা সন্তানের এই আসক্তি বিষয়টি ধরতে পারেন না কিংবা দেখেও খুব একটা গুরুত্ব দেন না। তাঁরা যত দিনে বিষয়টি বুঝতে পারেন, তত দিনে দেরি হয়ে যায়।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলপড়ুয়ারাসহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুবাদে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হচ্ছে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে। বিভিন্ন অনলাইন গেম ছাড়াও নতুন কোনো গান বা ভিডিও—সবকিছু সম্পর্কে তাকে অবগত থাকতে হয়। না হলে সহপাঠীদের সঙ্গে মিশতে তার অসুবিধা হয়।
এই স্কুলশিক্ষার্থীর বাবা বলেন, পাঁচ বছর আগে করোনার সময় স্কুলের অনলাইন ক্লাসের জন্য সন্তানকে ট্যাব কিনে দিয়েছিলেন। এর পর থেকে কখনো একটানা আবার কখনো একটু পরপর ট্যাব দেখছে সন্তান। রাগ করে অনেকবার ট্যাব আটকেও রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু তখন সন্তান অস্থির হয়ে যায়।
হাতে মুঠোফোন না থাকার ফলে সৃষ্ট এই আচরণকে বলা হয় ‘নোমোফোবিয়া’ বা ‘নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া’। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের মধ্যেও এই প্রবণতা দেখা যায়।
তা ছাড়া ইন্টারনেটে নানা রকম বুলিংয়ের শিকার হতে হয় স্কুলপড়ুয়া শিশুদের। তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান নাম ‘বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’) ২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৫৯ শতাংশ শিশু-কিশোরেরা অনলাইনে সাইবার বুলিং ছাড়াও নানা রকম যৌন ও শাব্দিক হেনস্তার শিকার হয়। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে।
স্কুলশিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তির ভয়াবহতার কথা জানিয়ে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকার একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, কিছু শিশুর অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাদের জন্য ‘শ্যাডো টিচার’ বা ‘ছায়া শিক্ষক’ রাখা হয়েছে। এই শিক্ষকেরা স্মার্টফোনে আসক্ত শিশুদের বিশেষ যত্ন নেন। এতে শিশুরা উপকৃতও হচ্ছে। কিন্তু অভিভাবকেরা যদি সন্তানের মুঠোফোন দেখা কমাতে না পারেন, তাহলে এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে না।
বিশেষজ্ঞের মতামতস্মার্টফোন আসক্তিকে মানসিক রোগ হিসেবে বর্ণনা করে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত এটি একধরনের আচরণগত সমস্যা। তবে স্মার্টফোন যদি কারও স্বাভাবিক জীবন বিপন্ন করে, মানসিকভাবে অস্থির করে তোলে, তাহলে অবশ্যই এটি মানসিক রোগ।
আজকাল পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসছে উল্লেখ করে শামসুল আহসান বলেন, প্রয়োজনের খাতিরেই পরিবারের সব সদস্যকে বাইরে কাজ করতে হচ্ছে। শিশুরা বড় হচ্ছে একা একা। বাইরে মাঠ নেই, ঘুরতে যাওয়ার জায়গা নেই। সব মিলিয়ে শিশুদের সময় কাটছে স্ক্রিনে। এভাবেই মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশুরা। পরবর্তী সময়ে এই শিশুদের ভুগতে হচ্ছে নানান দীর্ঘমেয়াদি মানসিক সমস্যায়।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, স্মার্টফোন আসক্তির কারণে দুই-তিন বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ‘স্পিচ রিগ্রেশন’ দেখা দিচ্ছে। অর্থাৎ এই শিশুরা বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছে না। বর্তমানে এ ধরনের শিশুর সংখ্যা অনেক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় স্মার্টফোন আসক্ত শিশুরা। মাথাব্যথা, মাইগ্রেন হওয়ার পাশাপাশি কমে যায় দৃষ্টিশক্তি। ফলাফল—১০ বছরের নিচে অনেক শিশুকেই চশমা পরতে হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গায় শুয়ে-বসে মুঠোফোন দেখার কারণে শিশুরা সাধারণত স্বাভাবিক নড়াচড়া ও খেলাধুলা করে না। ফলে স্থূলতা, ইটিং ডিজঅর্ডার (খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা), ইনসমনিয়া (নিদ্রাহীনতা) ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দেয়। যা দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, কিডনির রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই শিশুরা তারুণ্যে পৌঁছায় নানা মানসিক ও শারীরিক রোগ নিয়ে, যা তাদের সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
মাহমুদুল হক চৌধুরী আরও বলেন, মা-বাবার কাছে নানা বিষয় শেখার বয়সে স্মার্টফোন ধরা শিখছে শিশুরা। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে? ফলে স্মার্টফোনে আক্রান্ত সন্তানদের চিকিৎসার জন্য শরণাপন্ন হন অভিভাবকেরা। কিন্তু সমাধান তো অভিভাবকদের হাতেই।
