দরজায় কড়া নাড়ছে গ্রীষ্মকাল। গরমের আগাম প্রস্তুতি নিতে বাজারে এসির খোঁজ করছেন অনেকে। কোন ব্র্যান্ডের এসি ভালো, শরীরের পাশাপাশি পকেটে স্বস্তি দেবে কোন ব্র্যান্ড—কেনার আগে বিভিন্ন প্রশ্নের জট বাঁধছে ক্রেতাদের মাথায়। সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মিললেই ঘরে ঠাঁই পাচ্ছে নতুন এসি। একসময় বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচিত এসি এখন শহর থেকে বন্দরে, ছড়িয়ে গেছে সবখানে। মানুষের ঘরে ঘরে এসি যত সহজলভ্য হয়েছে, তত বেড়ে উঠেছে দেশি কোম্পানিগুলো।

একটা সময় এসির বাজার ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। বিদেশ থেকে নামীদামি ব্র্যান্ডের এসি আমদানি করে বিক্রি করা হতো দেশে। বড় বড় অফিস কিংবা শোরুম বাদে খুব একটা এসির প্রচলন ছিল না। আমদানি করেই সেই চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। মিনিস্টার ব্র্যান্ডের হেড অব মার্কেটিং গোলাম কিবরিয়া বলেন, একটা সময় যখন দেশে এসির চাহিদা বাড়তে থাকল, তখন নিজেদের প্রয়োজনেই দেশীয় কোম্পানিগুলো এসির বাজারে প্রবেশ করে। এখন বাংলাদেশের অনেক ব্র্যান্ড বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে টেক্কা দিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে। 

দেশি ব্র্যান্ডগুলোর উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দেশেই উৎপাদনের সুবিধা। মিনিস্টার কোম্পানি তাদের সব এসি দেশেই অ্যাসেম্বল করে। প্রয়োজনীয় কিছু কাঁচামাল বাদে বাকি সবটা তৈরি করা হয় দেশেই। একইভাবে উৎপাদন করা হয় ওয়ালটন, যমুনার মতো সব দেশি ব্র্যান্ডের এসি। দেশেই উৎপাদন করায় সহজে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। 

যমুনা গ্রুপের ডিরেক্টর অব মার্কেটিং সেলিম উদ্দিন জানান, বর্তমান এসির বাজারের ৭০ ভাগ এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। শহুরে এলাকায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর চল থাকলেও মফস্​সলের বাজার পুরোটাই এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সাশ্রয়ী মূল্য ও সহজলভ্যতা। 

সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে এসির বাজার দুই থেকে তিন গুণ হয়ে গেছে। একটা সময় এসির দেখা মিলত বড় বড় অফিস আর ধনী লোকের বাড়ির ড্রয়িংরুমে। এখন প্রতিটি মসজিদ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ক্লাসরুমে এসি আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসির চাহিদা। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক কম দামে সবার কাছে পৌঁছাতে পারায় মফস্​সলে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’

দেশি ব্র্যান্ডগুলোকে টেক্কা দিতে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও ঘাঁটি গেড়েছে বাংলাদেশে। একটা সময় পুরো ইউনিট ধরে রপ্তানি হলেও কয়েক বছর ধরে নিজেদের ব্যবসার ধরন পাল্টেছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মতো তারাও সংযোজন করছে বাংলাদেশে। গ্রী, জেনারেল বিভিন্ন মডেলের এসি অ্যাসেম্বল করছে নিজেদের ওয়্যারহাউসে। প্রযুক্তি ও উপাদানের দিক থেকে দেশি–বিদেশি ব্র্যান্ড সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। বর্তমানে যমুনা ইলেকট্রনিকস প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ ইউনিট এসি তৈরি করে। ইলেক্ট্রো মার্টের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা প্রতিবছর তিন লাখ ইউনিট। 

প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের এসি বাজারে ভিশন ব্র্যান্ডের মার্কেট শেয়ার প্রায় ১১ শতাংশ। বর্তমানে ১ টন এবং ১.

৫ টনের ইনভার্টার এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে এসির সঠিক ব্যবহার ও দুর্ঘটনা এড়াতে ক্রেতাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ভিশন এসিতে উন্নত ফায়ার-প্রুফ কন্ট্রোল বক্স থাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধ করা যায়। এ ছাড়া এই ঈদে ভিশন এসি নিয়ে এসেছে ‘বিল ব্যাক অফার’, যেখানে এসি কিনলে গ্রাহকেরা ২ মাসের বিদ্যুৎ বিল ফেরত পাবেন। ভিশন এসিতে ১০০ শতাংশ কপার টিউব ব্যবহৃত হওয়ায় এসি যেমন দ্রুত ঠান্ডা হয়, তেমন বিদ্যুৎও সাশ্রয় হয়।

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের ক্যাটাগরি হেড আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭ লাখ এসি বিক্রি হয়েছে। যেখানে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য ছিল বেশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলনামূলক কিছুটা আগেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায় এ বছর ১০ লাখের বেশি এসি বিক্রি হবে। গ্রীষ্মকাল যত ঘনিয়ে আসবে, তত এসির বিক্রি বাড়বে। 

ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের মার্কেটিং বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান যোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর গরমের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি এসি বিক্রি হবে এ বছর। জাপানি ব্র্যান্ড ডাইকিন ও হিটাচির একমাত্র আমদানিকারক ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস। এ ছাড়া নিজস্ব ব্র্যান্ড ট্রান্সটেক এসি তৈরি করে থাকে তারা।  

মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া জানান, এসির মার্কেটের দ্রুত বড় হওয়ার কারণ প্রয়োজনীয়তা। প্রতিটি বাসায় একটি টিভি, একটি ওভেন হলেই চলে। কিন্তু বেশির ভাগ বাসাতেই একটি এসি হলে চলে না। প্রতি বেডরুমে একটি করে হলেও দুই থেকে তিনটি এসি প্রতি বাসায় প্রয়োজন হয়। ফলে এসির বাজার প্রতিবছরই সম্প্রসারিত হচ্ছে। 

সোহেল কিবরিয়া বলেন, ধীরে ধীরে এসি বিলাসপণ্য থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত হওয়ায় সেটি হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম বলে মনে করছেন তিনি।  মিনিস্টার এসিতে ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। যে কারণে মধ্যবিত্ত মানুষজনের পছন্দের তালিকায় আছে মিনিস্টার এসি। এই বছর নতুন ১৮টি মডেলের এসি যুক্ত হবে বাজারে। ইনভার্টার টেকনোলজি থাকছে এসিতে। এ ছাড়া থাকছে কুল প্লাজমা টেকনোলজি যুক্ত এসি। এই এসিগুলো ১ মিনিটের মধ্যে ঘর ঠান্ডা করে দেবে। এরপর তাপমাত্রা ঘরের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। সামনে যুক্ত হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। ফলে এসির তাপমাত্রা সেট করার প্রয়োজন পড়বে না। বরং এসি আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ও ঘরের তাপমাত্রা অনুযায়ী নিজের তাপমাত্রা সেট করে নেবে। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে আর আমরা সে অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করছি।

কয়েক বছর আগেও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় নন-ইনভার্টার এসি থাকলেও এখন বাজারের প্রায় ৯৫ শতাংশ এসি ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই নিয়েছে ইনভার্টার এসি।

কোভিডের কারণে কয়েক বছর এসির মার্কেটে সামান্য প্রভাব পড়লেও তা দ্রুতই কাটিয়ে উঠেছে কোম্পানিগুলো। দেশে এখন প্রতিবছর এসির চাহিদা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ ইউনিট। ২০-২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে চাহিদা। 

প্রতিবছরই গ্রীষ্মকাল এলে চাহিদা সৃষ্টি হয় নতুন এসির ইউনিটের। প্রতিনিয়ত তৈরি হওয়া নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি থেকে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন নিজের পছন্দের এসি। একসময়ের বিলাসপণ্য হিসেবে পরিচিত এসি, এখন আর দশটা প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক পণ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। শহর-বন্দর থেকে মফস্​সলে—এসি এখন জায়গা করে নিচ্ছে মধ্যবিত্তের বেডরুমেও।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এস র ব জ র এস র চ হ দ ইনভ র ট র র পছন দ র গত বছর ট র এস ইউন ট আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

১২ বছর বিটিভির কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হয়নি তিশার

‘নাটক, সিনেমার কাজ নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম, ১২ বছর বিটিভির কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হয়নি। বিটিভির কাজ একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর করতে হয়। তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময় থাকে। তবে বিষয়টি মোটেও এমন না যে আমার কাছে প্রস্তাব আসেনি। কয়েকবার প্রস্তাব পেয়েছি, কিন্তু ব্যাটে–বলে মিলে নাই বলে করা সম্ভব হয়নি।’ বলছিলেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। দীর্ঘ বিরতির পর তাঁর বাংলাদেশ টেলিভিশনে ফেরার কথা তো শিরোনাম দেখেই বুঝে গেছেন।

নুসরাত ইমরোজ তিশা

সম্পর্কিত নিবন্ধ