আ’লীগকে রাজনীতি করতে দেব না, দেশজুড়ে বিক্ষোভ
Published: 23rd, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবারই এ দেশের মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। একাত্তরের পরে তারা গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এ দেশের মানুষ যে গণতন্ত্র চেয়েছিল– ’১৪, ’১৮ ও ’২৪-এর নির্বাচন– সে গণতন্ত্রের মুখে চুনকালি দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে যারা মারা গেছে, তাদের রক্তের শপথ– আমাদের শরীরে এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেব না।
আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এনসিপি ঢাকা মহানগর শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এদিন একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আখতার হোসেন বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো বিচারিক কাজ শুরু করেনি। আমরা বলতে চাই, অবিলম্বে লীগের বিচার শুরু করতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক বা রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া যাবে না। না হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে এসে লড়াই করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করেছিলেন, তাঁকে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। জামায়াত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করেছে, তাদের নেতাকর্মীকে ফাঁসির মাধ্যমে তা পরিশোধ হয়েছে। এর পর আবার আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে; পিলখানা, শাপলা গণহত্যা ও দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে তা পরিশোধ করতে হয়েছে। আবারও যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হয়, আপনার-আমার জীবন দিয়ে তার খেসারত দিতে হবে।
রাজধানীর বকশীবাজারে গতকাল বিকেলে কারা কনভেনশন সেন্টারে লালবাগ থানা এনসিপি আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে যারাই পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। যদি ক্যান্টনমেন্ট বা ভারত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পথ করে দিতে চায়, তবে তাদেরও প্রতিহত করা হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কেবল আওয়ামী লীগকেই বিদায় করা হয়নি উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে আমরা বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ এবং এই ফ্যাসিবাদী ১৫ বছরের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকে। সেই এক-এগারোর বন্দোবস্তের ফলেই কিন্তু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতা পেয়েছিল। আরেকটি এক-এগারো আমরা কখনও বাংলাদেশে হতে দেব না।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা। তা না হলে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে আহতরা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি প্রত্যাখ্যান করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তা না হলে ৬৪ জেলা থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবার ঢাকামুখী হয়ে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’– প্রধান উপদেষ্টা ড.
গতকাল গণসংহতি আন্দোলন পাবনা জেলার উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও এর রূপরেখা শীর্ষক আলোচনা ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সাত মাস পার হওয়ার পরও বিচারকাজ এখনও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগোয়নি। আওয়ামী লীগের যে নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, অবিলম্বে তার বিচার করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে হবে।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এনসিপি। স্থানীয় পৌর মুক্তমঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কিশোরগঞ্জে ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। গতকাল শহরের সরকারি গুরুদয়াল কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মেহেরপুরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আয়োজনে গতকাল মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের এক দফা দাবিতে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।
এদিকে, গণভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান। গত শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। নাসের রহমান লেখেন, গণভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হোক। এই গণহত্যাকারী দলকে কোনো সুস্থ, বিবেকবান ও সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ কখনোই সমর্থন করতে পারে না।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সমকাল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক; নিজস্ব প্রতিবেদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণহত য র স মন র জন ত আওয় ম এনস প গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা সরকার পূরণ করতে পারছে না
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ। গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন। এক সময়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মামুন সোহাগ।
সমকাল: এই সময়ের ব্যস্ততা কেমন যাচ্ছে?
উমামা ফাতেমা: সময়গুলো খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখন মনে হয় চব্বিশ ঘণ্টাও খুব কম সময়। জুন-জুলাই মাস থেকেই এমন একটা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দিন নেই, রাত নেই। প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। একেকজনের একেক ধরনের সমস্যা। তবুও আমরা সৌভাগ্যবান। আল্লাহ হয়তো আমাদের নিজে থেকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। সেটি যেন ঠিকমতো পালন করতে পারি, তবু ভয় কাজ করে।
সমকাল: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান বাংলাদেশ কেমন আছে?
