কেউ বলেনি– ‘নারী অবলা, তাদের সঙ্গে নেওয়া যাবে না’। বরং সঙ্গী করে নিয়েছে বিপন্ন মানুষদের সহায়তা আর সম্মুখ যোদ্ধাদের সাহস জোগাতে। নারী শক্তিকে খর্ব করা হয়নি বলেই একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছি। লড়াই করতে পেরেছি শব্দসৈনিক হয়ে; যার মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনতে পেরেছি স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র। নারী-পুরুষের ভেদাভেদ, ধর্ম-বর্ণ-সমাজ-গোত্র সবকিছু ভুলে, আমরা বাঙালি– এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হতে পেরেছি বলেই হাতে আমাদের উঠেছে মুক্তির সনদ। মূলত একাত্তরই রচনা করেছে আমার শিল্পী ও ব্যক্তি জীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়। অগ্নিজ্বলা সেই দিনগুলোর স্মৃতি ভুলে থাকা কঠিন; এক কথায় অসম্ভব। বারবার তাই ডুব দিই স্মৃতি রোমন্থনে। দৃশ্যগুলো বারবার চলচ্চিত্রের মতোই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। দেখি, ২৫ মার্চের রাতের পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়াল থাবায় কীভাবে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল ঢাকার চারপাশ। ২৬ মার্চ কারফিউ দেওয়া হলো। কিছুক্ষণের জন্য কারফিউ শিথিল হতেই পরিস্থিতি জানার জন্য আমার ভাই বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। আম্মার নিষেধ অমান্য করেই বেরিয়ে গেলেন। ফিরে এসে জানালেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পলাশী, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, শিক্ষকদের কোয়ার্টারে পড়ে আছে শুধু লাশ আর লাশ। সব জায়গা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। দেশের অবস্থা ভয়াবহ। শুনে সবাই স্থম্ভিত। আমি তখনই ছুটে গেলাম ছাদে। দেখলাম, সবকিছু জ্বলছে। ধোঁয়ায় কুণ্ডলীতে ঢেকে গেছে শহরটা। ওই দিনেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি, আর থেমে থাকা নয়, এবার কিছু করতে হবে।
আমি যুক্ত ছিলাম বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সঙ্গে। সে সময়ের শক্তিশালী সংগঠন ছিল এটি। মুস্তফা মনোয়ার, কবি জাহিদুল হক, সন্জীদা খাতুন, সৈয়দ হাসান ইমাম, আলী যাকের, আসাদুজ্জামান নূরসহ অনেক বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিল্পী এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সে কারণেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ডাক এসেছিল। সংগীত পরিচালক সমর দাস আমাদের ডেকে নিয়ে প্রথমে আটটা গান করিয়েছিলেন। পরে আবারও ডাক পড়েছে। সেবার ১৪টি গান করেছিলাম আমরা। সেগুলো ঠিক গান নয়, ছিল জ্বলন্ত বারুদ। সে কারণেই ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’, ‘ব্যারিকেড-বেয়নেট-বেড়াজাল’, ‘ওই পোহাইল তিমির রাত্রি’, ‘শিকল পরার ছল’, ‘এই না বাংলাদেশের গান’, ‘মানুষ হ মানুষ হ’, ‘পাক পশুদের মারতে হবে’, ‘শোনেন শোনেন ভাইসব’, ‘জনতার সংগ্রাম’, ‘এসো মুক্তিদিনের সাথী’ থেকে শুরু করে এই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিটি গানই কালজয়ী হয়ে উঠেছে।
মুক্তিসংগ্রামী মানুষের কথা ভেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিরলস কাজ করে গেছি। সদ্য তারুণ্যে পা রাখা আমার জন্য এটি ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে, প্রথম দিন কলকাতার বালীগঞ্জের টেকনিশিয়ান রেকর্ডিং স্টুডিওতে একসঙ্গে আমাদের আটটি গান রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন সরাসরি গান রেকর্ড করা হতো। ভুল হলে নতুন করে আবার গাইতে হতো। রেকর্ডিং করার আগে আমরা ২৫ থেকে ৩০ জন দল বেঁধে রিহার্সাল করতাম। রিহার্সালের জন্য দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ড্রয়িং রুম ছেড়ে দিয়েছিলেন। ঘর বড় হলেও শিল্পী, সুরকার, বাদক– সবার ভিড় সামলানো কঠিন ছিল। তারপরও একটা ঠাঁই আছে, এটাই ছিল বড় সান্ত্বনা। তাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে আমরা গানের রিহার্সাল করতাম। এরপর শুরু হতো লাইভ রেকর্ডিং। বলা যায়, অগ্নিঝরা দিনের প্রতিটি গানের গল্পই প্রায় একই রকম। ব্যতিক্রম শুধু গীতিকার, সুরকারের নাম। তখনকার একেকটি গান ছিল মুক্তিকামী বাঙালির বড় এক হাতিয়ার। সম্মুখযোদ্ধা থেকে শুরু করে প্রত্যেক বাঙালিকে সেই গানগুলো একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র ছিনিয়ে আনার শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
তিন দিনে নাট্যদল ‘তাড়ুয়া’র চার প্রদর্শনী
দেশের বেশ আলোচিত নাট্যদল ‘তাড়ুয়া’। ২০১৮ সালে ‘লেট মি আউট’ নাটক দিয়ে তারা যাত্রা করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত মঞ্চে তিনটি নাটক নিয়ে এসেছে দলটি। এবার আরও একটি নতুন নাটক নিয়ে হাজির হচ্ছে এই নাট্যদল।
নতুন নাটকের নাম ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’। এরিখ মারিয়া রেমার্কের উপন্যাস অবলম্বনে এটির নাট্যরূপ দিয়েছেন রুনা কাঞ্চন। নির্দেশনায় আছেন বাকার বকুল।
আসছে ২৩ এপ্রিল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির মূল হলে অনুষ্ঠিত হবে নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী। একই স্থানে টানা ৩ দিনে ৪টি প্রদর্শনী হবে নাটকটির।
‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন কুমার উদয়, তামিম আহমেদ, রিপন ঘোষ, জুবায়ের মাহমুদ, জীবন, অর্ণব, তারেক, সানি, সাক্ষ্য প্রমুখ।
২৩ এপ্রিল শিল্পকলার মূল হলে সন্ধ্যা ৭টায় উদ্বোধনী মঞ্চায়নের পর একই স্থানে ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা এবং ২৫ এপ্রিল বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হবে নাটকটি।