ডাওকি নদীর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ প্রসঙ্গ তুলতেই ট্যাক্সি চালক হারমান হাসি দিয়ে বলে উঠলেন, ‘২৫ তারিখে তোমাদের সঙ্গে ভারতের ম্যাচ।’ গতকাল হামজা দেওয়ান চৌধুরীর নাম বলার আগেই যেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন পোস্টারবয় সম্পর্কে জ্ঞাত তিনি। মেঘালয়ে মেঘমালার মধ্য দিয়ে ট্যাক্সি চালাতে চালাতে হামজাকে নিয়ে জানার আগ্রহটা বেড়ে যায় হারমানের। ২৭ বছর বয়সী এ ডিফেন্ডারকে দেখতে তাই আগে থেকেই ম্যাচের টিকিট কেটেছেন এ ট্যাক্সি ড্রাইভার। শুধু হারমানই নন, পুরো শিলংয়ের ফুটবলপ্রেমীরা হামজাকে দেখার অপেক্ষায়।
জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে দুই প্রতিবেশী দেশের ফুটবল লড়াই সামনে রেখে অন্যরকম আবহ মনোরম জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য পরিচিত মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলং। ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের গ্যালারি যে পরিপূর্ণ হবে, তা অনুমেয়। ফুটবল লাভার হিসেবে খ্যাত এই শহরের দর্শকদের একটাই কথা ‘টিকিট চাই’। এই প্রথম বড় কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতে যাচ্ছে স্থানীয়ভাবে পোলো গ্রাউন্ড নামে পরিচিত শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে।
১৯ মার্চ মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতের ৩-০ গোলের জয়ের ম্যাচটি প্রীতি ম্যাচ। বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের লড়াইটি যে প্রীতির মধ্যে থাকছে না, তা সহজেই বলা চলে। ভারত যেমন অবসর থেকে ফিরিয়ে এনেছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা সুনীল ছেত্রিকে। বাংলাদেশের আছে যে হামজার মতো রক্ষণ সেনানী। অতীতে বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচের চেয়ে এবার উন্মাদনা একটু বেশি। কারণও স্বাভাবিক হামজা।
শনিবার নেহরু স্টেডিয়ামের পাশের আর্টিফিশিয়াল টার্ফে বাংলাদেশের অনুশীলনের কথা শুনে এসেছিলেন কিছু সংখ্যক ফুটবলপ্রেমী। পাশেই মূল স্টেডিয়ামে ভারতীয় দলের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর দর্শকরা দৌড়ে চলে আসেন হামজাকে দেখার জন্য। কিন্তু তাদের ভাগ্য খারাপ। কারণ সন্ধ্যা ৬টায় অনুশীলন করার কথা থাকলেও কোনো এক কারণে তা পিছিয়ে সাড়ে ৭টায় নিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। তাতে কিছুটা মন খারাপ হয় তাদের।
১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার কথা জানান তিয়েলেং নামক এক ফুটবল সমর্থক, ‘আমি বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ দেখার জন্য আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছি। এখানে ফুটবলের জনপ্রিয়তা অনেক। শুনেছি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী নামক এক খেলোয়াড় আছেন বাংলাদেশ দলে। টিভিতে ইংলিশ ফুটবলের খেলা দেখি। এবার নিজ চোখে দেখতে চাই এমন কোনো ফুটবলারকে। আমি আগেই টিকিট কেটে রেখেছি।’
ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে ফুটবলের ঐতিহ্য অনেক। এই অঞ্চলের নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড খেলে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে। ভারতের আই লিগে খেলে আইজল এফসি ও শিলং লাজোংয়ের মতো ক্লাব। ক্রিকেট পাগল হলেও ভারতের উত্তর-পূর্ব মেঘালয় রাজ্যের শহর শিলংকে ফুটবলের শহর বলা হয়। এখানে ফাইভ-এ সাইড খেলার পাঁচটি মাঠ আছে। অত্যাধুনিক সমৃদ্ধ ফুটসাল ভেন্যু আছে। এই শহরে শিশু বয়স থেকেই ফুটবল নিয়ে মেতে ওঠে ছোট বাচ্চারা। খাসিয়া উপজাতি আধ্যিকের এই শিলংয়ে এখন বাংলাদেশকে নিয়েও উন্মাদনা বইছে। কারণ ভারতের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে সর্বশেষ ২০১৯ সালে লড়াকু পারফরম্যান্স দেখানো বাংলাদেশ ১-১ গোলে ড্র করেছিল। কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পর এবার শিলংয়ে ভারতকে চমকে দিতে চায় হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দল।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পছন্দের মাঠ না পাওয়ায় ক্ষোভ
কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনও বা অঝোর ধারা। শিলংয়ের আকাশ থেকে রোববার দুপুর থেকেই অনবরত বৃষ্টি ঝরেছে। মেঘালয়ের রাজধানীতে এমনিতেই প্রচুর ঠান্ডা। বজ্রবৃষ্টিতে তাই বেড়েছে শীতের প্রকোপ। মেঘালয় রাজ্যে মেঘের খেলা হবে না, তা কী করে হয়? তবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে খেলতে হচ্ছে অন্য খেলা। মাঠের বাইরে ভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে অনুশীলন ভেন্যু নিয়ে গত কয়েক দিন রীতিমতো যুদ্ধ চলছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের।
