এসির বাজারে দেশি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে
Published: 23rd, March 2025 GMT
দরজায় কড়া নাড়ছে গ্রীষ্মকাল। গরমের আগাম প্রস্তুতি নিতে বাজারে এসির খোঁজ করছেন অনেকে। কোন ব্র্যান্ডের এসি ভালো, শরীরের পাশাপাশি পকেটে স্বস্তি দেবে কোন ব্র্যান্ড—কেনার আগে বিভিন্ন প্রশ্নের জট বাঁধছে ক্রেতাদের মাথায়। সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মিললেই ঘরে ঠাঁই পাচ্ছে নতুন এসি। একসময় বিলাসপণ্য হিসেবে বিবেচিত এসি এখন শহর থেকে বন্দরে, ছড়িয়ে গেছে সবখানে। মানুষের ঘরে ঘরে এসি যত সহজলভ্য হয়েছে, তত বেড়ে উঠেছে দেশি কোম্পানিগুলো।
একটা সময় এসির বাজার ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। বিদেশ থেকে নামীদামি ব্র্যান্ডের এসি আমদানি করে বিক্রি করা হতো দেশে। বড় বড় অফিস কিংবা শোরুম বাদে খুব একটা এসির প্রচলন ছিল না। আমদানি করেই সেই চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। মিনিস্টার ব্র্যান্ডের হেড অব মার্কেটিং গোলাম কিবরিয়া বলেন, একটা সময় যখন দেশে এসির চাহিদা বাড়তে থাকল, তখন নিজেদের প্রয়োজনেই দেশীয় কোম্পানিগুলো এসির বাজারে প্রবেশ করে। এখন বাংলাদেশের অনেক ব্র্যান্ড বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে টেক্কা দিয়ে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে।
দেশি ব্র্যান্ডগুলোর উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে দেশেই উৎপাদনের সুবিধা। মিনিস্টার কোম্পানি তাদের সব এসি দেশেই অ্যাসেম্বল করে। প্রয়োজনীয় কিছু কাঁচামাল বাদে বাকি সবটা তৈরি করা হয় দেশেই। একইভাবে উৎপাদন করা হয় ওয়ালটন, যমুনার মতো সব দেশি ব্র্যান্ডের এসি। দেশেই উৎপাদন করায় সহজে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পেরেছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো।
যমুনা গ্রুপের ডিরেক্টর অব মার্কেটিং সেলিম উদ্দিন জানান, বর্তমান এসির বাজারের ৭০ ভাগ এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। শহুরে এলাকায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর চল থাকলেও মফস্সলের বাজার পুরোটাই এখন দেশি ব্র্যান্ডগুলোর দখলে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে সাশ্রয়ী মূল্য ও সহজলভ্যতা।
সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘গত ১০ বছরে এসির বাজার দুই থেকে তিন গুণ হয়ে গেছে। একটা সময় এসির দেখা মিলত বড় বড় অফিস আর ধনী লোকের বাড়ির ড্রয়িংরুমে। এখন প্রতিটি মসজিদ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ক্লাসরুমে এসি আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসির চাহিদা। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো তুলনামূলক কম দামে সবার কাছে পৌঁছাতে পারায় মফস্সলে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’
দেশি ব্র্যান্ডগুলোকে টেক্কা দিতে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও ঘাঁটি গেড়েছে বাংলাদেশে। একটা সময় পুরো ইউনিট ধরে রপ্তানি হলেও কয়েক বছর ধরে নিজেদের ব্যবসার ধরন পাল্টেছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর মতো তারাও সংযোজন করছে বাংলাদেশে। গ্রী, জেনারেল বিভিন্ন মডেলের এসি অ্যাসেম্বল করছে নিজেদের ওয়্যারহাউসে। প্রযুক্তি ও উপাদানের দিক থেকে দেশি–বিদেশি ব্র্যান্ড সমানে সমান টেক্কা দিচ্ছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো। বর্তমানে যমুনা ইলেকট্রনিকস প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ ইউনিট এসি তৈরি করে। ইলেক্ট্রো মার্টের বার্ষিক উৎপাদনক্ষমতা প্রতিবছর তিন লাখ ইউনিট।
প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের এসি বাজারে ভিশন ব্র্যান্ডের মার্কেট শেয়ার প্রায় ১১ শতাংশ। বর্তমানে ১ টন এবং ১.
