আফগান তালেবানের অন্যতম নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে ধরতে তথ্য দেওয়ার বিনিময়ে এক কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবার তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তালেবান সরকার গতকাল শনিবার এ কথা জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে এখনো হাক্কানির তথ্যের জন্য পুরস্কারের কথা মুছে ফেলা হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে হাক্কানি যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র জোটের ওপর আন্তসীমান্ত হামলাগুলোয় সমন্বয় করতেন ও অংশ নিতেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য, সিরাজুদ্দিন হাক্কানি বর্তমানে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন।

আরও পড়ুনতালেবানের ভেতরে বিদ্রোহের শঙ্কা, সংকটে আফগানিস্তান?২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বছর দুয়েক জিম্মি করে রাখার পর গত বৃহস্পতিবার এক মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে তালেবান। এরপরই হাক্কানির ওপর থেকে পুরস্কারের অর্থমূল্য তুলে নেওয়ার খবর জানানো হয়।

ওই জিম্মির নাম জর্জ গ্লেজম্যান। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পর্যটক হিসেবে আফগানিস্তান ভ্রমণের সময় তালেবানের হাতে আটক হয়েছিলেন এই মার্কিন। গত জানুয়ারির পর এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মার্কিন জিম্মি মুক্তি দিল তালেবান।

এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, জর্জ গ্লেজম্যানের মুক্তি একটি ‘ইতিবাচক ও গঠনমূলক’ পদক্ষেপ। তাঁর মুক্তি নিশ্চিতে ‘সহায়ক’ ভূমিকা রাখায় কাতারকে ধন্যবাদ।

তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মার্কিন বন্দীদের মুক্তির ঘটনা তাদের কাছে বিশ্বব্যাপী সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ প্রচেষ্টার অংশ।

আরও পড়ুনআফগান তালেবান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক কি নতুন মোড় নিচ্ছে২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরে তালেবান। তবে এরপরও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এখনো তারা একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী হিসেবে রয়ে গেছে। তালেবান সরকারকে এখনো কোনো দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। যদিও কয়েকটি দেশ তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে এগিয়ে নিচ্ছে।

বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ক্ষমতায় এসে সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় বসে তালেবান।

আফগানিস্তানে যুদ্ধ বন্ধে ২০২০ সালেই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফেলেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দেশটি থেকে মার্কিন ও মিত্র জোটের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের জন্য নির্ধারিত ১৪ মাসের সময়সীমাতেও সম্মতি দেন তিনি।

এ চুক্তি মেনে ২০২১ সালে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ছেড়ে আসার সেই অস্থির সময়ে দেশটিতে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারেরও পতন ঘটে। এ জন্য চুক্তিটি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা রয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবানের মন জয়ের চেষ্টা কেন করছে ভারত১৩ জানুয়ারি ২০২৫

সিরাজুদ্দিন হাক্কানির বাবাও একজন কমান্ডার ছিলেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি। শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান ছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের চোখে এই হাক্কানি নেটওয়ার্ক একটি ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন। আফগানিস্তানের অন্যতম বিপজ্জনক একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বিবেচনা করা হয় এটিকে।

আত্মঘাতী বোমা হামলার জন্য হাক্কানি নেটওয়ার্ক পরিচিত পেয়েছিল। এই গোষ্ঠী বছরের পর বছর ধরে কাবুলে বেশ কয়েকটি হাইপ্রোফাইল হামলার পরিকল্পনায় ছিল বলেও মনে করা হয়।

হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কয়েকজন শীর্ষ আফগান কর্মকর্তাদের হত্যা এবং ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া মার্কিন সেনা বোয়ে বার্গডাহলসহ কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিককে মুক্তিপণের জন্য আটক রাখার অভিযোগও রয়েছে।

আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠন করার পরও হাক্কানি নেটওয়ার্ক মার্কিন নজরদারিতে ছিল। কাবুলে ২০২২ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় আল-কায়েদার তখনকার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হন। যেই বাড়িতে জাওয়াহিরি নিহত হন, সেটা হাক্কানির আবাস ছিল বলে মনে করেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনতালেবানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি২৩ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত ল ব ন সরক র আফগ ন স ত ন ন টওয় র ক প রস ক র র জন য র র পর

এছাড়াও পড়ুন:

দেশ নিয়ে আবারও ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়েছে: মির্জা ফখরুল

দেশ নিয়ে আবারও সুকৌশলে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আবারও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ চক্রান্ত হচ্ছে বাংলাদেশকে আবার অস্থিতিশীল করার এবং বাংলাদেশকে আবারও বিপদে নিমজ্জিত করার জন্য।

আজ সোমবার রাজধানীর লেডিস ক্লাবে আয়োজিত বিএনপির মিডিয়া সেল আয়োজিত ইফতার মাহফিলে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপির মিডিয়া সেল।

মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাদেরও বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এর পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে না। তিনি বলেন, ‘এর (ষড়যন্ত্র) পেছনে ঠিক তা–ই আছে, অতীতে ফ্যাসিস্ট আমলে যেভাবে আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম অবস্থাকে বিপন্ন করা হয়েছে। আমরা যেন আবারও অরক্ষিত হয়ে পড়ি, তার একটি হীন প্রচেষ্টা হচ্ছে, যে সেনাবাহিনী জাতির সব সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’

সাংবাদিকেরা অতীতে জাতির কঠিন সময় সঠিক তথ্য নিয়ে সামনে এসেছেন উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, আবারও আপনারা অতীতের মতো জাতির সামনে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন।’

বিএনপির বিরুদ্ধে এখনো নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) অতীতেও আমাদের জন্য কাজ করেছেন। আগামী দিনেও বিএনপির বিরুদ্ধে এসব প্রচারের বিরুদ্ধে আপনারা সত্য তথ্য তুলে কাজ করবেন।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