অভিভাবকেরা যা করবেনশিশুদের স্মার্টফোন আসক্তি থেকে সুরক্ষা দিতে অভিভাবকদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ। এগুলো হলো—
শিশুর হাতে স্মার্টফোন দেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকুন।
শিশুর সামনে অভিভাবক বা শিশুর যাঁর তত্ত্বাবধানে থাকে, তাঁরাও ঘন ঘন স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না। কারণ, শিশুরা যা দেখে, তা–ই অনুকরণ করে।
শিশুকে খাওয়ানোর জন্য, শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন দেওয়া বন্ধ করতে হবে। স্মার্টফোন, ট্যাব ইত্যাদি না দিয়ে শিশুকে বই দিন, খেলনা দিন।
সন্তান স্মার্টফোন আসক্ত হয়ে পড়লে তার থেকে হঠাৎ জোর করে তা সরিয়ে নেবেন না। প্রথমে সময় ফোন দেখার সময় বেঁধে দিন। তাকে অন্য কাজ দিন। ধীরে ধীরে তার স্ক্রিন টাইম কমিয়ে আনুন।
শিশুকে রঙিন গল্পের বই দিন। রংতুলি দিন। নাচ বা গান শেখান। কারাতে বা তায়কোয়ান্দো শিখতে দিন। তাকে নিয়ে গাছ লাগান। এতে শিশুর একটি শখের জায়গা তৈরি হবে, যা তাকে যেকোনো আসক্তি থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ন ব যবহ র কর বছর বয়স দ র ব যবহ র করছ প রথম আল ক ফ ন আসক ত দ র জন য পর ব র র স মন এই শ শ র সময় আজক ল সমস য অবস থ বছর র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন আর্থসামাজিক বাস্তবতায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে
প্রধানত কৃষি-নির্ভর গ্রামীণ জনপদের বিপন্ন জনগোষ্ঠির কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অনুসরণীয় সাফল্য। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে হতে যাচ্ছে। এই নতুন আর্থসামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো দরকার। সোমবার উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘সামাজিক সুরক্ষায় সংস্কার প্রসঙ্গ’ শিরোনামে প্রাক-বাজেট ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকরা।
ওয়েবিনারের ধারণাপত্র উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও এই বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসর ভাতা দেয়ায় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ। প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ও বিপন্ন নাগরিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োজিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ০.৭ শতাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা বাবদ, যেখানে প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ অনুপাত ১.১ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত।
প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেন সমাজতাত্ত্বিক এবং বিআইজিডি-এর রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী। বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রধানত কৃষি-নির্ভর পরিবারের দিকে নীতি-মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত আলী বলেন, কৃষিতে এখনও শ্রমশক্তির বৃহত্তম অংশটি নিয়োজিত থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি দ্রুত বাড়ছে। তাই এই দুই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রান্তিক পরিবারগুলোর জন্য নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওপর জোর দেন তিনি।
নদী বিশেষজ্ঞ এবং রিভারাইন পিপল-এর সংগঠক শেখ রোকন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা দেয়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ আর্থ-সামাজিকভাবে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তাদের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হয় এমন সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা একান্ত জরুরি বলে মত দেন তিনি।
সিডব্লিউসিএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ যেহেতু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, তাই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক পরিবারগুলোর সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলের অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সহজ হলেও, নগরাঞ্চলে শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিতদের চিহ্নিত করায় অনেক রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই নগরাঞ্চলের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য উপকারভোগীদের চিহ্নিত করতে আলাদা ডাটাবেজ গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন চর, হাওড় ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারি এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান।