টাকা পাচারকারীদের বিচার বিশেষ আদালতে হতে হবে
Published: 23rd, March 2025 GMT
প্রথম আলো:
বিগত সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পাচার করা টাকা ফেরত আনা কি দ্রুত সম্ভব?
মোস্তাফিজুর রহমান: এখানে দুটি দিক আছে। একটি হলো সামনের দিনে যাতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিয়ে আমরা টাকা পাচার বন্ধ করতে পারি। দ্বিতীয়টা হলো যে টাকা পাচার হয়ে গেছে, সেটা আমরা কীভাবে ফেরত আনতে পারি।
অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে আমরা হিসাব দিয়েছি, হাসিনা সরকারের শাসনামলে প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। এটা আমাদের জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, খেলাপি ঋণের একটা বড় অংশ বাইরে চলে গেছে। দুর্নীতি যাঁরা করেছেন, তাঁদের টাকাটাও বাইরে চলে গেছে। আমরা দেখেছি, হুন্ডি-হাওলা এবং রেমিট্যান্সের বিপরীতে একটা দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, যারা দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় আমাদের এখান থেকে টাকা পাচার করেছে। তারা সেখানে ব্যাংক হিসাবে টাকাটা রেখেছেন স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিনেছে।
আমাদের এখান থেকে প্রকৃত যে ব্যক্তি টাকাটা পাঠিয়েছেন, আর বিদেশে বসে প্রকৃত যে ব্যক্তি টাকাটা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকগুলো স্তর তাঁরা তৈরি করেছেন। এমন করে ধূম্রজাল তাঁরা সৃষ্টি করেছেন যে পেপার ট্রেইলটা প্রতিষ্ঠা করা খুব মুশকিল। কিন্তু পাচার হওয়া টাকাটা আমাদের আনতেই হবে। সর্বসম্প্রতি অ্যাঙ্গোলা তাদের দেশে ৫ বিলিয়ন ডলার ফেরত এনেছে। ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া টাকাও ফেরত এনেছে। এমনকি আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশ তাদের পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে গেছে।
প্রথম আলো:আমরা কেন অন্য দেশ থেকে আমাদের টাকাটা ফেরত আনতে পারব না?
মোস্তাফিজুর রহমান: এর একটা প্রক্রিয়া আছে। বিশেষ আদালত করে টাকা পাচারের এসব অপরাধের দ্রুত বিচার করা প্রয়োজন। সেটা হলে আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব যে এসব টাকা আমাদের দেশ থেকে দুর্নীতি, ঋণখেলাপিসহ নানা অবৈধ উপায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমাদের দেশ থেকে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে যাওয়ার একটা বড় অংশ হলো ট্রেড মিস-প্রাইসিং। আমদানিকারক সেজে পাচারকারী যে পণ্যের দাম ১৫ ডলার, সেটাকে দেখিয়েছি ৫০ ডলার। এলসি খুলে সরকারি দামে ডলার কিনে তারপর সেটা পাচার করা হয়েছে। দেশকে কতভাবে ক্ষতি করা যায়, তার সবটাই তারা করেছে। এই লোকগুলোই বহু বছর ধরে ডলারের দামের বিপরীতে টাকার মান অবনমন করতে দেয়নি। কারণ, তারা ৮৬ টাকায় ডলার কিনে সেটাকে পাচার করতে চেয়েছিল। ১২২ টাকায় ডলার কিনতে গেলে তাদের তো কিছুটা লোকসান হয়!
টাকা পাচারের আরেকটা কৌশল হিসেবে স্বর্ণকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম আলোতে দেখলাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১০ বছরে স্বর্ণ এসেছে প্রায় ৩৬৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের। টাকার অঙ্কে ৪০ হাজার কোটি টাকার। বাংলাদেশে আমদানি দেখানো হয়েছে মাত্র ৮২ লাখ ডলারের স্বর্ণ। এর মানে হচ্ছে, অর্থ পাচারের সঙ্গে স্বর্ণ চোরাচালানিদের একটি একটি দুষ্টচক্র সৃষ্টি হয়েছে।
দেশ থেকে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে হবে তিনটি কারণে। এক.
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, তাঁদের এই আমলেই তাঁরা পাচার হওয়া টাকার বড় একটা অংশ দেশে ফেরত আনতে পারবেন। সেটা আনতে পারলে ভালো, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সেটা দুরূহ হবে। তবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য পাচারের অর্থ ফেরানোর একটা রোডম্যাপ রেখে যেতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র দ শ থ ক প চ র কর স বর ণ সরক র র একট
এছাড়াও পড়ুন:
হাইওয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ডিবির ৫ সদস্য
বগুড়ায় দুই তরুণকে তুলে নিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে রাজশাহী গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হাইওয়ে পুলিশ। গত রোববার রাত ৩টার দিকে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার পুলিশ বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বীরগ্রাম এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে মুক্তিপণের নগদ দুই লাখ টাকা, ডিবির পোশাক, পরিচয়পত্র ও একটি ওয়াকিটকি জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার এসআই শাহিন মোহাম্মদ অনু ইসলাম, কনস্টেবল রিপন মিয়া, কনস্টেবল আবুল কালাম আজাদ, কনস্টেবল মাহবুব আলম, কনস্টেবল বাশির আলী এবং তাদের মাইক্রোবাসের চালক মেহেদী হাসান।
পুলিশ সূত্র জানায়, আরএমপির গোয়েন্দা শাখার পাঁচ সদস্য রোববার রাতে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আসেন। তারা জুয়া খেলার অভিযোগে চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দীঘরকান্দি গ্রামের সেলিম হোসেনের ছেলে রাব্বী হাসান ও একই এলাকার শেরবান খানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। শেরপুর উপজেলার মির্জাপুরে গাড়ি থামিয়ে তাদের কাছে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দরকষাকষি করে দুই তরুণের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন।
বগুড়া জেলা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে শেরপুর ও শাজাহানপুর থানা এলাকায় ডিবির মাইক্রোবাসটি থামানোর চেষ্টা করে। না পেরে তারা কুন্দারহাট হাইওয়ে থানাকে বিষয়টি জানায়। পরে হাইওয়ে পুলিশের এসআই মাসুদ রানার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে শাজাহানপুর থানার বীরগ্রাম এলাকায় গাড়িটি আটক করা হয়। এ সময় ডিবির পাঁচ সদস্য তাদের পরিচয় দিয়ে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করেন। হাইওয়ে পুলিশ আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়, ওই পাঁচজন কাউকে না জানিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বগুড়ায় গিয়েছিলেন। এর পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ডিবির পাঁচ সদস্যকে ওই রাতেই কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা হয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সোমবার তাদের নেওয়া হয় ধুনট থানায়। সেখানে অপহরণের শিকার রাব্বি হাসানের বাবা সেলিম হোসেন তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা করেন। ধুনট থানার ওসি সাইদুল আলম জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।
আটক পাঁচ ডিবি সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করে আরএমপি মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন জানান, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।