গাজীপুরে শ্রমিকদের ওপর যুবদল নেতার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ, আহত ১০
Published: 23rd, March 2025 GMT
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর স্থানীয় যুবদল নেতার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় দাইয়ু বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি সোয়েটার কারখানা রয়েছে। কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কারখানার শ্রমিকেরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, ঈদ বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, বাৎসরিক ছুটির টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে শ্রম আইন অনুযায়ী টাকা দেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময় শ্রমিকেরা কারখানায় ভাঙচুর করেন। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো.
সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার থানা যুবদল নেতার একটি মুদিদোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।
কারখানার শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা দুই দিন ধরে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এর মধ্যে আজ সকালে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন। এতে ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কারখানার মালিকের ডাকে সারা দিয়ে আমরা স্থানীয়রা সকালে কারখানায় গিয়েছিলাম। আমরা শ্রমিকদের ওপর কোনো হামলা করিনি। স্থানীয় কিছু লোক, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেন, তাঁরা মিথ্যা কথা প্রচার করে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলেন। শ্রমিকেরা আমার দোকানে হামলা চালান। দোকান থেকে ১৫–২০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে।’
কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুস সেলিম বলেন, কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি আগের থেকে স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো এলোমেলো। তাঁদের সঙ্গে ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
সাংস্কৃতিক সমাবেশে নারী ও প্রকৃতি নিপীড়নের প্রতিবাদ
কুঞ্জ উজাড়। সেখানে গভীর গর্ত। আরসিসি ঢালাই করা পিলারের অংশবিশেষ। লোহালক্কড় আর ইট–পাথরে আকীর্ণ পরিবেশ। অনেক চেনা সবুজ ‘পান্থকুঞ্জ’কে এখন কুঞ্জ বলার কোনো মানেই হয় না। এটি এখন ক্ষতবিক্ষত মাঠ। এরই এক প্রান্তে হলো গাছের গান, নদীর গান; প্রাণী, পাখি ও নারীর প্রতি নির্যাতনের প্রতিবাদী গান। উচ্চারিত হলো সহিংসতা, নিপীড়নের প্রতিবাদ।
গতকাল শুক্রবার অপরাহ্ণে পান্থকুঞ্জে ‘নারী ও প্রকৃতির প্রতি নিপীড়ন রুখে দিন’ আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন ও নাট্যসংগঠন বটতলা।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প (ওঠানামার পথ) নির্মাণের জন্য নগরের বুকে ক্ষুদ্র সবুজ উদ্যান পান্থকুঞ্জের গাছপালা কেটে বিরান বানিয়ে ফেলা হচ্ছিল। এর প্রতিবাদে গাছ রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেখানে অবস্থান করছেন। গতকাল ছিল অবস্থানের ৯৮তম দিন।
এদিকে সারা দেশেই নারীদের প্রতি সহিংসতা, নিপীড়নের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সে কারণে নারী ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব নিপীড়ন বন্ধের ডাক দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় এ আয়োজনে। শুরুতেই নাট্যসংগঠন বটতলার পক্ষে ঘোষণা পাঠ করেন শেউতি শাগুফতা। এতে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে নারীকে হেনস্তা, পোশাক নিয়ে সমালোচনা ও কটূক্তি করা হচ্ছে। ধর্ষণের হুমকি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারীর নিরাপত্তাহীনতার এক দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকে তাঁরা মুক্তি চান।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য এবং ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদী গান, আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক দিয়ে সাজানো হয়েছিল এই সাংস্কৃতিক কর্মী সমাবেশের কার্যক্রম। এতে গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব বলেন, পান্থকুঞ্জের এই চিলতে পরিমাণ সবুজ ছিল এই এলাকার ফুসফুসের মতো। উন্নয়নের নামে তা ধ্বংস করা হচ্ছে।
কাব্যনাটক বৃক্ষ সম্মেলন থেকে আবৃত্তি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বটতলার নাট্যকার সামিনা লুৎফা বলেন, ‘একটা গাছের সঙ্গে পাখি, কীটপতঙ্গসহ কত ধরনের প্রাণবৈচিত্র্যের নিবিড় সংযোগ থাকে, তা আমরা অনুভব করি না। তাদের প্রাণকে আমরা মূল্যবান ভাবি না। এই মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে।’
নাট্যজন আজাদ আবুল কালাম সংহতি জানিয়ে বলেন, বহু প্রাণ ও রক্তপাতের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বৈষম্যহীন মুক্ত সমাজের আশা জেগেছিল, তার সঙ্গে এখনকার বাস্তবতার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
আলোচনার ফাঁকে প্রকৃতি ও মানুষ নামের মূকাভিনয় পরিবেশন করেন শহীদুল মুরাদ। গানের দল ‘বেতাল’–এর শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃক্ষ নিয়ে গান ‘গাছে গাছে কথা কয় পাখিরা তা জানে’। নাট্যসংগঠন বটতলার শিল্পীরা পরিবেশন করেন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদী গান ‘যেন আমি সেই মেয়েটা’। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাট্যকার ও নির্দেশক শাহমান মৈশান।
গানের দল ‘মাভৈঃ’ পরিবেশন করে নদী নিয়ে গান ‘পুবের পাহাড়ে, বরাক নদীর দুধারে’। কবিতা আবৃত্তি করেন অনন্য লাবণি। আরও বক্তব্য দেন বটতলার নির্দেশক মো. আলী হায়দার। সঞ্চালনা করেন বটতলার যোগাযোগ পরিচালক হুমায়ুন আজম। প্রতিবাদে দৃপ্ত এই সমাবেশ শেষ হয়েছিল বটতলার নারী নির্যাতনবিরোধী নাটক আর নয় চুপ থাকার পরিবেশনা দিয়ে।