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের ক্যাটাগরি হেড আমিনুল ইসলাম জানান, গত বছর বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭ লাখ এসি বিক্রি হয়েছে। যেখানে দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর আধিপত্য ছিল বেশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলনামূলক কিছুটা আগেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। আশা করা যায় এ বছর ১০ লাখের বেশি এসি বিক্রি হবে। গ্রীষ্মকাল যত ঘনিয়ে আসবে, তত এসির বিক্রি বাড়বে।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের মার্কেটিং বিভাগের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান যোগ করেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর গরমের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আমরা আশা করছি গত বছরের তুলনায় ২০-২৫ শতাংশ বেশি এসি বিক্রি হবে এ বছর। জাপানি ব্র্যান্ড ডাইকিন ও হিটাচির একমাত্র আমদানিকারক ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস। এ ছাড়া নিজস্ব ব্র্যান্ড ট্রান্সটেক এসি তৈরি করে থাকে তারা।
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড মার্কেটিং ও কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া জানান, এসির মার্কেটের দ্রুত বড় হওয়ার কারণ প্রয়োজনীয়তা। প্রতিটি বাসায় একটি টিভি, একটি ওভেন হলেই চলে। কিন্তু বেশির ভাগ বাসাতেই একটি এসি হলে চলে না। প্রতি বেডরুমে একটি করে হলেও দুই থেকে তিনটি এসি প্রতি বাসায় প্রয়োজন হয়। ফলে এসির বাজার প্রতিবছরই সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সোহেল কিবরিয়া বলেন, ধীরে ধীরে এসি বিলাসপণ্য থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণে পরিণত হওয়ায় সেটি হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক কম বলে মনে করছেন তিনি। মিনিস্টার এসিতে ইনভার্টার প্রযুক্তি থাকায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। যে কারণে মধ্যবিত্ত মানুষজনের পছন্দের তালিকায় আছে মিনিস্টার এসি। এই বছর নতুন ১৮টি মডেলের এসি যুক্ত হবে বাজারে। ইনভার্টার টেকনোলজি থাকছে এসিতে। এ ছাড়া থাকছে কুল প্লাজমা টেকনোলজি যুক্ত এসি। এই এসিগুলো ১ মিনিটের মধ্যে ঘর ঠান্ডা করে দেবে। এরপর তাপমাত্রা ঘরের সঙ্গে মানিয়ে নেবে। সামনে যুক্ত হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। ফলে এসির তাপমাত্রা সেট করার প্রয়োজন পড়বে না। বরং এসি আপনার স্বাচ্ছন্দ্য ও ঘরের তাপমাত্রা অনুযায়ী নিজের তাপমাত্রা সেট করে নেবে। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন প্রযুক্তি আসছে আর আমরা সে অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুত করছি।
কয়েক বছর আগেও ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় নন-ইনভার্টার এসি থাকলেও এখন বাজারের প্রায় ৯৫ শতাংশ এসি ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় ঠাঁই নিয়েছে ইনভার্টার এসি।
কোভিডের কারণে কয়েক বছর এসির মার্কেটে সামান্য প্রভাব পড়লেও তা দ্রুতই কাটিয়ে উঠেছে কোম্পানিগুলো। দেশে এখন প্রতিবছর এসির চাহিদা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ ইউনিট। ২০-২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে চাহিদা।
প্রতিবছরই গ্রীষ্মকাল এলে চাহিদা সৃষ্টি হয় নতুন এসির ইউনিটের। প্রতিনিয়ত তৈরি হওয়া নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী প্রযুক্তি থেকে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন নিজের পছন্দের এসি। একসময়ের বিলাসপণ্য হিসেবে পরিচিত এসি, এখন আর দশটা প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক পণ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। শহর-বন্দর থেকে মফস্সলে—এসি এখন জায়গা করে নিচ্ছে মধ্যবিত্তের বেডরুমেও।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এস র ব জ র এস র চ হ দ ইনভ র ট র র পছন দ র গত বছর ট র এস ইউন ট আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজ সকাল ৯টায় শুরু ঢাবির বর্ষবরণ ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ কর্মসূচি। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হবে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামীকাল সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হবে। সকাল ৮টা থেকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলবে।
এতে বলা হয়, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি মোড়, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা শুধু নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। শোভাযাত্রা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য প্রবেশ পথ ও সংলগ্ন সড়ক বন্ধ থাকবে। শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য রক্ষার্থে আশপাশ দিয়ে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করা যাবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিজ নিজ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুদিনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা অব্যাহত রেখে অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য লোক-ঐতিহ্য ও ২৪-এর চেতনাকে ধারণ করে আরও বড় পরিসরে এবং বৈচিত্র্যপূর্ণভাবে এ বছর শোভাযাত্রায় সর্বজনীন অংশগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শোভাযাত্রায় এ বছর ২৮টি জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা অংশ নেবেন। এই বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় এ বছর থাকবে সাতটি বড় মোটিফ, সাতটি মাঝারি মোটিফ এবং সাতটি ছোট মোটিফ।
ঢাবির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনের রাজু ভাস্কর্যের পেছনের গেইট, চারুকলা অনুষদের সামনে ছবির হাটের গেট এবং বাংলা একাডেমির সামনের রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেট বন্ধ থাকবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের সব ধরনের অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর কোনোভাবেই প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে। নববর্ষ উপলক্ষ্যে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার পর ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না এবং মোটরসাইকেল চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড় সংলগ্ন গেট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেল্প ডেস্ক, কন্ট্রোল রুম এবং অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠ সংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বরের আশে-পাশের এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে।
নববর্ষ উপলক্ষ্যে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।