ঈদে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
Published: 23rd, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর-২০২৫ উপলক্ষ্যে সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
রোববার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে কয়েকটি ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা মহানগর হতে দেশের বিভিন্ন জেলায় গমণ করবেন। পবিত্র ঈদের সময় সাধারণত প্রায় ১ কোটির অধিক মানুষ ঢাকা মহানগর ত্যাগ করেন এবং প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ অন্যত্র হতে ঢাকায় প্রবেশ করেন। ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্নে ও স্বাচ্ছন্দ্য করার নিমিত্তে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে গত ৯ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং ঈদ পরবর্তী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরী চলাচল বন্ধ রাখা; আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর/আশুলিয়া সড়ক একমুখীকরণ; বিআরটি লেন দিয়ে শুধু আউটগোয়িংয়ের যান চলাচলের ব্যবস্থাকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ওই সিন্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৫ মার্চ হতে ঈদের পূর্ব রাত পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ।
১.
২. ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধু ঢাকা হতে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারশন) সব ধরনের যানবাহন ঢাকা হতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করবে। উক্ত বিআরটি এর ঢাকায় প্রবেশের লেনটি দিয়ে কোন যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটি এর ঢাকা অভিমুখী যানবাহন সমূহ অন্যান্য যানবাহনের সাথে নরমাল রাস্তায়/লেনে ঢাকায় আগমন করবে।
৩. উল্লিখিত তারিখ হতে ঈদযাত্রা সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন সমূহকে নিম্নবর্ণিত সড়কসমূহ পরিহার করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হলো:—
* ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এয়ারপোর্ট টু আব্দুল্লাপুর)
* ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড)
* পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট সড়ক)
* ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক (মিরপুর রোড: শ্যামলী টু গাবতলী)
* ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু তাঁতিবাজার টু বাবুবাজার ব্রিজ)
* ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গা ব্রিজ)
* মোহাম্মদপুর বসিলা ক্রসিং হতে বসিলা ব্রিজ সড়ক
* আব্দুল্লাপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক
এমতাবস্থায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন এলাকায় যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষা ও যানজট এড়ানোর জন্য এ নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সকল যানবাহনের চালকগণ ও নগরবাসীকে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এমপ র জন য প রব শ ব আরট
এছাড়াও পড়ুন:
এবার ছেঁড়াফাটা ময়লা নোটেই কি বাচ্চাদের ঈদ সালামি
এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টাকার নতুন নোট বাজারে আসবে না। এটা পুরোনো খবর। কিন্তু বাচ্চাদের ঈদ সালামি বা ঈদি কি পুরোনো নোটেই দিতে হবে? সাধারণত ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকার নতুন নোটেই ঈদের সালামি বেশি দেন সবাই। ছেলে-মেয়ে, ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজি-ভাতিজাসহ প্রিয়জনদের নতুন নোট দিয়ে ঈদের সালামি দেওয়া বছরের পর বছর অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
বাজারে এখন ১০ টাকা, ২০ টাকা ও ৫০ টাকার নোটের অবস্থা বেশ খারাপ। ময়লা ও ছেঁড়াফাটা নোটই বেশি। নতুন নোট না থাকায় এবার সালামি দিতে এসব পুরোনো নোট ব্যবহার করতে হবে। পুরোনো নোটে বাচ্চাদের কতটা খুশি করা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ঈদ আনন্দে ভাটা পড়বে না তো?
আবদুল্লাহ আল মামুন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিবছর তাঁর ছেলে অনুভব ও ভাইয়ের সন্তানদের ঈদ সালামি দিতে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিনে উত্তরার একাধিক ব্যাংক শাখায় গিয়ে সংগ্রহ করতে পারেননি। কারণ, ব্যাংকের শাখায় নতুন টাকার নোট নেই। ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নোট আছে শুধু। আবদুল্লাহ আল মামুন চিন্তায় আছেন, কীভাবে বাচ্চাদের বোঝাবেন যে এবার ঈদ সালামিতে নতুন টাকা নেই। পুরোনো টাকাই ভরসা।
ঈদের সালামি পেতে বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ থাকে। কতটা আগ্রহ আছে, এর একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আর্থিক খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এ হক ভূঁইয়া। ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে মালদ্বীপ বেড়াতে যাবেন। কিন্তু তাঁর আট বছরের ছেলে মালদ্বীপ বেড়াতে যেতে আগ্রহী নয়। কারণ, সে তাঁর বাবাকে জানিয়েছে, ঈদের সময় বেড়াতে গেলে তাঁর নতুন টাকার ঈদ সালামি ‘মিস’ হয়ে যাবে। এ নিয়ে তাদের পরিবারে হাসি–মশকরা চলছে।
যে কারণে টাকার নতুন নোট নেইপ্রতিবছর ঈদের সময় ১৫–২০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোট বাজারে ছাড়া হয় প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়ায়। বাজার থেকে সমপরিমাণ পুরোনো নোট তুলে নেওয়া হয়।
১০ মার্চ নতুন নোট বিতরণ স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কয়েকটি পক্ষ থেকে আপত্তি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ঈদ উপলক্ষে ১৯ মার্চ থেকে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট দেওয়া হবে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাংকে টাকার নতুন নোট বিতরণ নেই। কোনো কোনো শাখায় ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকার নতুন নোট মিলছে। ঈদের সালামি হিসেবে ৫০০ টাকা ও ১ হাজার টাকা খুব বেশি জনপ্রিয় নয়।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের তেজগাঁও শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর ব্যাংকের শাখায় গড়ে ২০০ কোটি টাকার মতো আমানত থাকে। প্রতিবছর ঈদের সময় এ শাখায় ৩০-৪০ লাখ টাকার নতুন নোট পাওয়া যায়। ব্যাংকের আমানতের অনুপাত অনুসারে নতুন নোটের সরবরাহ করা হয়। এবার নতুন নোট বিতরণ স্থগিত থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিদিন গ্রাহকেরা নতুন নোটের জন্য আসেন। কিন্তু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পুরোনো নোটের বাজারে দাম বেশিএবারের ঈদে নতুন নোট না আসার খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই মতিঝিল ও গুলিস্তানের এই নতুন টাকার বাজার চড়া। ২, ৫, ১০, ২০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কিনলে আগের চেয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এবারের ঈদে নতুন নোট বাজারে না ছাড়ার সিদ্ধান্তে এমন প্রভাব পড়েছে।
প্রতি বান্ডিলে গতবারের ঈদের মৌসুমের চেয়ে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ১০ ও ২০ টাকার নতুন নোটের চাহিদাই বেশি।
১০ টাকার এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রির জন্য ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা হাঁকছেন। এক বান্ডিলে ১০০টি নোট থাকে এবং এর মূল্যমান ১ হাজার টাকা। দর-কষাকষি করে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে একেকটি বান্ডিল ক্রেতারা কিনছেন। গত বছর পবিত্র রোজার সময় এমন এক বান্ডিল নতুন নোট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। অর্থাৎ নতুন নোটের বান্ডিলপ্রতি ক্রেতাদের বাড়তি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে, যা গত বছর পবিত্র রোজার সময় ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ২০ টাকার এক বান্ডিলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ৪৫০ টাকার কমবেশি।
নতুন নোট আসবে আগামী মাসেকেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। টাকার নকশা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নোটের নকশায় স্থান পাবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।