উমামা ফাতেমা: বাংলাদেশ বর্তমানে মিশ্র পরিস্থিতির মধ্যে আছে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়েছে, একটা ভয় কাজ করে। নাগরিক নিরাপত্তা অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে একটা পজিটিভ ইমপ্যাক্ট আছে। যেমন সরকার এবার রোজায় জিনিসপত্রের দামটা একটু কম রাখতে সক্ষম হয়েছে। রিজার্ভের পরিমাণও বেড়েছে। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ভালো করছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রত্যাশা করেছিলাম দেশের সর্বক্ষেত্রে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করবে (নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে)। প্রতিটি ক্ষেত্রে জাস্টিস (ন্যায়বিচার), অ্যাকাউন্টেবিলিটি (জবাবদিহি) কাজ করবে। জনগণ যাতে আদালতের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারে। প্রশাসনের মধ্যে যে প্রতিক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব, সেটি এখনও আমরা দেখছি, সরকারের মধ্যে আছে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আমাদের একটি বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল, সরকার তা পূরণ করতে পারেনি।
সমকাল: অন্তর্বর্তী সরকার আরও কী করতে পারত?
উমামা ফাতেমা: একদম শুরু থেকেই আমার অভিমত ছিল, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। জুলাই-আগস্টে যেসব থানা থেকে জনগণের ওপর গুলি করা হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে তাদের ছাঁটাই করা বা গ্রেপ্তার করা যেত। যারা গুলি চালায়নি বা সহযোগী হিসেবেও ছিল না সেই থানাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের অপারেশনে নিয়ে আসা যেত। একদম শুরুর দিকে সরকার যদি পুলিশকে ফাংশনাল করার চেষ্টা করত, তাহলে হয়তো এখানে পুলিশের যে একটা ‘ওভারল ইনঅ্যাক্টিভিটি’(সামগ্রিক নিষ্ক্রিয়তা) দেখতে পাচ্ছি, সেটি কিছুটা কমানো যেত। তবে এটি সরকার পরবর্তী সময়ে কিছুটা উপলব্ধি করেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে তারা আবার কিছুটা তৎপর হয়। সত্যি কথা বলতে কী, যদি একদম প্রথম দিকে একটা পরিকল্পনা থাকত তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও বেশি উন্নত থাকত। সরকারের পরিকল্পনাহীনতা আছে, আওয়ামী লীগের বিচার তারা কবে নাগাদ করবে? তারপর আমাদের যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনগুলো হলো, কেন এই ১১টা সংস্কার কমিশন হলো? বাকি খাতগুলোর কী অবস্থা? বাংলাদেশের সব থেকে বড় সেক্টর শিক্ষা, সেই শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন গঠন হয়নি। সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিচার এবং সংস্কারগুলোর সুরাহা না করে নির্বাচন হলে খুব বেশি লাভ হবে, তা জনগণের কেউই মনে করে না। তবে সরকারের উপযুক্ত রোডম্যাপ থাকা দরকার।
সমকাল: এখন তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর কী করণীয়?
উমামা ফাতেমা: আপনি যদি গত ১৫ বছরের লড়াইগুলো দেখেন শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর লড়াইয়ের ধরনটা কী ছিল? এখন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধান সভা বা গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। অনেক ধরনের লড়াই এখানে তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে যেভাবে অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে সে তার আকাঙ্ক্ষাগুলো সামনে এনেছে। অভ্যুত্থান নির্বাচনের জন্যই হয়েছে, কেউ কেউ এ কথা বলার কারণে দেশের মানুষের ভেতরে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। ভারতের মতো একটি দেশ যেভাবে বাংলাদেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে, তাদের সঙ্গে ফাইট করতে হলে আমাদের ইন্টারনাল ঐক্য থাকাটা জরুরি। সংস্কারের এবং বিচার প্রক্রিয়ার একটা সুনির্দিষ্ট অগ্রগতির মাধ্যমে নির্বাচনের প্রসেসের মধ্যে বাংলাদেশকে ঢুকতে হবে। তা ছাড়া এখানে দ্বন্দ্ব তৈরি হবে বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে।
সমকাল: ছাত্র নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টিতে’ কেন গেলেন না?
উমামা ফাতেমা: আমি মনে করি এখনও জুলাই অভ্যুত্থানের অনেক কাজ বাকি আছে। নতুন দলে যারা গিয়েছেন তাদের জন্য সেখানে যাওয়াটাও জরুরি ছিল। বাংলাদেশে রাজনীতিতে বড় ধরনের ‘ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট’ হয়েছে, সেটা পূরণ করার দরকার আছে বলেই তারা পলিটিক্যাল পার্টি তৈরি করেছেন। আন্দোলনে আহত-নিহতদের পরিবারগুলো যে এখনও একটা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমাদের তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। আমাদের যত রাজনৈতিক দল আছে, যত ছাত্র সংগঠন আছে সবার মধ্যে জুলাইয়ের স্পৃহাকে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করতে হবে, তাই মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে থাকাটা আমার জন্য জরুরি।
সমকাল: সেটিকে কতটা সহজ মনে করেন?
