ব্যাংকে আমানত সুরক্ষায় নতুন আইন হচ্ছে
Published: 22nd, March 2025 GMT
ব্যাংক আমানত বীমা আইন রহিত করে আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ নামে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ অধ্যাদেশের খসড়া গত বৃহস্পতিবার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনের মতামত চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। জনগণের আস্থা বাড়িয়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নেওয়া আমানতের সুরক্ষা প্রদানই আইনের উদ্দেশ্য বলে খসড়ায় বলা হয়।
আমানত সুরক্ষা-সংক্রান্ত যথাযথ আইন কাঠামো নির্ধারণের জন্য ব্যাংক আমানত বীমা আইন আরও যুগোপযোগী করে এ নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক আগেই ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ করতে সরকারকে তাগিদ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের খসড়া এই আইনটিকে অনুমোদন দিয়েছিল তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা, আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তা সংসদেও পাঠানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত এটি আর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেনি।
অন্তর্বর্তী সরকার আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে খসড়া আইনটি সংশোধন করে এটিকে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ডিপোজিট ইন্স্যুয়ার্স (আইএডিআই)-এর মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার উদ্যোগ নেয়। সেটিই এখন অধ্যাদেশ আকারে জারি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইনটি কার্যকর করা হলে ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)-এর আমানতকেও বীমা সুরক্ষা দেবে এ আইন। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, কোনো ব্যাংক বিলুপ্ত হলে প্রত্যেক আমানতকারীকে আমানতের অর্থ ফেরত দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তবে আইনের বিধান অনুযায়ী তা ২ লাখ টাকার বেশি হবে না।
খসড়ায় আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের আমানত সুরক্ষা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। আর আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন হবে। পর্ষদই হবে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ। সুরক্ষিত আমানত পরিশোধ বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়, প্রত্যেক আমানতকারীর জন্য সুরক্ষিত আমানতের সর্বোচ্চ সীমা হবে ২ লাখ টাকা। তবে পর্ষদ প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার সুরিক্ষিত আমানতের সীমা পুনর্বিবেচনা করতে পারবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ব্যাংক খাতের ওপর আস্থা বাড়ানো তাদের অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য ব্যাংকের আমানত বীমার আওতা হিসাবপ্রতি ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। ফলে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী পুরো টাকা ফেরত পাবেন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়, ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত সুরক্ষায় এ অধ্যাদেশের অধীন আমানত সুরক্ষা তহবিল গঠিত হবে। এ তহবিল গঠনে ব্যাংক থেকে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম, বার্ষিক ঝুঁকি ভিত্তিক ও বিশেষ প্রিমিয়াম নেওয়া যাবে। লাইসেন্স পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম হিসেবে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এককালীন এ তহবিলে জমা দেবে। তবে ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০-এর আওতাধীন বীমাকৃত ব্যাংক আমানত সুরক্ষা ব্যবস্থার সদস্য বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম প্রযোজ্য হবে না।
আমানতের সুরক্ষা তহবিলের অর্থ পর্ষদের অনুমোদনক্রমে বিনিয়োগে আলাদা নীতিমালা হবে। এ ক্ষেত্রে অধিক মুনাফা অর্জন অপেক্ষা নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র, বৈচিত্র্যময়তা ও তহবিলের তারল্য সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিতে হবে। বিনিয়োগ কার্যক্রমের যথাযথ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে প্রয়োজনে কোনো পেশাগত পরিসম্পদ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করা যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ মন ত র খসড় য় আইন র তহব ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হুমকি না থাকলেও বর্ষবরণে সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। এ উৎসবকে ঘিরে কোনো ধরনের হুমকি না থাকলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী রাইজিংবিডিকে এ তথ্য জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূলসহ পুরো ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রধান সড়ক থেকে অলি গলিতেও গোয়েন্দা নজরদারি করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
এদিকে, প্রতিবারের মতো এবারও নববর্ষে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে সারা দেশে র্যাবের সব সদস্য নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় কাজ করছেন।
সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “র্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, র্যাব সারা দেশে ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জন সহ সর্বমোট ২৪৪৯ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোন উগ্রবাদী গোষ্ঠী, অন্যান্য নিষিদ্ধ সংগঠন এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী কুচক্রী মহল যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, “বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের নাশকতার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। গোয়েন্দা নজরদারি ও সাইবার জগতে মনিটরিং বৃদ্ধির মাধ্যমে নাশকতাকারীদের যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে প্রস্তুত রয়েছে র্যাব।”
ভার্চুয়াল জগতে নববর্ষকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের গুজব, উস্কানিমূলক তথ্য, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র্যাব সাইবার মনিটরিং টিম নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা/এমআর/ইভা