সৌদি আরবে সড়কের পাশে পড়ে ছিল বাংলাদেশি ইমামের গুলিবিদ্ধ লাশ
Published: 23rd, March 2025 GMT
পরিবারের ভাগ্য বদলাতে বছর পাঁচেক আগে সৌদি আরবে যান আল আমিন (৩৬)। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর জিজানের একটি কারখানার মসজিদে ইমামতি করতেন। পাশাপাশি গাড়ি ভাড়ায় নিয়ে মানুষের বাড়িতে খাবার সরবরাহ শুরু করেন। সেখানেই শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে প্রাণ গেছে আল আমিনের।
শনিবার বিকেলে সমকালকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর ফুফাতো ভাই ঝাউকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন সরকার। আল আমিন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীবেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামের লাক মিয়ার ছেলে। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে উলুকান্দি গ্রামে চলছে শোকের মাতম। শান্ত ও ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত আল আমিনকে গুলি করে হত্যার খবরে বিস্মিত প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
শনিবার আল আমিনের বাড়িতে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় বসে ছেলের শোকে আহাজারি করছেন মা ফুল মেহের। স্ত্রী পাপিয়া আখনের কণ্ঠে কোনো কথা নেই। লোকজনের ভিড় দেখে কিছুই বুঝতে পারছে না এ দম্পতির তিন বছরের মেয়ে সিফা আক্তার।
মা ফুল মেহের ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথার স্মৃতিচারণ করে বলেন, শুক্রবার তারাবি নামাজ শেষে আল আমিন তাঁকে কল করে বলেছিল, ‘মা, আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। কাজ শেষে আপনাকে আবার ফোন দেব।’
‘এই কথাই যে আমার বাপজানের সঙ্গে শেষ কথা হবে, তা কে-ই বা জানত।’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফুল মেহের।
প্রতিবেশী সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, এক বোন ও তিন ভাইয়ের সংসারে আল আমিন সবার বড়। হাফেজি পড়াশোনা করেছিলেন। কোনো কিছুতেই সাফল্য না পেয়ে ভাগ্য ফেরাতে ধারদেনা করে ৫ বছর আগে সরকারিভাবে তিনি সৌদি আরবে যান। মাঝেমধ্যে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসতেন।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বরে বাড়িতে এসেছিলেন আল আমিন। তখন স্থায়ীভাবে দেশেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছিলেন। কিন্তু এলাকায় কোনো কাজের ব্যবস্থা হয়নি। তাই সংসার পরিচালনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে আল আমিন ছুটি শেষ হওয়ায় আগেই গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফের সৌদি আরবে যান।
এই যুবকের নিহতের ফুফাতো ভাই শিক্ষক কামাল হোসেন সরকার বলেন, সৌদি আরবের ইয়েমেন সীমান্তবর্তী শহর জিজানের একটি কোম্পানির মসজিদে ইমামতি করতেন আল আমিন। সংসারের দায়দেনা মেটাতে ইমামতির পাশাপাশি মানুষে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন। শুক্রবার মসজিদে তারাবির নামাজ শেষে গাড়ি নিয়ে একই কাজ করতে বের হন আল আমিন। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর মরদেহ রাস্তায় পাশে পড়ে থাকতে দেখে লোকজন পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সৌদি আরবে অবস্থানরত আল আমিনের ভগ্নিপতি নাজমুল ইসলাম সেখানে গিয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন। তিনিই পরে পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানান।
কামাল হোসেনের ভাষ্য, আল আমিনের চোখ-বুকসহ শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে তাদের ধারণা। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে– সে বিষয়ে কোনো কিছুই আঁচ করতে পারছেন না।
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) আড়াইহাজার জোনের ফিল্ড অফিসার আমিনুল হক সমকালকে বলেন, আল আমিনের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কর্মীদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এসব নিয়ে আল আমিনের মরদেহ দেশে আনা, বিদেশে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিষয়ে কাজ শুরু করবেন। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এ বিষয়ে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দিতে।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেনের কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য ছিল না। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে। ইউএনও সাজ্জাত হোসেনের কাছেও আল আমিনের মৃত্যুর বিষয়ে কেউ জানায়নি। তিনি বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেননি। তারা কোনো সহযোগিতা চাইলে প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স দ আরব পর ব র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রমজানে অধীনস্থদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন
রমজান মাস সহমর্মিতার মাস। রাসুল (সা.) এ-মাসে বন্দীদের মুক্তি দিতেন এবং সাহায্যপ্রার্থীকে পর্যাপ্ত দান করতেন। (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩,৩৫৭)
রোজার দীর্ঘ উপবাসের কারণে শারীরিক অবসাদ, ক্লান্তিবোধ ও কিছুটা কষ্ট প্রায় সবার হয়ে থাকে। এই মাসে নিজের অধীনস্থ ও কর্মচারীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো মুমিন বান্দার দায়িত্ব ও কর্তব্য। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের পার্থিব কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করে দেবেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭,০২৮)
রমজানে অফিসের কর্মচারী, গৃহকর্মীরাও রোজা রেখে থাকেন। তারা আমাদের সঙ্গেই থাকেন। সুতরাং তাদের প্রতিও কিছু দায়িত্ব চলে আসে। যেমন তাদের কাজে সহযোগিতা করা। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে (রমজান মাসে) নিজের অধীনস্থদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়, আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩,৩৩৬; সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস: ১,৮৮৭)
আরও পড়ুনফিতরা কীভাবে হিসাব করব১১ মার্চ ২০২৫কীভাবে কাজ হালকা করবেন
কাজ কমিয়ে দেওয়া: যে কাজটা সে একা করবে তাতে নিজেও হাত লাগানো। না হলেও চলে এমন কাজের জন্য তাদের চাপ না দেওয়া। রোজার সময় তার নির্ধারিত দায়িত্ব থেকে কিছু কম সেবা গ্রহণ করেও তার অনুগ্রহ করা যেতে পারে।
পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দেওয়া: যদি কাজের চাপ এত বেশি থাকে যে, আপনি নিজেও প্রচুর পরিশ্রম করছেন। তাহলে অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজানে কর্মীদের পারিশ্রমিক কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। এটাও এক ধরনের সহানুভূতি।
কাজের সময় কমানো: ‘কাজের সময়’ কমিয়ে দিয়ে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। এভাবেও হতে পারে, সময় কমিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ করানোর ব্যবস্থা করা। এতে কর্মচারীদেরও একটু সহযোগিতা হবে আবার কর্মকর্তারও কাজের ঘাটতি হবে না।
কিন্তু কর্মচারীর জন্য রোজার কারণ দেখিয়ে কাজে অলসতা ও অবহেলা করা কোনোক্রমেই উচিত হবে না। আবার কাজের বাড়তি চাপের কারণে কর্মচারী যদি রোজা রাখা ছেড়ে দেয়, এটাও কর্তাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। তবে হ্যাঁ, কর্মচারী যদি কষ্ট করে নিজের দায়িত্ব আদায় করে তবে সে এর জন্য অধিক সওয়াবের অধিকারী হবেন।
আরও পড়ুনঈদ যেভাবে এল১১ এপ্রিল ২০২৪