উমামা ফাতেমা: প্রতিমুহূর্তে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। সবসময় আমি যেটা ভাবি, আমি যেভাবে চিন্তাটা করছি, আরেকজনের সঙ্গে আমার চিন্তা নাও মিলতে পারে। আমি কাজের প্রয়োজনে জেলায় জেলায় গিয়েছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই প্ল্যাটফর্মে থাকতে চায়। কাজ করতে চায়। আমার মনে হয় সবাইকে নিয়ে ভালো কিছু করতে পারব।
সমকাল: তরুণরা এখন বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা?
উমামা ফাতেমা: তরুণদের মধ্যে আগে থেকেই অনেক ভাগ ছিল। তবে আন্দোলনে সবাই একই উদ্দেশ্যে এসেছিল। সবাই শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিল। বিএনপিও ছিল, ইসলামী দলগুলোও ছিল। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলও ছিল। এই যে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন এখানে একত্র হয়েছিল, তাদের সবার লক্ষ্য তো এক না। সবাই ভেবেছিল যে, শেখ হাসিনা চাইলে তাঁর ভুলগুলো শুধরে নেবেন। তবে সত্যি বলতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল না। শেখ হাসিনা প্রতিটি জায়গাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছিল।
সমকাল: ১৫ বছরের আন্দোলন আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে কিনা?
উমামা ফাতেমা: বিএনপি ২০১৫ সালের পরে রাস্তায়ই নামতে পারত না। নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামতে না পেরে বিএনপি ওই সময়ে তেল-গ্যাসের দাম নিয়েও মাঠে নামে। তারপর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালে তারা ৩১ দফাতে পাবলিক ডিমান্ড একুমুলেট (জড়ো) করতে বাধ্য হয়। বিএনপি, গণসংহতি, জামায়াত বা যে দলই বলি না কেন সবাই বুঝেছিল জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য না দিলে কখনও শেখ হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব নয়। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছিল ঢাকাতে। এরপর কোথায় বিএনপি, জনগণ কি তাদের কথায় নেমেছে? যেদিন আবু সাঈদ বুক পেতে রাস্তায় মারা গেল, এর পর থেকেই জনগণ রাস্তায় নেমেছে।
সমকাল: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কতটুকু?
উমামা ফাতেমা: আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা চালিয়েছে, দেশের সিভিলিয়ানদের ওপর তারা যে মরণঘাতী অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে, মানুষ মেরে ফেলেছে, শিশুদের হত্যা করেছে, ওই রাজনৈতিক দল কোনোভাবেই রাজনীতিতে ফেরার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো যথেষ্ট পরিমাণে গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাধা পাচ্ছি। তবে নিষিদ্ধের কার্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণের সম্মতি রয়েছে।
সমকাল: দেশে হঠাৎ নারী নিপীড়ন বেড়ে গেল কেন?
উমামা ফাতেমা: নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নারীরা বর্তমানে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে ভয় পান, অন্ধকারে যাওয়া-আসা করতে ভয় পান। অনেক জায়গায় ছেলেরা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত ১১-১২টার পরে বের হয়, সেই প্রবণতাটা এখন কমেছে। রাত ১০টার পরে কোনো পরিবারও বাইরে যেতে ভয় পায়। জনগণ সরকারের কাছে চায় আশ্বাস। জনগণ পুলিশকে জানালে তারা বলছে, আমাদের লোক নেই, অন্য কাউকে বলেন, সেনাবাহিনীকে বলেন। সবার কাছে তো আর সেনাবাহিনীর যোগাযোগ থাকে না।
সমকাল: জুলাই-আগস্টেও তো নারীরা নির্ভয়ে রাস্তায় নেমেছিল!
উমামা ফাতেমা: নারীকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের অধিকারের কথা বলতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় নারীরা কথা বলেছে। তারা লেখালেখি করেছে, রাস্তায় নেমেছে। নির্দ্বিধায় তারা কথা বলেছে। যে কোনো পোশাকেই তারা নেমে গেছে। তো আজকে এসে কেন তাহলে এই ভয়টা পেতে হবে?
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
উমামা ফাতেমা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।