পেঁয়াজ রপ্তানি থেকে শুল্ক তুলে নিয়েছে ভারতের রাজস্ব বিভাগ। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক তুলে নিচ্ছে দেশটি। এত দিন পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক ছিল। অর্থাৎ এখন থেকে ভারতের রপ্তানিকারকেরা বিনা শুল্কে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে পারবেন।

গতকাল শনিবার ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া ভারতীয় গণমাধ্যমেও এ খবর বেরিয়েছে।

প্রায় দেড় বছর ধরে ন্যূনতম দর বেঁধে দেওয়াসহ পেঁয়াজ রপ্তানিতে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল ভারত সরকার। এবার সেখান থেকে বেরিয়ে এল তারা। মূলত পেঁয়াজের মজুত বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

এমন একসময় ভারত এই রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করল, যখন বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কম। অতীতে দেখা গেছে, বাংলাদেশের বাজারে যখন পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে, তখন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির কারণে দাম আরও কমে যায়। তাতে কৃষকেরা মার খান। আবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পর দেশের বাজারে পেঁয়াজের বাড়তি দাম কমে গেছে, এমন ঘটনাও দেখা গেছে।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণের নিয়ে একধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোনো কোনো বছর চাহিদার চেয়েও পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলেও পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

অভিযোগ আছে, দেশে প্রতিবছর কী পরিমাণ পেঁয়াজের প্রয়োজন, তার কত অংশ দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানো সম্ভব এবং কত অংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। মজুতদারেরা তার সুযোগ নেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে এই সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যেতে পারেই বলে শঙ্কা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা যায়, আজ রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এই দিনে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

দেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। খেত থেকে পেঁয়াজ তুলে ফেলা হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে এখন পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজের মজুত আছে। আমদানি করা পেঁয়াজ তেমন একটা নেই। সে কারণে টিসিবির দৈনন্দিন হিসাবের খাতায় আজকের দিনে আমদানি করা পেঁয়াজের দামের ঘরশূন্য। তবে এক মাস আগে অর্থাৎ ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। তখন দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

ভারতে কবে থেকে এই শুল্ক ছিল

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ ধরে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ওই সময় অভ্যন্তরীণ ঘাটতির আশঙ্কায় পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে ভারত। ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগেই পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সে সুবিধা নিতে পারছিলেন না দেশটির কৃষকেরা। এ নিয়ে তখন আন্দোলন শুরু করেন তাঁরা। আন্দোলনের মুখে ও লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে গত বছরের ৪ মে আবার পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

সেই সঙ্গে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক এবং প্রতি টনের ন্যূনতম মূল্য ৫৫০ ডলার ঠিক করে দেওয়া হয়। এরপর ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রত্যাহারের পাশাপাশি রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এবার সেই ২০ শতাংশ শুল্কও প্রত্যাহার করা হলো।

এর আগেও ভারত সময়-সময় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে বিদেশে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বন্দ্বও হয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের সেই নিষেধাজ্ঞার পর ভারত বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় জ আমদ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য-পরিবেশ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেড়েছে

দেশের ব্যাংকগুলো ২০২৪ সালের প্রথমার্ধের চেয়ে শেষ ছয় মাসে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার-সিএসআর ব্যয় কিছুটা কমেছে। তবে বছরের শেষ ছয় মাসে আগের চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রশমন অভিযোজন খাতের সিএসআর ব্যয় বেড়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলো ২০২৪ সালে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার-সিএসআর ব্যয় করেছে ৬১৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাস সময়ে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৩০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বছরের প্রথম ছয় মাস অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছিল ৩০৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা।  আগের ছয় মাসের তুলনায় বছরের শেষ দিকে সিএসআর ব্যয় কমেছে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

খাতভিত্তিক সিএসআর ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের ব্যাংকগুলোর  শিক্ষা খাতে সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এ খাতে সিএসআর ব্যয় হয়েছিল ৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে শিক্ষা খাতে সিএসআর ব্যয় উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে।
 
শিক্ষা খাতে ব্যয় কমলেও স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যখাতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেড়েছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সিএসআর ব্যয় হয়েছে ৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।  একই বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এ খাতে সিএসআর ব্যয় হয়েছিল ৭১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে স্বাস্থ্যখাতের সিএসআর ব্যয় বেড়েছে।

এদিকে, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রশমন-অভিযোজন খাতে ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে সিএসআর ব্যয় হয়েছে ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা। একই বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে এ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ খাতেও সিএসআর ব্যয় উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যান্য খাতে ষান্মাসিকে সিএসআর ব্যয় কিছুটা কমেছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্যান্য খাতের সিএসআর ব্যয় হয়েছে ১৬৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এ খাতে সিএসআর ব্যয় হয়েছিল ১৬৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

২০২৪ সালে ৬ টি ব্যাংক কোনো ধরনের সিএসআর ব্যয় করেনি। ব্যাংকগুলো হলো- বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক।

ঢাকা/এনএফ/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাবির পরীক্ষার জন্য শনিবার বন্ধ থাকবে জবি
  • জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি ফেরালেন ব্রিটিশ
  • স্বাস্থ্য-পরিবেশ খাতে ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় বেড়েছে
  • তিতাস গ্যাসে চাকরি, অফিস সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা
  • বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে ট্রাম্প কি সত্য বলছেন, তাঁর চিন্তা কি পশ্চাৎপদ
  • ধোঁয়ার ঝুঁকিতে শিশুস্বাস্থ্য
  • আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের এমডি ও দুই ডিএমডিসহ চার কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক ছুটিতে
  • গোলকিপার এদেরসন গোল করিয়েই যাচ্ছেন
  • ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: ঢাকায় গড় উপস্থিতি ৮৫ শতাংশ