বাংলাদেশ কোচ ক্যাবরেরা চেয়েছিলেন গতকাল অন্তত মূল ভেন্যুর ঘাসের মাঠে অনুশীলন করতে। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে সেই ভেন্যুর পাশে আর্টিফিশিয়াল টার্ফের গ্রাউন্ড। বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার আমের খানের অভিযোগ, ভারতীয় দল মূল ভেন্যুতে অনুশীলন করতে পারলে অতিথি হয়ে তারা কেন পাবেন না সেই সুযোগ। কিন্তু স্বাগতিক ভারত নিয়মের কথা সামনে এনে বাংলাদেশ দলকে এই সুযোগ দেয়নি।
এ ব্যাপারে এএফসির নিয়ম হচ্ছে, ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্দিষ্ট শহরে পৌঁছাতে হবে অতিথি দলকে। ম্যাচ ভেন্যুতে সফরকারীদের আগের দিন অনুশীলন করতে দেওয়া বাধ্যতামূলক। তার এক দিন আগে অনুশীলন ভেন্যুর (ম্যাচ ভেন্যুর বাইরে) ব্যবস্থা করে দেওয়া স্বাগতিক ফেডারেশনের দায়িত্ব।
সেই হিসেবে ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচটি যে ভেন্যুতে হবে, সেই জওহরলাল স্টেডিয়ামে আজ বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দল অনুশীলন করবে। ম্যাচের পাঁচ দিন আগে শিলং চলে আসায় নেহু গ্রাউন্ডে প্রথম দিন অনুশীলন করার পর ভেন্যু নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ক্যাবরেরা। শনিবার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামের পাশের মাঠে অনুশীলন করতে গিয়ে ফ্লাডলাইট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে জাতীয় দলকে। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর সেদিন অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল।
রোববার দুপুর পর্যন্ত অনুশীলন ভেন্যু চূড়ান্ত করতে পারছিল না বাফুফে। একবার বলেছে নেহু গ্রাউন্ড আবার জওহরলাল স্টেডিয়ামের টার্ফের মাঠ। এমন দোটানায় থাকতে থাকতে স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় অর্থাৎ অনুশীলন শুরুর ৩০ মিনিট আগে বাফুফে থেকে জানানো হয় টার্ফের মাঠেই হবে অনুশীলন। ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ফুটবল দলের কর্তারা। পছন্দের ভেন্যু না পাওয়ায় ভারতের বিপক্ষে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান, ‘আজ (রোববার) ম্যাচ কমিশনারের সঙ্গে সকালে কথা হয়েছে। আমরা বললাম, যেহেতু অফিসিয়াল ডে আর ভারত যেহেতু ম্যাচ ভেন্যুতে সকালে অনুশীলন করেছে, তাহলে আমাদেরও এই ভেন্যুতে অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া হোক। যখন দেখলাম সেই সুযোগ তারা দিচ্ছে না, তখন আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাই। তিনি এএফসির সঙ্গে কথা বলেন। তার পর আমাদের টার্ফের এই ভেন্যুতে অনুশীলন করার অনুমতি দিয়েছে।’
গুরুত্বপূর্ণ তিন ফুটবলার ইনজুরির কারণে এমনিতেই ভারতীয় দল কিছুটা দুর্বল। আর প্রতিপক্ষ দলে যেহেতু হামজা চৌধুরীর মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার আছেন, স্বাগতিকরা চাইবে তিনি যেন দলের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারেন। সে জন্য নানাভাবে প্রতিপক্ষ দলকে ভারত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভেন্যু নিয়ে এত নাটকীয়কতার পেছনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও নিজেদের দায় এড়াতে পারে না। সৌদি আরবে গিয়ে যে ক্যাম্প করেছিল, তার প্রস্তুতি তো এক মাস আগে নিয়েছিল। তাহলে পাঁচ দিন আগে ভারতে আসার পরিকল্পনা নিলেও তার বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তারা। তাদের পরিকল্পনার ঘাটতি দেখছেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা।
আগে থেকেই যদি কোনো কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে অনুশীলন ভেন্যুসহ সবকিছু ঠিক করে যেত, তাহলে এই সমস্যা হতো না বলে জানান ম্যানেজার আমের খান, ‘জুনে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ঢাকায় বাংলাদেশের ম্যাচ। এখন থেকেই তাদের এক কর্মকর্তা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে এপ্রিলে বাংলাদেশে আসতে। তারা মাঠ ভেন্যু, অনুশীলন ভেন্যু দেখে যেতে চায়। আমি মনে করি, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে আমাদের এখানে কাউকে আগে পাঠানো উচিত ছিল। তাহলে অন্তত এই সমস্যায় পড়তে হতো না।’