গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাসসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের ওপর স্থানীয় যুবদল নেতার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলার ভান্নারা বটতলা এলাকায় দাইয়ু বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি সোয়েটার কারখানা রয়েছে। কারখানার শ্রমিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কারখানার শ্রমিকেরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, ঈদ বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, বাৎসরিক ছুটির টাকা, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে শ্রম আইন অনুযায়ী টাকা দেওয়াসহ ৯ দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই সময় শ্রমিকেরা কারখানায় ভাঙচুর করেন। সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো.

মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী নিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন। এ সময়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর থানা-পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করে।

সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে উত্তেজিত শ্রমিকেরা কারখানার থানা যুবদল নেতার একটি মুদিদোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করেন।

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা দুই দিন ধরে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। এর মধ্যে আজ সকালে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা শ্রমিকদের ওপর হামলা করেন। এতে ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সদস্য মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কারখানার মালিকের ডাকে সারা দিয়ে আমরা স্থানীয়রা সকালে কারখানায় গিয়েছিলাম। আমরা শ্রমিকদের ওপর কোনো হামলা করিনি। স্থানীয় কিছু লোক, যাঁরা আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেন, তাঁরা মিথ্যা কথা প্রচার করে শ্রমিকদের উত্তেজিত করে তোলেন। শ্রমিকেরা আমার দোকানে হামলা চালান। দোকান থেকে ১৫–২০ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়েছে।’

কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুস সেলিম বলেন, কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি আগের থেকে স্বাভাবিক রয়েছে। শ্রমিকদের দাবিগুলো এলোমেলো। তাঁদের সঙ্গে ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

সোলেমানি বৈশাখ...

আনন্দে সোলেমানের মুখ ঝলমল করছে। একটি বড় ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে রতনপুর বৈশাখী মেলার মাঠে। চারদিকে বাজছে মাদল। বাঁশির শব্দ ঘুমন্ত রতনপুরকে জাগিয়ে তুলেছে। গত বছরের শেষে সোলেমান এ গ্রামের খোরশেদ মিয়ার বাড়িতে কাজ নিয়েছে। বয়স পনেরো বা ষোলো। মালিকের সঙ্গে সোলেমান বৈশাখী মেলায় এসেছে। আগ্রহ নিয়ে বৈশাখী মেলার মাটির খেলনা দেখছে সোলেমান। মনিবের ভারী কণ্ঠ শুনতে পেলো সোলেমান। তিনি বললেন, ‘তোর এতো কষ্ট করা লাগতো না। এই চিড়া-বাতাসা নিয়া বাড়ি যা।’ 
সোলেমান কিছু বলার আগে খোরশেদ মিয়া আরো কিছু ব্যাগ চাপিয়ে দিলেন। সোলেমান দ্রুত হাঁটতে গিয়ে মাঝরাস্তাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চিড়া-বাতাসার ব্যাগটা আরও ভারী হওয়ায় একটি বট গাছের নিচে বসে। চিড়া-বাতাসার ব্যাগ খুলে গপাগপ গিলতে থাকে। বাতাসা যেন বৈশাখী মেলার সনাতনের বানানো রসগোল্লা। অনায়াসে সোলেমান সাবাড় করে দেয় কেজিখানেক চিড়া-বাতাসা। তার খাওয়া যেন থামছেই না। খেয়ে যাচ্ছে সোলেমান। বটের ছায়ায় চিড়া-বাতাসা খেতে খেতে কখন যেন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে খেয়াল নেই তার! বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই প্রচণ্ড পানির পিপাসা পায়। মোল্লাবাড়ির চাপকল থেকে পানি পান করে। ধীরে ধীরে ফুলছে সোলেমানের পেট। পিঁপড়ার চেয়েও ধীরে হাঁটছে সে। তার মনে হয়, এখনই ফেটে যাবে তার পেট। হাঁটতে কষ্ট হয় খুব। তাল হারিয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
‘মাঝ রাস্তায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন ক্যান?’ বটতলায় কানামাছি খেলতে এসে পড়ে থাকা সোলেমানকে প্রশ্ন করে ছয় বছরের এক শিশু। শিশুটির পেছনে বড় একটি দল। একজন বললো, ‘মনে হয় ঘুমায়?’ আরেকজন বললো, ‘একে জ্বিন এখানে ফেলে গেছে।’ ন্যাড়া মাথার একজন বললো, ‘মার্ডার, মার্ডার।’ শিশুদের দলটি দৌড়ে নিজ নিজ বাড়িতে খবর দিতে যায়। তাদের চেহারায় উত্তেজনা।
খোরশেদ মিয়া বৈশাখী মেলা থেকে বাড়ি ফিরেছেন। খবর পেয়েছেন এখনো বাড়ি ফেরেনি সোলেমান। তিনি চিন্তিত মুখে বারান্দায় পায়চারি করছেন। বাড়ির সবাই চিন্তিত। সোলেমানের খবর গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়লে গাঁয়ের দুর্নাম হবে। খোরশেদ মিয়া ভাবছেন সোলেমান চিড়া-বাতাসার লোভে পালিয়ে যায়নি তো? ছেলেটাকে একা পাঠানো ঠিক হয়নি। বৈশাখী মেলায় সোলেমানকে আরও কিছু সময় থাকতে দিলে এমনটা হতো না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে পথ চলেন তিনি। তবে ভ্রু কোঁচকানো।
বটতলায় সোলেমানের পাশে গ্রামবাসীর জটলা। গ্রামের পণ্ডিতরাও উপস্থিত। সবাই তাকিয়ে আছে সোলেমানের দিকে। পিঁপড়াদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। গ্রামের মেম্বার বললেন, ‘আহারে কম বয়সে মারা গেলো।’ ইমাম সাহেব বললেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ খোরশেদ মিয়া হঠাৎ গ্রামবাসীর জটলা দেখতে পেলেন। ভিড় ঠেলে সামনে এলেন। বটতলায় পড়ে থাকা সোলেমানকে দেখে চিৎকার করে ওঠেন খোরশেদ মিয়া। মালিকের চিৎকারে সোলেমান ধীরে ধীরে চোখ খোলে। সামনে খোরশেদ মিয়া ও গ্রামবাসীকে দেখে সোলেমান অপ্রস্তুত হয়। সোলেমান খোরশেদ মিয়াকে বলে, ‘বিশ্বাস করেন চাচা, বেশি খিদা লাগছিলো; আর হবে না। মাফ কইরা দ্যান।’ খোরশেদ মিয়া অবাক চোখে তাকান। পিঁপড়ার দল বাতাসার প্যাকেট থেকে দ্রুত নেমে যেতে থাকে।

n বয়স : ২+৩+৩+৪ বছর; সপ্তম শ্রেণি, মানিকগঞ্জ সুরেন্দ্র কুমার সরকারি বালিকা        উচ্চ বিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোলেমানি বৈশাখ...