প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ শিক্ষার্থী পাবে দুপুরের খাবার
Published: 23rd, March 2025 GMT
বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার পাবে দেশের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এপ্রিলেই এ কর্মসূচি চালু হচ্ছে। খাবারের তালিকায় থাকবে উচ্চ পুষ্টিমানের বিস্কুট, বান, পাস্তুরিত দুধ, স্থানীয় মৌসুমি ফল ও ডিম। খাবারের পেছনে শিক্ষার্থীপ্রতি খরচ হবে ১৩০ টাকা। কার্যক্রমের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি কাজ করবে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীকে উৎসাহ, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো, অপুষ্টির ঘাটতি কমানো এবং সফলভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হতে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কোনো বিদেশি ঋণ কিংবা অনুদান ছাড়াই নিজস্ব জোগান থেকে খরচ মেটাবে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ রোববার অনুষ্ঠেয় একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্পটিসহ মোট ১৫টি প্রকল্প উঠছে আজকের একনেক সভায়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো.
৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচিটি চলবে। এ উপজেলার মধ্যে ৯১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩৫ উপজেলা অতি উচ্চ এবং উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ। বাকি ১৪টি, অর্থাৎ ৯ শতাংশ উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা। গত বছর প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ প্রতিবেদনের পভার্টি ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে।
ডেভেলপমেন্ট রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট নামে তৃতীয় পক্ষীয় একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। বড় ব্যয় হবে আগামী অর্থবছরে যা ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। ২০২৬-২৭ অর্থবছর ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা । ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ১৯০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ডিপিপিতে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের সংশ্লিষ্ট আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের শিক্ষা অনুবিভাগ প্রকল্পটির ডিপিপি পর্যালোচনা করেছে। এ-বিষয়ক প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ১১৮ কোটি টাকা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে পুনর্গঠিত ডিপিপির ওপর ৭ জানুয়ারি পিইসির চূড়ান্ত বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বাড়ানো, পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখাসহ সার্বিকভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে।
স্কুল মিল কর্মসূচির গুরুত্ব ও ফলাফল বিবেচনায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০০১ সালে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু হয়। ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। ওই বছর থেকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং নামে আলাদা একটি কর্মসূচি চালু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই ২০২১ সালে প্রায় একই রকম আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাব গণমাধ্যমে সমালোচনার মুখে একনেক থেকে ফেরত দেওয়া হয়। কক্সবাজার ও বান্দরবানে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ছাড়া প্রায় তিন বছর ধরে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেশে চালু নেই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব প রকল প একন ক উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
১৯ দিনে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে
ঈদের আগে বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে শুরু করেছেন প্রবাসীরা। ফলে চলতি রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ মাসের প্রথম ১৯ দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে দেশে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটিও কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবাসী আয় বেশি এসেছে। যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় আসে ১৬৬ কোটি ডলার। পরের চার দিনে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার।
২০২৪ সালের জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৭৪ কোটি ডলার, যা এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।
সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। তার মানে দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। আর পরের চার দিনে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার করে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
দেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।
প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।